তরুণদের জাগতে হবে

রাখাল রাহা

1001

ধরে নিলাম, আমাদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় কোনো ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা নাই, বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কোনো সরকার রাজনৈতিক সুবিধার্থে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানায় নাই, ২ লক্ষ বা সোয়া ২ লক্ষই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আমাদের।

তাহলে তাঁদের পরিবার-সংখ্যা কত? ধরে নিলাম, ২ লক্ষ থেকে বেড়ে স্বাধীনতার পর বিগত ৪৭ বছরে ১০ লক্ষ বা ১৫ লক্ষ হয়েছে।

এখন বিসিএস-সহ সরকারী চাকরী-বাকরীতে এই ১০-১৫ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা-পরিবারের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩০% কোটা।

আপনি কি জানেন বাংলাদেশের মোট পরিবার-সংখ্যা কত? ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী প্রায় সোয়া ৩ কোটি।

তাহলে ১০-১৫ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা-পরিবারের বাইরের বাকী ৩ কোটির ঊর্ধ্বের বিশাল অমুক্তিযোদ্ধা-পরিবারের জন্য সরকারী চাকরী-বাকরীর সুযোগ ৭০%!

অনুপাতটা একটু মিলিয়ে দেখুন। এটা কি “সহনীয়” মাত্রার অবিচার? মুক্তিযোদ্ধারা এমন অবিচারের জন্য দেশটা স্বাধীন করেছিলেন? এই কোটা মুক্তিযোদ্ধার নাতীপুতি হয়ে অনাগত প্রজন্ম পর্যন্ত চলতে থাকবে? প্রার্থী না পাওয়া গেলেও কোটার পদ ফাঁকাই রাখতে হবে? যোগ্য মেধাবীদের দ্বারা পূরণ করা যাবে না?

আমাদের সব সর্বনাশ করা হয় মহৎ পথ দেখিয়ে! যেমন নারীর কর্মসংস্থানের কথা বলে তাদের জন্য কোটা করে প্রাথমিক শিক্ষার মানের ব্যাপক অধোপতন ঘটানো হয়েছে, মাতৃত্ব ও শিশুর শৈশব চরমভাবে বিনষ্ট ও ঝুঁকিপূর্ণ করা হয়েছে; মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের জন্য তাঁদের ও তাঁদের সন্তানদের সুবিধা দেওয়ার কথা বলে সরকারী চাকরী-বাকরীর প্রায় ৩ ভাগের ১ ভাগই দখল করে নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে জনপ্রশাসন ও সরকারী দপ্তরগুলো অথর্ব-গর্দভে ভরে ফেলা হয়েছে।

বোঝা দরকার, এটা শুধু সুবিধার প্রশ্ন নয়, এর মাধ্যমে প্রতিবেশীসহ সকল দেশের তুলনায় শিক্ষা ও পেশাগত দক্ষতায় আমরা ভয়াবহ রকম পিছিয়ে পড়ছি। জাতি হিসাবে ক্রমশ আমরা পঙ্গু ও পরনির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছি।

একটা দেশে মোট ৫৫% সরকারী পদ কোটা থেকে পূরণ করা হয় এমন দেশ আর কোথায় আছে? অবিলম্বে এই কোটা-ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন। জাতির অগ্রগতির স্বার্থে সব মিলিয়ে ১৫-২০ শতাংশের অধিক কোটা থাকা উচিত নয়।

কিন্তু উচিত নয় বললেই এটা থামবে কেন? কারণ এই অনুচিতের ফায়দা যারা নিচ্ছে তারা এটা ছাড়বে না, তাদের সাথে রয়েছে শাসকশ্রেণী।

কিন্তু তরুণেরা জাগলে এদেশের কোনো সরকার, কোনো শাসক তা আটকাতে পারেনি। তাদের জাগতে হবে। এই দেশটা তাদের, তাদেরই কেড়ে নিতে হবে, তাদের আকাঙ্ক্ষার রাষ্ট্র নির্মাণ করতে হবে, যে-আকাঙ্ক্ষা আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উচ্চারিত হয়েছিল ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার ভিত্তিক’ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার।

রাখাল রাহার ফেসবুক থেকে