৫০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা গর্ভবতী

543
A Rohingya Muslim woman Hanida Begum, who crossed over from Myanmar into Bangladesh, kisses her infant son Abdul Masood who died when the boat they were traveling in capsized just before reaching the shore of the Bay of Bengal, in Shah Porir Dwip, Bangladesh, Thursday, Sept. 14, 2017. Nearly three weeks into a mass exodus of Rohingya fleeing violence in Myanmar, thousands were still flooding across the border Thursday in search of help and safety in teeming refugee settlements in Bangladesh. (AP Photo/Dar Yasin)

প্রতিদিনই শিশুর জন্ম হচ্ছে আশ্রয় শিবিরে। কাজ করছে মেডিকেল টিম, স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতেও জন্ম নিচ্ছে নবজাতক।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অব্যাহত সহিংসতার জেরে বাংলাদেশে পালিয়ে আসাদের মধ্যে এখনও ৫০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নারী গর্ভবতী। তবে সংখ্যাটা আরেকটু বেশি হওয়ার শঙ্কার কথা বলছেন মাঠ পর্যায়ে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরা। এছাড়া চরম নির্যাতন বাদে ধর্ষণের শিকার হয়েও হাজার-হাজার নারী বাংলাদেশে ঢুকেছেন।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক চ্যারেটি সংস্থা ডিজাস্টারস ইমার্জেন্সি কমিটির (ডিইসি) পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। তাদের বরাতে খবর ছেপেছে প্রভাবশালী ব্রিটিশ অনলাইন পোর্টাল দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।

প্রশ্ন জেগেছে, মা হতে চলা এতো সংখ্যক নারী যখন সন্তান প্রসব করবেন তখন বাড়বে আরও রোহিঙ্গা। তাদের ভবিষ্যৎ, সুস্থ্যভাবে বেড়ে ওঠা বা স্বদেশে ফিরে যাওয়া সবই নতুন করে ভাবার বিষয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ নিয়ে চাই নির্দিষ্ট পরিকল্পনা।

৫০ হাজারের বেশি গর্ভবতীর জন্য বিশেষ ত্রাণসেবার কথাও বলা হচ্ছে। তবে এটি নিশ্চত করা অত্যন্ত দুরূহ কাজ বলে জানাচ্ছেন ত্রাণকর্মীরা। এছাড়া শিশুকে দুধ পান করান এমন মায়েদের মধ্যে অপুষ্টির হার আশঙ্কাজনক। পাশাপাশি এক লাখ ৪৫ হাজার শিশুও পৃথকভাবে অপুষ্টির শিকার; তাদের মধ্যে বেশি ঝুঁকিতে ১৪ হাজার শিশু। তাদের আবার বেশির ভাগ পাঁচ বছরের নিচে।

কেবল অস্থায়ীভাবে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের জিরো পয়েন্টেই ছয়টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত এক মাসে ৮০ রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হয়েছে। কক্সবাজারের দুটি বড় ক্যাম্পে লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের মধ্যে জন্ম হার আরও বহুগুণে বেশি। এর কোনো সরকারি তথ্য করা যায়নি। তবে রোহিঙ্গা নারীদের গর্ভে বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া শিশুরা মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পাবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন মায়া।

সেভ দ্য চিল্ড্রেনের মুখপাত্র ইভান শ্যুরম্যান বলেন, বিপুল সংখ্যক মানুষের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো এমনিতেই চ্যালেঞ্জের। এর মধ্যে আবার গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী নারীদের বিশেষভাবে ত্রাণ দেওয়া দুষ্কর বটে। তবে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

এখনও রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসছেন জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষের ঢল থেমে নেই। প্রতিদিনই রাতের আঁধারে মানুষজন ঢুকছেন। এই ধারা আগের চেয়ে কম বলার সুযোগ নেই কোনো অংশে।

রোহিঙ্গারা আগে থেকেই তাদের দেশে ছিলেন বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত। এর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবার অপ্রাপ্তি একটি বড় বঞ্চনা ছিল তাদের। এতে অপুষ্টি, টিকার অভাব, রোগবালাই, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতায় তাদের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া এতো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে নারী, শিশু ও বয়স্করা ধকলের মধ্যে রয়েছেন বলে বিভিন্ন পর্যবেক্ষক সংস্থার পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে। এরই মধ্যে জন্ম হচ্ছে শিশু, দেখছে পৃথিবীর আলো। বাড়ছে রোহিঙ্গা জনসংখ্যাও।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বলছে, এখন পর্যন্ত পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা সোয়া পাঁচ লাখ। তবে বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা সাড়ে ছয় লাখ ছাড়িয়েছে। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। নতুন করে জন্ম নিলে যোগ হবে আরও অর্ধলাখ।