বাঁশিতে মন ভরে যার

1607

পেশায় তিনি আইসক্রিম বিক্রেতা। কাঁধে আইসক্রিমের বাক্স ঝুলিয়ে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ান। ‘কুলফি আর মালাই’ তার আইসক্রিমের নাম। মাথায় লাল গামছা পেঁচানো এ লোকটির সঙ্গে সবসময়ই থাকে একটি বাঁশি। কারণে- অকারণে সুর তোলেন। বাঁশির হৃদয় নিংড়ানো সুরের জালে মুহূর্তেই বেঁধে ফেলেন চারপাশের সবাইকে। কিছুটা সময়ের জন্য যেনো থেমে চায় সবকিছু। কেবলই তার বাঁশিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে সবাই।

শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া উদ্যান তার বিচরণ ক্ষেত্র। সকালে আইসক্রিমের বাক্স নিয়ে ঢোকেন। সারাদিন বিক্রি করে যা পান, তা দিয়েই চলে সংসার। তার কাছ থেকে আইসক্রিম কিনলে বাড়তি পাওনা হিসেবে জোটে বাঁশির সুর। কেউ কেউ সে সুর শুনে খুশি হয়ে দু’চার টাকা উপহার দেন। খুশি মনে পকেটে গুজে নেন এই আইসক্রিম ওয়ালা।

তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আইসক্রিম যেদিন ভালো বিক্রি হয়, সেদিন তার বাঁশিটা একটু বেশিই বাজে। আবার যেদিন খুব কম বিক্রি হয়, সেদিনও বেশি সুর উঠে বাঁশিতে। তার মতে, তার সুখ দুখের সঙ্গী এ বাঁশি। ছোটবেলা থেকে শখের বসে সেই যে বাঁশি হাতে তুলেছেন এখনও ছাড়তে পারেননি।

বাঁশির জন্য বিভিন্ন সময়ে অনেক প্রশংসা কুড়ালেও অভাবের সংসারে কখনো কখনো এ বাঁশির জন্যই নানা কথা শুনতে হয়েছে। পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে এটা একটা খেয়ালিপনা। তাদের ভাষ্যে, বাঁশিতে কি আর পেট ভরে?

কিন্তু এই বাঁশিওলা আইসক্রিম বিক্রেতার মত আবার একটু ভিন্ন। তিনি বলেন, বাঁশিতে পেট না ভরলেও মন ভরে। মনের খিদা রাইখা, পেটের খিদা মিটাইলেই কি জীবন সুন্দর হয়? হয় না।

কথার ফাঁকেই ফুঁক দেন বাঁশিতে। সুর তোলেন- সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী…