সিনিয়র শিল্পীরা আত্মকেন্দ্রিক ছিলেন— আসিফ আকবর

2174
প্রেমিকার বিরহ পেল এক নতুন মাত্রা। যেন হঠাৎ করেই শহরের সমস্ত প্রেমিক প্রাক্তন প্রেমিকার চলে যাওয়ার বিরহকে নিয়ে গেলো এক অদ্ভুত ফ্যান্টাসীতে। সালটা ২০০১। রাজধানী থেকে মফস্বল সব চায়ের দোকান, বসতবাড়ি এমনকি রাস্তায় চলমান ও অপেক্ষমান নাগরিকের কণ্ঠে ভেসে আসছে একটা লাইন ‘ও প্রিয়া ও প্রিয়া তুমি কোথায়’। চলে যাওয়া প্রিয়তমার প্রতি এমন দৃশ্যমান দরদে যিনি ভাসিয়েছিলেন শহর থেকে শহর তিনি আসিফ আকবর।
যদিও ২০০১ সালের আগে বেশ কিছু সিনেমায় প্লে ব্যাক সিঙ্গার হিসেবে কন্ঠ দিয়েছেন। কিন্তু তখনও তিনি এক অপরিচিত নাম। ঐ একটি গান তাকে নিয়ে যায় খ্যাতির চূড়ায়। যেখান থেকে আজ অবধি একটি সিঁড়িও নামেন নি তিনি। বরং দিনের পর দিন আসিফ আরও এগোচ্ছেন এক ধাপ এক ধাপ করে। দীর্ঘ প্রায় ২০ বছরের সঙ্গীত জীবনের নানা ধাপ নিয়ে এই শিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক মুখোমুখি হয়েছেন এখনের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রুদ্র রুদ্রাক্ষ।

এখন: আসিফ ভাই কেমন আছেন?
আসিফ আকবর: এইতো ভালোই আছি। তুমি ভালো তো?

এখন: জ্বী, আমিও ভালো। আপনার ‘ও প্রিয়া ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ গানটিই মূলত আপনাকে শ্রোতাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। গানটি নিয়ে বিশেষ কোন স্মৃতি কি আছে?
আসিফ: গানটি আসলে অ্যালবামে আসে ২০০১ সালের জানুয়ারিতে। এর আগে ২০০০ সালের আগস্টে ‘বহুরূপী’ নামে একটা টেলিভিশন অনুষ্ঠানে গানটি আমি করি। এরপর থেকেই শ্রোতারা গানটি খুঁজতে থাকে। সেই ধারাবাহিকতায় ২০০১ সালের জানুয়ারিতে আসে আমার প্রথম একক অ্যালবাম ‘ও প্রিয়া ও প্রিয়া’। এটি রিলিজের পরের দিন থেকেই যে ক্লিক করেছে তা নয়। এটি মূলত ক্লিক করে পরের মাসে ভ্যালেন্টাইনকে কেন্দ্র করে। আর প্রথম কাজে সফলতা যেকোনো মানুষের জন্য মারাত্মক আনন্দের। আর এ্যালবামটি আমার ভিত তৈরি করে দিয়েছে।
asif-3
এখন: শুরুর পথচলা কেমন ছিলো?
আসিফ: আসলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিটা আগে এখনকার মত নতুনবান্ধব ছিলো না। আমার সময়ে সিনিয়ররা এতটা বন্ধুসুলভ ছিলেন না। নানাবিধ প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে পড়তে হয়েছে তখন আমরা যারা নতুন ছিলাম। আমাদের সিনিয়র শিল্পীরা আত্মকেন্দ্রিক ছিলেন।

এখন: আসিফ আকবরকে বিরহের প্রতিচ্ছবি বলা হয়। ব্যাক্তিজীবনেও কি আপনি এতটাই বিরহে ভোগেন?
আসিফ: আসলে বিরহের গান আমার পছন্দ। কিন্তু ব্যাক্তিগত জীবনে আমি প্রচণ্ড রোমান্টিক ও সুখী একজন মানুষ।

এখন: শ্রোতাদের সঙ্গে আপনার যোগাযোগটা কেমন?
আসিফ: আমার শ্রোতা আমার গানের প্রাণ। তাদেরকে উপেক্ষা করার দুঃসাহস কখনই আমার হয় নি। সেই শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমি নিজের সাথে শ্রোতার কোন দূরত্ব রাখিনি। আমার প্রথম অ্যালবামে বাসার ঠিকানা ও ফোন নাম্বার দেয়া ছিলো। প্রতিদিন সেই ফোন নাম্বারে অগনিত ফোন আসতো। সাধ্যমত ফোন অ্যাটেন্ড করতাম। চিঠিও আসতো প্রচুর। আমি নিয়ম করে চিঠির উত্তর দিতাম। আসলে শ্রোতাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হলে একধরণের মুগ্ধতা তৈরি হয় নিজের শিল্পের প্রতি নিজের। যেটা সৃষ্টির জন্য দারুণ অনুপ্রেরণার মত। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাটা আমার একটা কৌশলও।আমি সবসময় মানুষের সামনে হাজির ছিলাম।  আউট অব সাইড, আউট অব মাইন্ড।  আমি বিশ্বাস করি, মানুষের সামনেই থাকতেই হবে।

asif -1এখন: বাংলা সঙ্গীতে আপনার প্রবেশ ক্যাসেট যুগে, এখন ইউটিউব যুগ। এই ব্যপারটা কীভাবে দেখেন?
আসিফ: এটা মূলত সময়ের পরিবর্তন। আমি মনে করি পৃথিবী এগোচ্ছে এর সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশও এগোচ্ছে। এটা একটা ডিজিটাল মাধ্যম। আমি চাই এই মাধ্যমটা সম্পর্কে মানুষ জানুক। কীভাবে আমরা এখান থেকে রেভিনিউ পেতে পারে সে সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা দরকার বলেও আমার মনে হয়।

এখন:এবার আসি শুরুর প্রসঙ্গে। গানের শুরু কীভাবে?
আসিফ: আমার গানের শুরু মূলত স্কুলে। আমি এমনিতেই গাইতাম। আর প্যাশন ছিলো ক্রিকেট। গানকে ঐ সময়ে সিরিয়াসলি নেইনি। ছিলাম একজন এগ্রেসিভ ক্রিকেটার। পরে জেমস ভাই, বাচ্চু ভাইদের গান শুনতাম। এরপরে শওকত আলী ইমন ভাই হাতে ধরে আমাকে গানে আনেন। গানে আসার পর দেখলাম শ্রোতারা আমার কণ্ঠটাকে বেশ ভালোভাবেই গ্রহণ করে। এভাবেই মূলত আমার গানে আসা। সেরকম কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দীক্ষা নেই বললেই চলে।

এখন: আপনি তো গানে মডেলিংও করেছেন?
আসিফ: আমার গানে সাধারণ আমার কাস্টিং থাকে। অন্যদের একটি গানে আমি মডেলিং করেছি। তবে সেটা করার আর ইচ্ছা নেই। যদি কখনো ইচ্ছা হয়, তখন হয়তো করবো। তবে আমাকে যেহেতু মিউজিক ভিডিওর জন্য একটা হ্যান্ডসাম অ্যামাউন্ট দিতে হয়, সেহেতু প্রযোজকের কথাও আমাকে বিবেচনায় রাখতে হয়। নিজের গানে মডেলিং করতে পারি।

asif-5এখন: আপনার পরবর্তী গান কবে আসছে?
আসিফ: অনেকগুলো কাজ হচ্ছে। তবে আগামী মে মাসে আমার একটা মিউজিক ভিডিও আসার কথা রয়েছে। সে কাজটি দ্রুতই এগিয়ে চলছে।

এখন: গান নিয়ে আসিফ আকবরের পরিকল্পনা কি?
আসিফ: আমি আজীবন গান করে যেতে চাই। থামতে চাই না একটি দিনের জন্যও। আর আমি চাই আমার কাছ থেকে তরুণরা শিখবে সিনিয়রদের আচরণ জুনিয়রদের প্রতি কেমন হবে। কীভাবে ভালবাসতে হবে জুনিয়রদের। মূলত এই আমার প্রতিজ্ঞা মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির প্রতি।

ছবি ও ভিডিও: মুজতাহিদ হাসান