হোমনায় গৃহবধূকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন

1261

কুমিল্লার হোমনায় পূর্বশত্রুতার জের ধরে কুৎসা রটিয়ে বিউটি আক্তার (২৪) নামের এক গৃহবধূকে মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। গৃহবধূকে নির্যাতন করে তিন দিন ঘরে আটকে রাখা হয়।

পরে স্বজনরা গতকাল শুক্রবার রাতে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন।

হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৪ নম্বর কেবিনে মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে এই প্রতিবেদকের কাছে এক লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা দেন বিউটি আক্তার। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূকে দেখতে হাসপাতালে আসেন। আজ শনিবার বিউটি আক্তার নিজে বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ করেন।

সরেজমিনে, এলাকাবাসী ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কৃপারামপুর গ্রামের হতদরিদ্র মো. মাওলা মিয়ার মেয়ে মোসা. বিউটি আক্তারকে গত ৮-৯ বছর পূর্বে আসাদপুর ইউনিয়নের চিৎপুর গ্রামের মৃত সুজন মিয়ার ছেলে প্রবাসী ফারুকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। আট বছরের সংসারে তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। ছোট্ট সংসারে সুখে দিন কাটলেও তিনি বিষের কাঁটা হন ভাসুর-জা ও শাশুড়ির কাছে। বিউটি আক্তারের স্বামী প্রবাসে থাকায় গত দুই বছর ধরে নানা অপবাদে জর্জরিত করে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালানো হতো বলে জানান বিউটি। সবশেষ গত বুধবার রাতে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে মিথ্যা কুৎসা রটিয়ে চিৎপুর গ্রামের চাঞ্চল্যকর যুবলীগ নেতা মুসলেম হত্যা মামলার আসামি ইউসুফের নেতৃত্বে তার ভাই মনিরসহ ভাসুর জসিম উদ্দিন, ভাতিজা শাহজালাল, শাশুড়ি কম্পন, খালা শাশুড়ি ফুলবরসহ ৮-১০ মিলে চুলের মুঠি ধরে, হাত-পা বেঁধে শুরু করে মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানবিক নির্যাতন। টর্চ লাইট, কাঠের লাঠি এবং কিল-ঘুষি লাথি মেরে বুকে-পেটেসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে তাকে তালাবদ্ধ করে রাখে একটি ঘরে। এভাবে টানা তিন দিনের দফায় দফায় নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে মুর্ছা যান হাসপাতালের শয্যায় থাকা ওই গৃহবধূ। পরে তার বাবা-মা খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

বিউটির বাবা মাওলা বলেন, “আমি ঢাকায় মাছের ব্যবসা করি। জানতে পারলাম আমার মেয়ে হাসপাতালে অসুস্থ। পরে এসে জানলাম এ অবস্থায় ওদের কেউ বিউটিকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে পালিয়ে যান। ” বিউটি আক্তার বলেন, “আমাকে ওরা বার বার নির্যাতন করত। আমি বাঁচবো বলে বিশ্বাস ছিল না। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। আমি গরিব মানুষ, আপনারা আমার ওপর নির্যাতনের বিচার করবেন। ” ভাসুর জসিম উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সবই জানতে পারবেন। ” এরপর স্থানীয় মেম্বার মো. স্বপন মিয়াকে ডেকে আনলে তিনি বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও বিচার করবেন বলে আশ্বাস দেন।

হোমনা থানার ওসি রসুল আহমদ নিজামী বলেন, “আমরা খবর পাওয়ার সাথে সাথেই নির্যাতিতাকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছি। একটি অভিযোগ নিয়েছি। তদন্ত করার জন্য এসআই ওহেদ মুরাদকে দায়িত্ব দিয়েছি। অপরাধী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।