চিরশয়ানে ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী

603

মিরপুর বুদ্ধিজীবী করবস্থানে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের পাশে বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে মুক্তিযোদ্ধা ও ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীকে দাফন করা করা হয়েছে।

এর আগে দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজে ইমামতি করেন ওই মসজিদের প্রধান ইমাম ড. এমদাদ উল্যাহ।

নামাজে জানাজায় অন্যান্যের মধ্যে শরিক হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।

এর আগে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয়। বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মরদেহ সেখানে রাখা হয়। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এসময় ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তাঁর সাথে ডা. দীপু মনি ও সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথও শ্রদ্ধা নিবেদনে অংশ নেন।

শ্রদ্ধা নিবেদনের পর স্পিকার বলেন, ‘ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সংগ্রামে প্রথম সারিতে ছিলেন। তিনি আমাদের অনুপ্রেরণা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে এই বীর নারীর আত্মত্যাগ জাতি চিরদিন কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে।’

এছাড়া ঢাকা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদের নেতৃত্বে এই মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।

১৯৪৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি খুলনায় ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর জন্ম। তার নানা অ্যাডভোকেট আব্দুল হাকিম ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের সরকারের সময় স্পিকার হয়েছিলেন।

মাত্র ষোল বছর বয়সে প্রিয়ভাষিণীর প্রথম বিয়ে হয়। আট বছরের মাথায় সেই সংসারে বিচ্ছেদ ঘটে, ১৯৭১ সালে যুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যে সন্তানদের নিয়ে শুরু হয় তরুণ প্রিয়ভাষিণীর অন্য এক লড়াই।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হতে হয় এই বীর নারীকে। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অবদানের জন্য ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে মুক্তিযোদ্ধা খেতাব দেয়। তার আগে ২০১০ সালে তিনি পান স্বাধীনতা পুরস্কার।

যুদ্ধদিনের সেই ‘ভয়াবহ’ অভিজ্ঞতা স্মরণ করে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, “১৯৭১ সালে আমি খুলনা ছিলাম। অক্টোবরের শেষের দিকে আমাকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়…৩২ ঘণ্টা আমাকে আটকে রাখা হয়েছিল। এমন কোনো নির্যাতন নেই, যা তারা করেনি। আমার জীবনে সে এক দুঃসহ স্মৃতি।”

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে সরকারি কর্মকর্তা আহসান উল্লাহর সঙ্গে নতুন করে সংসার শুরু করেন ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী। ১৯৭৭ সাল থেকে দুই দশকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তিনি কাজ করেছেন।

এক সময় তিনি মন দেন শিল্পের সাধনায়। ঝরা পাতা, শুকনো ডাল, গাছের গুঁড়ি দিয়ে তার তৈরি গৃহসজ্জার উপকরণ ও শিল্পকর্ম তাকে ধীরে ধীরে করে তোলে ভাস্কর।

প্রিয়ভাষিণীর প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রদর্শনী হয় যশোরে শিল্পকলা একাডেমিতে। চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান সেই প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছিলেন।