মিতুর মোবাইল সচল!

725

পুলিশের চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়া আলোচিত এসপি বাবুল আক্তার একটি হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে চাকরি নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি সেখানে চলতি ডিসেম্বর মাস থেকে দায়িত্ব পালন করছেন বলে তাঁর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, রাজধানীর পোস্তগোলায় বাস্তবায়নাধীন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক হাসপাতালের পরিচালক বাবুল আক্তার।এদিকে বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডের ছয় মাস পরও পুলিশ তদন্ত শেষ করতে পারেনি। পুলিশের তদন্ত নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। এমনকি ঘটনার পর হারিয়ে যাওয়া মিতুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি এখন সচল পাওয়া যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

গত ৫ জুন চট্টগ্রামে ছেলের সামনে মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এর পর থেকেই দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে বাবুল আক্তার ঢাকার খিলগাঁওয়ে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করছেন।

মিতু হত্যার ঘটনায় বাবুল আক্তারকে গত ২৪ জুন ডিবিতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এতে এমন খবরও ছড়িয়ে পড়ে যে বাবুল আক্তারই তাঁর স্ত্রী হত্যার সঙ্গে জড়িত। ওই সময় তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে পদত্যাগপত্র দেন বলেও পুলিশ জানায়। তবে পরে তিনি পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারেরও আবেদন করেন। গত ৬ সেপ্টেম্বর বাবুল আক্তারের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়।

মোবাইল ফোন সচল : মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন জানান, ০১৭১৫০৩২৬৯৬ নম্বরের মোবাইল নম্বরটি ব্যবহার করতেন মিতু। সেটি মিতুর নামেই বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন করা ছিল। এই নম্বরেই খুব সকালে ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার এসএমএস এসেছিল। সেই এসএমএসের কারণেই মিতু সকালে ছেলেকে নিয়ে স্কুলের উদ্দেশে বেরিয়ে খুন হন।

মোশাররফ হোসেন জানান, গত ১৮ অক্টোবর মিতুর মেয়ে তাবাসসুম তাসনিম টাপুরের জন্মদিন ছিল। আবেগপ্রবণ হয়ে নিজের মোবাইল ফোন থেকে মিতুর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়ে তা খোলা পান তিনি। তখন ওই নম্বরটি ব্যবহারকারীর সঙ্গে তাঁর কথাও হয়। ওই ব্যক্তি জানান যে তিনি সিএনজি চালক। হাতিরঝিল থেকে ফোনটি কুড়িয়ে পেয়েছেন। এরপর আরো তিন-চার দিন কথা হয় এই ফোন নম্বরে। পরে ওই নম্বর ব্যবহারকারী একেক সময় একেক পরিচয় এবং ফোনটি পাওয়ার স্থান সম্পর্কেও একেক জায়গার কথা বলে, জানান মোশাররফ।

গতকাল রাত ৮টা ২৫ মিনিটে মিতুর ব্যবহৃত নম্বরটিতে কালের কণ্ঠ থেকে ফোন করা হলে সেটি ধরে ওই ব্যক্তি নিজেকে মাহমুদ উল্লাহ এবং পরে জালাল বলে পরিচয় দেন। জানতে চাইলে তিনি জানান, সিএনজি পাম্প থেকে এটি কুড়িয়ে পেয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত এসপি কামরুজ্জামান বলেন, ‘মিতুর ব্যবহৃত ফোন নম্বরটির বিষয়ে আমরা জেনেছি। এটি নিয়ে এখন আমরা কাজ করছি। ’

এ বিষয়ে মোবাইল ফোন অপারেটরের পক্ষ থেকে গতকাল কালের কণ্ঠকে বলা হয়, মিতুর ওই নম্বরটি যদি তাঁর মৃত্যুর আগে বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হয়ে থাকে তাহলে সেটি চালু থাকতে পারে। তাঁর পক্ষ থেকে কেউ বন্ধ করার আবেদন না করলে মোবাইল অপারেটরের কিছু করার নেই। আর বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন সম্পন্ন না হলে এটি নিষ্ক্রিয় থাকার কথা। তবে ৪৫০ দিন পার না হলে ওই সিম আর কারো কাছে বিক্রিও করা যাবে না।

হাসপাতালের কর্মকর্তা বাবুল আক্তার : বাবুল আক্তার বর্তমানে যে হাসপাতালে চাকরি করছেন সেখান থেকে তাঁকে একটি গাড়ি ও একটি ফ্ল্যাটও দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁর শ্বশুর মোশাররফ হোসেন

কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একটি হাসপাতালে চাকরি করছে বাবুল আক্তার। ’

তদন্তে ধীরগতি : মিতু হত্যাকাণ্ডের তদন্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। কয়েকজন আসামি পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ’ তবে সঠিক তদন্ত নিয়ে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একটি মামলায় নিহতের মা-বাবা থেকে শুরু করে কাজের মানুষসহ সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু মিতুর মামলায় আমাদের কাউকে কিছুই জিজ্ঞাসা করা হয়নি। তাহলে তদন্ত কিভাবে হচ্ছে?’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাবুল আক্তারের সঙ্গে পুলিশের যোগাযোগ আছে কি না বলতে পারব না। বাদী হিসেবে তার সঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তাদের যোগাযোগ থাকা উচিত। ’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মামলার বাদী হিসেবে উনার (বাবুল আক্তার) সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। কোনো প্রয়োজন হলে তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা হয়। ’ এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘তিনি (বাবুল আক্তার) ঘটনার পর থেকে চট্টগ্রামে আসেননি। ’

মাহির স্কুলে যাচ্ছে : আট বছরের ছেলে আখতার মাহমুদ মাহিরের সামনে তার মা খুন হওয়ার পর সে অস্বাভাবিক আচরণ করে। পরে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলা থেকে শুরু করে খাওয়াদাওয়াও করানো হয়। এতে কিছুটা স্বাভাবিক আচরণে ফিরে আসে সে। কিছুদিন আগে তাকে খিলগাঁওয়ের একটি স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয়েছে।