প্রতিবন্ধী শিশুদের আঁকা ছবি প্রধানমন্ত্রীর ঈদকার্ডে

1389

এখন রিপোর্ট।।

ঈদ, পহেলা বৈশাখসহ উৎসব উদযাপনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা কার্ড হাতে নিলে যেসব ছবি দেখা যায়, সেগুলো প্রতিবন্ধী শিশুকিশোরদেরই আঁকা। এসব ছবিতে প্রকাশিত হয়েছে প্রতিবন্ধীদের সামাজিক দৃঢ়তার প্রকাশ। বাংলাদেশ একদিন বিশ্বাস করবে, এই শিশুরা কোনোভাবেই দেশের জন্য বোঝা নয়, তারা নিজের দেশকে জানে, দেশের প্রতিনিধিত্ব করে।pm-eid-card

২০১০ সাল থেকেই উৎসব-পার্বণে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা কার্ডে প্রতিবন্ধী শিশুকিশোরদের আঁকা ছবি ব্যবহার করা হয়। আর প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে এই ছবি চাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে চূড়ান্ত বাছাইটি করেন। এ বছরও রাজধানী ও জেলা পর্যায়ে প্রতিবন্ধী শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে আসা ছবিগুলো থেকে সাতটি ছবি চূড়ান্ত বাছাই করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হবে। এ শিশুরা নিজেরা জানেও না কী অসাধ্য কাজ সাধন করেছে তারা। তাদের বাবা-মা সন্তানের এই অর্জনে কাঁদছেন। অভিভাবকরা বলছেন, ‘এই শিশুদের অবহেলা না করার বার্তা এলো এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে।’

প্রধানমন্ত্রী উপপ্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যত ছবি নির্বাচিত হয়েছে, সেগুলো দিয়ে একটি বই প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’

যাদের আঁকা ছবি প্রধানমন্ত্রীর ঈদ কার্ডের জন্য নির্বাচিত হয়েছে, তাদের একজন প্রিয়াংকা। তার আঁকা গ্রাম বাংলার ছবিতে এক অসাধারণ রঙের খেলা দেখা যায়। নিখুঁত হাতে এঁকেছে গ্রামের বাড়ি, গাছ, নদী। প্রিয়াংকার বাবা গৌরাঙ্গ চন্দ্র দাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘৮ বছর বয়স থেকেই প্রিয়াংকা ছবি আঁকা শুরু করে। জামালপুরের মেয়ে প্রিয়াংকা সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। প্রিয়াংকার নাম প্রধানমন্ত্রীর ‍শুভেচ্ছা কার্ডে প্রকাশিত হওয়া কত সম্মানের, তা আমার মেয়ে বুঝবে না।’

আদিতা মোস্তফার ছবি দিয়ে বানানো কার্ডটির কথা জানতেই মা শাহনাজ ইসলাম উত্তেজনায় চিৎকার দিয়ে বলেন, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমার মেয়ে।’ কেমন লাগছে—এমনপ্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কী যে আনন্দ লাগছে। আমাদের মেয়ে। ওর ছবি প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা কার্ডে জায়গা পেয়েছে সে তো অনেক বড় পাওয়া।’ ৬ বছরের আদিতা বাবা-মাকে যে সম্মান এনে দিয়েছে, এরপর তাকে কম সক্ষম বলার কোনও সুযোগ নেই। আদিতা ছবিতে তার বয়সী শিশুদেরই মাঠে পশুদের সঙ্গে নিয়ে খেলার, ঘুরে বেড়ানোর ছবি এঁকেছে। তার কল্পনায় আকাশে তখন তারার মেলা।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা কার্ডে আরও ব্যবহার করা হয়েছে অটিস্টিক শিশুশিল্পী সাকিব রহমানের আঁকা ছবি। ধানমণ্ডির সাকিব স্কুল ফর গিফটেড চিলড্রেন এর শিক্ষার্থী। সাকিব ছবিতে একটি মসজিদের ছবি এঁকেছে। তাতে কয়েক রঙে ইংরেজি অক্ষরে লেখা হয়েছে ঈদ মোবারক।

এই শিশুকিশোরদের আঁকা ছবি সংবলিত কার্ড প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে দলীয় নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের দফতরে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।pm-eid-card-3

প্রধানমন্ত্রী উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন বলেন, ‘প্রতিটা উৎসবের আগে প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে প্রতিবন্ধী শিশুদের আঁকা ছবি থেকে বাছাইকৃত ছবি প্রধানমন্ত্রী নিজে পছন্দ করে নেন। এর আগে জেলা পযায়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়। সেখানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এটি পরিচালনা করা হয়। আর ঢাকায় উৎসবের আগে দিয়ে সমাজসেবা অধিদফতর এই আয়োজনটি করেন। সেখান থেকে প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যাদের ছবি বাছাই হয় তার শর্টতালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেওয়া হলে তিনি নিজে দেখে বাছাই করেন।’

এর আগে প্রতিবন্ধীদের আঁকা ছবি দিয়েই শুভেচ্ছা কার্ড পাঠাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১০ সাল থেকেই এই আয়োজন চলে আসছে। এখন পর্যন্ত সর্বমোট ৮২জন প্রতিবন্ধী শিশু কিশোরের ছবি দিয়ে কার্ড বানানো হয়েছে।