কারা হচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন ডেপুটি গভর্নর

918

এখন রিপোর্ট।।

চলতি মাসেই চূড়ান্ত হচ্ছে ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ দুই ডেপুটি গভর্নরের (ডিজি) পদ। এরই মধ্যে আগ্রহী প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা হয়ে গেছে। অপেক্ষা শুধু সিদ্ধান্তের।

সূত্র বলছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ে এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে মৌখিক আলোচনা চলছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত কিছুটা ইঙ্গিত করেছেন কাদের নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। তবে যোগ্যতার সঙ্গে রাজনৈতিক বিবেচনা এবং রাজনৈতিক প্রভাব ও পরিচিতি বেশি গুরুত্ব পায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই গুরুত্বপূর্ণ পদে। এবারও সে রকমই হবে বলে সূত্রের দাবি।

সূত্র আরো বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) আহমেদ জামাল, ম. মাহফুজুর রহমান, এস এম মনিরুজ্জামান, মোহাম্মদ নওশাদ আলী চৌধুরী এই ৪ জন থেকে একজনকে চূড়ান্ত করা হতে পারে। এর মধ্যে একজনের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। তিনি ডিজি হতে বিশেষ একটি রাস্তায় তদবির করেছেন। তবে পেশাদার ও অ্যাকাডেমিক ব্যাংকার হিসেবে আরেক সাবেক ইডি শুভংকর সাহার ব্যাপক পরিচিতি ও সুনাম রয়েছে।

সাবেক ইডি নির্মল চন্দ্র ভক্ত, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. হুমায়ূন কবীর, বিষ্ণুপদ সাহা, কাজী নাসির আহমেদ, মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জোদ্দার, মো. আব্দুর রহিম, ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ডিএমডি মো. আফজালুল বাশার, সোনালী ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি মো. খোরশেদ হোসাইন ও সাবেরা আখতারী জামাল এবং সিটি ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মধ্যে থেকে একজন নেয়া হতে পারে।

সূত্র বলছে, সার্চ কমিটির সুপারিশ যাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিবেচনার জন্য নাম প্রস্তাব করা হবে। প্রধানমন্ত্রী যাদের নির্বাচিত করবেন তারাই চূড়ান্ত হবেন গুরুত্বপূর্ণ এই পদের জন্য। তাই আগ্রহীরা চেষ্টা করছেন অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সুনজর কাড়তে।

সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসেই বাংলাদেশ ব্যাংকে নতুন দুই জন ডেপুটি গভর্নর যোগ দিতে পারেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত তালিকা করে সরকারের কাছে সুপারিশ করবে সার্চ কমিটি। সেই তালিকা থেকে ২ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। এরই অংশ হিসেবে সোমবার ডেপুটি গভর্নর নিয়োগের সাক্ষাৎকার নেয় সার্চ কমিটি।

এ প্রসঙ্গে সার্চ কমিটির সদস্য ড. জায়েদ বখত বলেন, “ডেপুটি গভর্নর পদের জন্য ১৭ জনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে থেকে ১৬ জন সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। যারা সাক্ষাৎকারে অংশ নিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে চূড়ান্ত তালিকা করে ডেপুটি গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করবে কমিটি।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রকাশের পর গত ১৫ মার্চ সরে যান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। সেই একই দিন সরিয়ে দেয়া হয় দুই ডিজি আবুল কাশেম ও নাজনীন সুলতানাকে। সেই থেকে ডেপুটি গভর্নরের দুটি পদ খালি রয়েছে। এরই মধ্যে গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পান সাবেক আমলা ফজেলে কবির। নিয়োগ পাওয়ার আগে তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।

এর আগে সার্চ কমিটির সুপারিশ করা ৩ জনের নামে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ইতিবাচক না আসায় আটকে যায়।

গত ২৪ মার্চ ড. খলীকুজ্জমানকে প্রধান করে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ২৭ মার্চ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রার্থীদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। পরে অর্ধশতাধিক প্রার্থী থেকে ২১ জনকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকে সার্চ কমিটি। দুই ধাপে ১৯ জন মৌখিক পরীক্ষা দেন। কিন্তু আটকে যায় সেই সুপারিশ।

দ্বিতীয় দফায় গত ২১ জুলাই কিছু শর্ত শিথিল করে আবারও বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। মোট ৩১ জন আবেদন করলে সেখান থেকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ১৭ জনকে ডাকা হয়। এই তালিকায় রয়েছেন বাতিল হওয়া প্যানেলের এসএম মনিরুজ্জামান ও মো. আবদুর রহিম।

সরকার গঠিত সার্চ কমিটির প্রধান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটির সদস্য হলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির (পদাধিকার বলে), অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক কেএম মুর্শিদ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. রিজওয়ানুল হুদা।

সূত্র বলছে, এই দৌড়ে এগিয়ে যেতে তারা পেশাজীবনের রাজনৈতিক পরিচিতি ও সম্পর্ককে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সাবেক গভর্নর বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর পদটি রাজনৈতিক পদ হিসেবে পরিচিত। তাই এখানে নিয়োগ যারা পান, তাদের পেশাগত দক্ষতার সঙ্গে রাজনৈতিক পরিচিতি ও লবির দিকটি সব সময় বিবেচনায় থাকে।”

জানা গেছে, যারা আবেদন করেছেন বিশেষ এই পদটির জন্য, তাদের মধ্যে যোগ্যতায় খুব বেশি ব্যবধান নেই। তাই নিয়োগ পেতে রাজনৈতিক বিবেচনায় এগিয়ে যেতে হবে।”