কুবি ভর্তি পরীক্ষার টাকা বণ্টনে কর্মচারীদের অসন্তোষ

724

কুবি প্রতিনিধি:

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে বি ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার টাকা বণ্টনে কর্মচারীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ভর্তি পরীক্ষায় মোট আয়ের উদ্ধৃত থেকে আনুপাতিক হারে কম টাকা পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন উক্ত ইউনিটে কাজ করা কর্মচারীরা। ‘অমানবিকভাবে’ তাদেরকে কম টাকা দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা কমিটির বিরুদ্ধে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন তারা।

তবে বি ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার আহবায়ক, কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জি. এম. মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, ‘আমি কারও প্রতি অবিচার করিনি। যাকে দিয়ে যতটুকু কাজ করানো হয়েছি আমি তাকে ততটুকুই পারিশ্রমিক দিয়েছি।’

জানা যায়, ভর্তি পরীক্ষার পর উদ্ধৃত টাকা হতে কর্মচারীদের ৩০০০ টাকা করে প্রদান করা হলেও অতিরিক্ত পারিশ্রমিক ঠিকভাবে বণ্টন করা হয় নি। বি ইউনিটের মোট কর্মচারী ছিলো ১৪ জন। এর মাঝে ১২ জন কর্মচারী টাকা কম দেয়ার কারণে অতিরিক্ত পারিশ্রমিকের সেই অর্থ গ্রহণ করেননি বলে জানিয়েছেন তারা।

বি ইউনিটে কাজ করা কয়েকজন কর্মচারী জানান, ভর্তি পরীক্ষার কাজ চলাকালীন সময় কর্মরত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য খাবার আনয়ন ও পরিবেশন করে নিজেরা খাবার না পাওয়া, অফিস সময়ের বাইরেও কাজ করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তারা নিজেদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বি ইউনিটের জন্য বরাদ্দকৃত যে ড্রাইভার ছিল তারও সঠিক পারিশ্রমিক দেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

কর্মচারীদের দেওয়া তথ্যমতে, ভর্তি পরীক্ষায় এ ইউনিটের কর্মচারীরা জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২২ হাজার, সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা; সি ইউনিটের কর্মচারীরা জনপ্রতি ১২ হাজার, ৭ হাজার ৯ শত টাকা পেয়েছেন যেখানে বি ইউনিটের কর্মচারীরা জনপ্রতি সর্বোচ্চ মাত্র ৩ হাজার টাকা। ক্ষেত্রবিশেষে তাদের কেউ আরও কম পেয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী জানান, ‘আমরা ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী, মাস শেষে অল্প বেতন পাই। এই আমাদের মত মানুষের টাকা তারা কীভাবে কম দেন? তার ওপর আমাদের সবসময়ই দেরি করে টাকা দেয়া হয়। আমরা এর প্রতিকার চাই।’

এ বিষয়ে কর্মচারী সমিতির সভাপতি দিপক চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষায় বি ইউনিটের চেয়ে সি ইউনিটে ফরম কম বিক্রি হয়েছে। সেক্ষেত্রে সি ইউনিটের কর্মচারীদের চেয়ে আমাদের বেশি পারিশ্রমিক পাওয়ার কথা, কিন্তু আমরা তা পাইনি। সি ইউনিটের কর্মচারীরা সর্বনিম্ন যে পারিশ্রমিক পেয়েছে (৭ হাজার ৯ শত) আমরা অন্ততপক্ষে সে অনুযায়ী যেন পাই বার বার সেটার দাবি জানিয়েও কোনো সুরাহা হয় নি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রারের কাছে অনেকবার গেলেও তিনি আমাদের আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই দেন নি।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বি ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার আহবায়ক কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জি. এম. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমি ভর্তি পরীক্ষার নিরাপত্তার স্বার্থে সবাইকে দিয়ে সব কাজ করাইনি, যতটা পারি নিজেরাই করেছি। তারপরও সেসব কাজ অন্যদের করানো যায় সেসব করিয়েছি। কর্মচারীদের কাজের জন্য মূল্য নির্ধারণ করা আছে। যাকে দিয়ে যতটুকু কাজ করানো হয়েছি আমি তাকে ততটাই দিয়েছি।’

ভর্তি পরীক্ষার টাকায় কর্মচারীকে দিয়ে খাবার আনিয়েও কর্মচারীকে কেন খাবার দেয়া হয়নি সে বিষয়ে বিষয়ে বলেন, ‘অনেক কাজ ও চাপের কারনে অব সময় সবকিছু মাথায় থাকেনা, আর আমি কর্মচারীকে বলে দিয়েছি কখনো খাবার না পেলে আমাকে জানাতে, আমি তাকে টাকা দিয়ে দিব। সে আমাকে জানায়নি। আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক যে একজন ড্রাইভার বরাদ্দ ছিল সে ড্রাইভারকে দিয়ে বেশি কোথাও যাওয়া হয়নি তাই তার যতটুকু পাওয়া উচিত তাকে ততটুকুই দিয়েছি।’

কর্মচারীরা তাদের ন্যায্য পারিশ্রমিক পায়নি কেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বণ্টন কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. মো. জাকির ছায়াদউল্লাহ খান বলেন, ‘আমি শুধু টাকা বণ্টন করেছি। কে কত পাবে সেসব ভর্তি কমিটির আহবায়ক জানেন। আমি এসব কিছু জানিনা, এসব আমার কাজের মধ্যে ছিল না।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘আমি দু’পক্ষের প্রতিনিধিদের আমার অফিসে ডেকে এনে এর একটা সমাধান করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এবার তো যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে তাই আগামীবার যেন এরকম না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে বলেছি।’