ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ খ্যাত মামুনুর রশিদ মিলন। এলাকাজুড়ে সমাজ সেবক ও দানবীর হিসেবে রয়েছে তার বেশ সুনাম। ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা এ তরুণ বর্তমানে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে বিশেষ দায়িত্ব পেয়েছেন। টানা দুইবার তিনি দাগনভূঞা জায়লস্কর ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন। একাধিকবার ভূষিত হয়েছে শ্রেষ্ঠ ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে। আগামী ইউপি নির্বাচনেও বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ থেকে তিনি নৌকার মনোনীত প্রার্থী। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন ফেনীর রাজনীতি, জায়লস্করের উন্নয়ন, আগামী ইউপি নির্বাচন নিয়ে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন শাহাদাত হোসেন তৌহিদ।
তৌহিদ: জায়লস্কর ইউপি নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো মহান স্বাধীনতার প্রতীক নৌকার প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন, কেমন লাগছে?
মিলন: আমি দীর্ঘ দশ বছর জায়লস্কর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে আছি। আগামী ২৬ ডিসেম্বর জায়লস্কর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ফেনী জেলা শাখা থেকে আমাকে এককভাবে মনোনীত করেছে। ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই আমার নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। মাননীয় সভানেত্রী বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা আমাকে জায়লস্কর ইউনিয়নে নৌকার মাঝি হিসেবে মনোনীত করছেন। কৃতজ্ঞতা মহান আল্লাহর কাছে। কৃতজ্ঞতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। কৃতজ্ঞতা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী শ্রদ্ধেয় জননেতা ওবায়দুল কাদের এমপি ও ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মানিত সাধারণ সম্পাদক জননেতা জনাব নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপির প্রতি। কৃতজ্ঞতা জায়লস্কর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ সকল নেতাকর্মী ও আপময় জনসাধারণের প্রতি। যাদের অকুণ্ঠ ভালোবাসায় ও দোয়ায় মহান স্বাধীনতার প্রতীক, বঙ্গবন্ধুর প্রতীক, উন্নয়নের প্রতীত নৌকার মাঝি হতে পেরেছি।
তৌহিদ: গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় ইউনিয়ন পরিষদ সাধারণ মানুষের সবচেয়ে কাছের একটি প্রতিষ্ঠান। জায়লস্করে আপনি দশ বছর ইউপি চেয়ারম্যান, এলাকার উন্নয়ন নিয়ে জানতে চাই। আগামীতে নির্বাচিত হলে কি ধরণের উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে?
মিলন: গত দশ বছরে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ৯৫ শতাংশ প্রায় শেষ। শিক্ষা/স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বিদ্যুৎখাতে আমরা শতভাগ বিদ্যুতায়নে সক্ষম হয়েছি। জায়লস্কর বাল্যবিবাহ ও মাদকমুক্ত। আমরা সবসময় চেষ্টা করি এলাকার আইন শৃঙ্খলাসহ সবকিছু শন্তিতে রাখার জন্য। আগামীতে আমি চেষ্টা করবো এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে। অবশিষ্ট সামান্য কিছু কাজ রয়েছে সেগুলো সম্পন্ন করে এই ইউনিয়নে মানুষ যেন শান্তিতে থাকতে পারে। এই এলাকার মানুষ কোনোভাবে যেন কোনো অসুবিধা পড়তে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে আগামীতে আমরা সঠিক পথে পরিচালিত করবো। এর বাইরে আমরা শিক্ষাখাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার চিন্তা আছে। কারণ, জাতি যদি শিক্ষিত না হয় আমি যতই উন্নয়ন করি এটার কোনো মুল্য নেই। এই কারণে শিক্ষাখাতে উন্নয়নে আমরা সচেষ্ট থাকবো। মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছি আমি। আমাদের এই ইউনিয়ন মাদকমুক্ত ইনশাআল্লাহ। আমাদের এলাকার সবচেয়ে ভালো দিক হলো-বিচার নিয়ে আমাদের এখানো কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়না। দ্রুত আমরা যে কোনো সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি। এখানে কোনো বিচার-বাণিজ্য হয়না। আমরা দলমত নির্বিশেষে সবাই এক টেবিলে বসে আলোচনা করে যে কোনো সমস্যা সমাধানে প্রস্তুত থাকি।
করোনাকালিন আমরা এলাকার গণ্যমান্য দল মত নির্বিশেষ সবাইকে নিয়ে আলোচনা করে প্রত্যেকটা মানুষ যেন সবদিক থেকে সুরক্ষিত থাকে সেটা নিশ্চিত করেছি। যে কোনো দুর্যোগ মূহূর্তে আমরা সবাই একত্রিত হয়ে চেষ্টা করি মানুষের জানমাল রক্ষার জন্য। আগামীতে আমাদের আশা আছে কীভাবে আরো ভালো সেবা দেওয়া যায় সে লক্ষ্যে কাজ করা।
তৌহিদ: আপনি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠিনক সম্পাদক হিসেবে জেলার বিভিন্ন জায়গায় ওয়ার্কিং করছেন। বর্তমান ফেনী জেলা আওয়ামী লীগকে আপনি কীভাবে মুল্যায়ণ করবেন?
