মন্ত্রীসভায় স্বর্ণ নীতিমালা অনুমোদন

657

‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, “এটা (স্বর্ণ নীতিমালা) অর্থনৈতিক বিষয় সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদিত হয়েছে এবং সুপারিশকৃত। সারা বিশ্বে শুধু ২০১৬ সালেই অলংকার রফতানি হয়েছে ৬৩৮ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। হস্ত নির্মিত অলংকারের প্রায় ৮০ শতাংশ বাংলাদেশ ও ভারতে উৎপাদিত হয়। ভারতের চেয়ে খুব সামান্য পরিমাণ রফতানি করে বাংলাদেশ।”

নীতিমালার উদ্দেশ্য তুলে ধরে শফিউল আলম বলেন, “দেশের অভ্যন্তরে বাণিজ্যিক ব্যবহার এবং রফতানির উদ্দেশ্য পূরণ করার লক্ষ্যে স্বর্ণ আমদানি প্রক্রিয়া সহজীকরণ, আমদানি ও পরবর্তী বাণিজ্যিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট আমদানিকারক কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ। স্বর্ণালংকার রফতানিতে উৎসাহ এবং নীতি সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে রফতানি বৃদ্ধিকরণ। স্বর্ণালংকার রফতানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান শুল্ক ও বন্ড সুবিধা যৌক্তিকীকরণ ও সহজীকরণ। স্বর্ণখাতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ, সমন্বয়, পরিবীক্ষণ ও তদারকি ব্যবস্থা। ভোক্তা-ক্রেতা-স্বর্ণ ব্যবসায়ীসহ এ খাত সংশ্লিষ্ট অংশীজনের স্বার্থ সংরক্ষণ। সকল অংশীজনের অংশীদারিত্ব, কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে স্বর্ণ খাতের টেকসই বিকাশের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি।”

তিনি আরও বলেন, “নীতিমালায় অনুমোদিত ডিলার সম্পর্কে বলা হয়েছে, দ্য ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট-১৯৪৭ এর অধীন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত মনোনীত অথরাইজড ডিলার, ব্যাংক অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত একক মালিকানাধীন কোনো অংশীদারি প্রতিষ্ঠান বা লিমিটেড কোম্পানি অনুমোদিত ডিলার হিসেবে গণ্য হবে।”

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “অলংকারের সংগায় বলা আছে, স্বর্ণ দ্বারা প্রস্তুতকৃত অলংকার এবং স্বর্ণের পরিমাণ নির্বিশেষে স্বর্ণের সাথে হীরক, রৌপ্য ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও পাথর মিশ্রণে প্রস্তুতকৃত অথবা সাধারণ পাথর দ্বারা খচিত অংলকার।”

তিনি বলেন, “আমদানি নীতিতে বলা হয়েছে, বর্তমান নীতির অতিরিক্ত হিসেবে দেশের অভ্যন্তরীণ স্বর্ণ অলংকারের চাহিদা পূরণকল্পে অনুমোদিত ডিলারের মাধ্যমে স্বর্ণবার আমদানি নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করা হবে। অনুমোদিত ডিলার নির্বাচন বাংলাদেশ কর্তৃক সম্পন্ন করা হবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক গাইডলাইন প্রস্তুত করবে।”

ফিউল আলম বলেন, “অনুমোদিত ডিলার সরাসরি বা প্রস্তুতকারী বা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হতে স্বর্ণবার আমদানি করবে। অনুমোদিত ডিলার স্বর্ণ অলংকার প্রস্তুতকারকের কাছে বিক্রি করতে পারবে। আর অলংকার প্রস্তুত হলে রফতানি আকারে বিদেশে যাবে। যাতে আমাদের রফতানি সেক্টর যাতে চাঙ্গা হয়।”

স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধে এই নীতিমালা করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “আমদানিকারকরা মাসের শুরুতে স্বর্ণের হিসাব মূসক কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করবেন। স্বর্ণমান যাচাইয়ের জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে হলমার্ক ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হবে। স্বর্ণ, স্বর্ণালংকার ক্রয়-বিক্রয়ে হলমার্ক বাধ্যতামূলক করতে হবে। খাদের পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য বিক্রয় ক্যাশ মেমোর সাথে স্বর্ণ অলংকারের হলমার্ক স্টিকার বাধ্যতামূলকভাবে প্রদান করতে হবে। ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে ভোক্তা সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনগুলো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে।”

আগের মতোই লাগেজে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণ বিনা শূল্কে আনা যাবে। ২৩৪ গ্রাম পর্যন্ত শুল্ক দিয়ে আনা যাবে। নীতিমালা চূড়ান্ত হলে এটা বাড়তে পারে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।