নিহত ফুটবলাদেরই চ্যাম্পিয়ন মানল প্রতিপক্ষ

592

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রথমবারের মতো মহাদেশীয় ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল ব্রাজিলের ক্লাব চ্যাপেকোয়েন্স। একের পর এক জিততে জিততে চলে গিয়েছিল দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম সেরা প্রতিযোগিতা কোপা সুদ-আমেরিকার ফাইনাল পর্যন্ত। কলম্বিয়া থেকে শিরোপা জিতে দেশে ফিরবেন প্রিয় ফুটবলাররা- এমন প্রত্যাশাই ছিল ক্লাবটির সমর্থকদের। কিন্তু বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়ে কলম্বিয়া থেকে লাশ হয়ে ফিরতে হলো চ্যাপেকোয়েন্সের খেলোয়াড়-কর্মকর্তাদের। ট্রাজিক এই দুর্ঘটনাটি শোকাচ্ছন্ন করে তুলেছে পুরো ফুটবল বিশ্বকে।

কোপা সুদ-আমেরিকার ফাইনালে চ্যাপেকোয়েন্সের মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল কলম্বিয়ার ক্লাব আতলেতিকো ন্যাশিওনালের। মাঠের লড়াইয়ে শেষপর্যন্ত কে জয়ী হতো, তা জানার আর কোনো সুযোগ নেই। বিমান দুর্ঘটনায় কার্যত ধ্বংসই হয়ে গেছে চ্যাপেকোয়েন্সের একটি স্বর্ণালি প্রজন্ম। ফুটবলের কাঠখোট্টা নিয়ম মেনে চললে কলম্বিয়ার ক্লাব ন্যাশিওনালকেই কোপা সুদ-আমেরিকার শিরোপাজয়ী দল হিসেবে ঘোষণা করার কথা। কিন্তু মর্মান্তিক এই বিমান দুর্ঘটনার পর সেই প্রথাগত নিয়ম মানতে চাইছেন না কেউই। ফুটবল বিশ্বে অনেকেই দাবি তুলেছেন যে, দুর্ঘটনার শিকার চ্যাপেকোয়েন্সকেই যেন ঘোষণা করা হয় চ্যাম্পিয়ন হিসেবে। এমনকি তাদের ফাইনালের প্রতিপক্ষ ন্যাশিওনালও এমন দাবি জানিয়েছে দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা কনমেবোলের কাছে।

কলম্বিয়ার এই ক্লাব এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আতলেতিকো ন্যাশিওনাল কনমেবোলের কাছে আবেদন জানিয়েছে কোপা সুদ-আমেরিকার শিরোপা চ্যাপেকোয়েন্সকে দেওয়ার জন্য। আমাদের পক্ষ থেকে এটাই হবে প্রাণঘাতী এই দুর্ঘটনায় নিহতদের শ্রদ্ধা জানানোর সঠিক উপায়।

কোপা লিবার্তোদোরেসের পর কোপা সুদ-আমেরিকাই দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় ফুটবল টুর্নামেন্ট। এটি অনেকটা ইউরোপের ইউরোপা লিগের সমপর্যায়ের। ফলে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা কনমেবোলকে। কলম্বিয়ার ক্লাব ন্যাশিওনাল অবশ্য জানিয়েই দিয়েছে যে, তারা এরই মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে মেনে নিয়েছে চ্যাপেকোয়েন্সকে, ‘আমাদের দিক থেকে, চ্যাপেকোয়েন্সই ২০১৬ সালের কোপা সুদ-আমেরিকার চ্যাম্পিয়ন।’

১৯৭৯ সালের পর ২০১৪ সালে আবার ব্রাজিলের শীর্ষ লিগ, সিরিআ-তে খেলার সুযোগ পেয়েছিল চ্যাপেকোয়েন্স। ২০১৫ সালে ভালো নৈপুণ্য দেখিয়ে জায়গা করে নিয়েছিল এ বছরের কোপা সুদ-আমেরিকায়। সেখানে যে তারা এত ভালো করবে তা কারো কল্পনাতেও ছিল না। গত বছর ইংল্যান্ডের ক্লাব লিস্টার সিটি যেভাবে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিতে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিল, চ্যাপেকোয়েন্সের গল্পটাও অনেকটা সেরকমই। লাতিন আমেরিকান ফুটবলের অন্যতম সেরা টুর্নামেন্টে তারা হারিয়েছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়ার শক্তিশালী দলগুলোকে। কিন্তু শিরোপা জয়ের অন্তিম লড়াইয়ে অংশ নিতে গিয়েই বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে চ্যাপেকোয়েন্স। ট্র্যাজিক এই ঘটনায় থেমে গেছে তাদের স্বপ্নযাত্রা।