মিলন: সাংগঠনিক জেলার মধ্যে যদি আমরা বিবেচনা করি, আমি মনে করি আওয়ামী লীগের জন্য ফেনী জেলা হবে বাংলাদেশের মধ্যে এক নাম্বার সাংগঠনিক জেলা। এই জেলার মধ্যে সু-শৃঙ্খল একটা টিম আছে। সুশৃঙ্খল একটা নেতৃত্ব আছে। এই জেলার যিনি নেতৃত্ব দেন আমাদের ফেনীর ষোলো লক্ষ মানুষের নয়নমনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সুর্যসন্তান, সদর আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য, জননেত্রী শেষ হাসিনার বিশ্বস্ত আস্থাভাজন শ্রদ্ধেয় নিজাম উদ্দিন হাজারী। যার নেতৃত্বে ফেনীর আওয়ামী পরিবার সকল সহযোগি সংগঠনের সবাই আমরা একিভূত। আমরা সবাই ওনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছি। ওনার নেতৃত্বে আজকে একটি সু-শৃঙ্খল দলে পরিণত হয়েছে। সারাদেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে অনেক ঝামেলা হচ্ছে কিন্তু ফেনীতে কোনো ঝামেলা নেই। ফেনী জেলা আওয়ামী লীগ যাকে প্রার্থী দিচ্ছে কেন্দ্র থেকে মাননীয় সভানেত্রী তাকেই নৌকার মাঝি করছেন। এই যে আমাদের পাওয়া এটাই আমরা চাই। আমাদের এখানে দলের মধ্যে কোনো বিবেধ নেই। কোনো বিরোধ নেই। আমরা সবাই শ্রদ্ধেয় নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপির নেতেৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। সবাই সু-শৃঙ্খল রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। অতীতের ফেনী আর বর্তমান ফেনী যদি হিসেব করি তাহলে আকাশ পাতাল প্রার্থক্য। আগে ফেনী শহরে দেখতাম এই রোড় ওই রোড় ভাগ হয়ে যেতো। এটা অমুক দলের ওটা তমুক দলের। এখন সেটা নাই। সবার উদ্দেশ্য একটাই যে, আমরা নিজাম হাজারী হাতকে শক্তিশালী করে ফেনীতে উন্নয়নের শীর্ষে পোঁছাবো। এই শহর একটা সময় অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিলো এখন ফেনী শহরে ঢুকলেই বোঝা যায়, এই শহরে কতো সুন্দর হয়ে গেছে। আমাদের প্রত্যেকটি উপজেলা/পৌর/ ইউনিয়ন/ওয়ার্ড কমিটির কার্যক্রম চালু আছে। সবাই সর্বদা প্রত্যেকটি দলীয় কর্মসূচি পালনের জন্য সচেষ্টা থাকে।
তৌহিদ: আপনার ইউনিয়নে অনেকে প্রার্থী হয়েছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
মিলন: আমি গণতান্ত্রিক ধারায় বিশ্বাস করি। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী একটা দল। বঙ্গবন্ধু সবসময় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিশ্বাস করতেন। আমিও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করি। আর রাজনীতির শেষটা কী? সে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীতা করবে। যেহেতু আমি নির্বাচনমুখী একটা মানুষ। আমার কাছে মনে হয় নির্বাচনটা একটা উৎসব। ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি মহোদয় বলেছেন, নির্বাচন হবে উৎসবমুখর। আমিও সেটা বিশ্বাস করি। আমি আমার ইউনিয়নবাসীকে বলেছি, উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা আগামী ২৬ তারিখ পর্যন্ত এই নির্বাচনটা সুন্দর, সুষ্টুভাবে যেন হয় সবাই সবার জায়গা থেকে সহযোগিতা করার জন্য। প্রার্থী হওয়ার অধিকার সবার আছে।
আমি আহ্বান জানাচ্ছি, যারা যারা প্রার্থী হতে ইচ্ছুক, প্রতিদ্বন্ধীতা করতে ইচ্ছুক আমরা সবাই মিলে একসাথে নির্বাচনে ভোট চাইবো। ভোটের দিন একসাথে সবাই মিলেন আনন্দ উৎসব করবো। সবার জন্য আমার শুভ কামনা থাকবে। এবং সবার প্রতি আমার অনুরোধও থাকবে যে, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্টির কারণে আমাদের এই ইউনিয়নের যে সু-শৃঙ্খল একটা পরিবেশ যেনো কোনোভাবে বিঘ্ন না হয়। উৎসাহী হই কিন্তু অতি উৎসাহী না হওয়ার জন্য আমার আহ্বান থাকবে। যারা প্রার্থী হবে তাদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে এই ইউনিয়নের সন্তান যদি হয়ে থাকেন, এই ইউনিয়নে যদি বসবাস করে থাকেন কখনো তাহলে মাথায় রাখবেন এই ইউনিয়নের সুনাম-দুর্নাম যারা প্রার্থী হবেন তাদের ওপর নির্ভর করবে। কোনোভাবেই আপনি বা আপনার কোনো লোকের দ্বারা এই ইউনিয়নের বদনাম না হয় এবং নির্বাচনী পরিবেশ যাতে নষ্ট না হয়। নির্বাচন কমিশন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করে আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করবো সুন্দর একটি নির্বাচন উপহার দিতে। যে নির্বাচনটা সারা বাংলাদেশে উদাহারণ হিসেবে থাকবে।