ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ চায় সভাপতির ছোটভাই ছোটন!

960

ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ চায় সংগঠনটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের আপন ছোট ভাই ও সংগঠনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রাকিনুল হক চৌধুরী ছোটন। এমন অভিযোগ সংগঠনের ভেতরে-বাইরে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর নতুন করে সংঘাত-সংঘর্ষ সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ এই দুই কমিটিতে যোগ্যদের মূল্যায়ন না করে টাকার বিনিময়ে পদ বাণিজ্য করার অভিযোগ উঠছে তার বিরুদ্ধে।

এই বিষয়ে জানতে রাকিনুল হক চৌধুরী ছোটনকে একাধিকবার ফোন ও ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে বক্তব্য নেওয়ার সম্ভব হয়নি। আর ভাইয়ের বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি শোভন।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, শুধু মাত্র সভাপতির ছোট ভাই হওয়ার সুবাদে আন্তর্জাতিক সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছে ছোটন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছোট ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা ছাত্রলীগের সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

অভিযোগ অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই সংগঠনের পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা ছোটনের। শোভন সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর পর নিজ জেলা কুড়িগ্রামে গিয়ে জেলা ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করে ছোটন। সেই চেষ্টার এক পযায়ে কেন্দ্রীয় সভাপতির ভাই হওয়া সত্ত্বেও জেলা ছাত্রলীগের নেতাদের হাতে মাইর খেয়ে এলাকা ছাড়েন বলে জানা গেছে।

ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে দায়িত্ব প্রাপ্ত আওয়ামী লীগ এক নেতা জানিয়েছেন, ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা থেকে ১১ জনকে বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ওই তালিকায় ছোটনের নামের পাশে স্টার চিহ্ন দিয়ে তিনি বলেছিলেন, দেখো, সভাপতির ছোট ভাইকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখার দরকার আছে কী না। ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শ উপেক্ষা করে রাকিনুল হক চৌধুরী ছোটনকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে দেওয়া হয় আন্তর্জাতিক সম্পাদকের পদ।

ছাত্রলীগের বিভিন্ন পযায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে আলোচনা রয়েছে, কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের ছোট ভাই রাকিনুল হক চৌধুরী ছোটনের বাসার কুকুর পরির্চযার কারণে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সম্পাদকীয় পদ পেয়েছেন দুই নেতা। যাদের কোনো রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। অথচ সেখানে অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীরাই কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পায়নি।

ছাত্রলীগের বিভিন্ন পযায়ের নেতারা অভিযোগ করেছেন, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা আটকে রেখেছেন কেন্দ্রীয় সভাপতির ছোট ভাই পরিচয়ের দাপটে। এই দুই শাখায় সবচেয়ে বেশি পদায়ণ হয়েছে তার ইচ্ছায়। এই প্রভাববলয় সৃষ্টির ফলে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর বড় রকমের সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখছেন ছাত্রলীগের নেতারা।

নাম প্রকাশে না করার শর্তে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি এক নেতা অভিযোগ করেছেন, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি দিতে টাকার লেনদেনের ঘটনা ঘটেছে। সেই টাকার ভাগও নিয়েছেন সভাপতির ভাই ছোটন। কক্সবাজার জেলা কমিটি দেওয়া হবে এমন গুঞ্জনকে কেন্দ্র করে ওই জেলার কয়েকজনের কাছ থেকে পদ দেওয়ার আশ্বাসে টাকা নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে ছোটনের বিরুদ্ধে।

ছাত্রলীগের বিভিন্ন পযায়ের নেতাদের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক সম্পাদক হওয়ার পর থেকে দেশের বাইরে থাকা সংগঠনের শাখাগুলোতে নিজের লোকজনকে পদায়ণ করার পাশাপাশি আর্থিক লেনদেনসহ বিভিন্ন প্রকার সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের চেষ্টাও চলছে।