সৌদিতে পরিবর্তনের ছোঁয়া

576

সৌদি আরবে পরিবর্তনের ঢেউ লেগেছে। প্রস্তাবিত ভিশন-২০৩০ বাস্তবায়নের প্রস্তুতি লগ্নে পরিবর্তন আনা হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে।

সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে মানসিকতা ও চিন্তা চেতনায়। ভিশন-২০৩০ অনুযায়ী, তেলের ওপর দেশের অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা হ্রাস ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করা। এর পাশাপাশি সাংস্কৃতিক জীবনেও করা হচ্ছে উদারীকরণ।

শুক্রবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক রাজকীয় ফরমানে বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ শ্রমমন্ত্রীকে অপসারণের ঘোষণা দেন। পুনর্গঠন করেন দেশের সুরা কাউন্সিলে।

প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যায় যে, এই সুরা কাউন্সিলের সদস্যরাই দেশ পরিচালনায় সরকারকে সহায়তা করে থাকে। টেলিভিশনে বলা হয়, আলি বিন নাসের আল-গাফিসকে শ্রমমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি মুফরেজ আল হাকবানির স্থলাভিষিক্ত হবেন। হাকবানি মাত্র সাত মাস শ্রমমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

আলি বিন নাসের বর্তমানে টেকনিক্যাল অ্যান্ড ভকেশনাল ট্রেনিং করপোরেশনের প্রধান। এই প্রতিষ্ঠানটি তরুণ সৌদিদের ব্যবসা-বাণিজ্যে সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য গঠিত কলেজ নেটওয়ার্কের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন।

এমন একটা সময়ে হাকবানিকে অপসারণ করা হলো যখন তার মন্ত্রণালয় বেশকিছু সমস্যার মুখোমুখি। যেমন অশোধিত তেলের দাম হ্রাস পাচ্ছে, এর ফলে কমে গেছে রাজস্ব এবং এই দইয়ের সম্মিলিত প্রতিক্রিয়ায় কমে যাচ্ছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি।

আল জাজিরার সৌদি আরব বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আহমেদ আলি ইব্রাহিম বলছেন, এই প্রয়োজনটার খুব প্রয়োজন ছিল। কেন না তার মন্ত্রণালয় বড় ধরণের সমস্যার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। সৌদি শ্রমশক্তির দক্ষতা সার্বিকভাবে হ্রাস পাচ্ছিল। ভিসন-২০৩০ বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছিল দেশটির সার্বিক  শ্রমশক্তির সার্বিক দক্ষতা।

নতুন মন্ত্রী সফল হবেন বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, তাই তার পরিবর্তন প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। তাই এই পরিবর্তন বাস্তবায়নে একটি গতিশীল নেতৃত্বের প্রয়োজন।

এ বছর কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে। সরকারি ব্যয় হ্রাস করতে হয়েছে। ঠিকাদারদের পেমেন্ট দেয়া বিলম্বিত করতে হয়েছে। যদিও সৌদিদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য সংস্কারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে।

এ বছর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর, এই তিন মাসে বেকারত্বের হার বেড়েছে ১২.১ শতাংশ। এ্র আগের তিন মাসে ছিল ১১.৬ শতাংশ।

সৌদি আরবের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, বেকারত্বের হার ২০৩০ সাল নাগাদ ৭ শতাংশে কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। শ্রমশক্তিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ ২২ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে বৃদ্ধি করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই অর্থনৈতিক পরিকল্পনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন যুবরাজ উপপ্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান।

এ বছর বিলম্বিত হওয়া সত্ত্বেও শ্রমিক আন্দোলন আক্ষরিক অর্ধেই হয়নি বলা চলে। পাশাপশি দেশের বৃহত্তম ঠিকাদারদের আর্থিক অসচ্ছলতা দেখা দেয় ব্যাপকভাবে। এর ফলে তদের বেতন দিতে দেরি হয়।

সৌদি আরবের তেল থেকে ব্যাপকভাবে আয় কমে যাওয়ার পর সরকার বেসরকারি কোম্পানি থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঋণ করে। সরকার এই ঋণ করে মূলত নির্মাণ কোম্পানির কথা থেকে। এর ফলে কোম্পানিগুলো তাদের শ্রমিকদের বেতন দিতে দেরি করছে।

এর ফলে হাজার হাজার বিদেশি শ্রমিক কয়েক মাস ধরে মজুরি পাচ্ছে না। এই শ্রমিকদের বেশিরভাগ ভারত, পাকিস্তান ও ফিলিপাইনের। বেতন দিতে দেরি করায় শ্রমিকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাই কোনো কোনো স্থানে প্রতিবাদ বিক্ষোভও হয়েছে। এ মাসেই বকেয়া পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।