এই প্রজন্মকে আরও বেশি-বেশি পড়তে হবে —শশী তারুর

1138
শশী তারুর

অভিজ্ঞ রাজনীতিক। অন্য ধারার লেখক। কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরের মুখোমুখি চৈতালি বিশ্বাস। পড়ুন ‘এবেলা’র সৌজন্যে।

 

সামাজিক মাধ্যমে আপনি দারুণ সক্রিয়। এ কি শুধুই জনসংযোগ? না অন্য কিছু?
(হেসে) এটা রাজনীতিতে আসার আগে থেকেই। আমার টুইটের কারণে অনেক সময় মানুষের উপকার হয়েছে। অনেকের জন্য আর্থিক সাহায্য জোগাড় করা সম্ভব হয়েছে। একবার ট্রেনে স্ট্রোক হওয়া একজনের জীবন বাঁচাতে পেরেছিলাম! পরের স্টেশনে অ্যাম্বুল্যান্স পৌঁছে গিয়েছিল! শুধু আমি কেন, সুষমাজিও (সুষমা স্বরাজ) সামাজিক মাধ্যমে অনেককে সাহায্য করে থাকেন। মানুষও প্রয়োজনে টুইট করে সাহায্য চাইতে পারেন আমাদের কাছে।

তা হলে কেন সেই সামাজিক মাধ্যমেই প্রবল সমালোচনা সহ্য করতে হয় আপনাকে?
দেখুন, যে কোনও মাধ্যমকেই ভাল-খারাপ দু’ভাবে ব্যবহার করা যায়। একদিকে যেমন সামাজিক সাফল্য রয়েছে, তেমনই ফেসবুক-টুইটারে সমালোচিতও হতে হয়। কম-বেশি সকলেরই এ জাতীয় অভিজ্ঞতা রয়েছে। সমস্যা হয় যখন লোকে নিজের আসল পরিচয় লুকিয়ে হিংসা-বিদ্বেষ ছড়ায়। বাজে ভাষায় আক্রমণ করা হয়! সিরিয়াস রিপোর্ট করলে পাল্টা যুক্তি দেওয়া হয়, উনি রাজনীতিক বা এই-সেই। কখনও কখনও প্রোফাইল বন্ধ করে দেওয়া হয়। কখনও চলতেই থাকে। আমার মনে হয়, মানবিক কারণেই সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করা উচিত। মতপার্থক্য যদি থাকে, তা প্রকাশ করাই যায়। কিন্তু রূঢ় বা অশ্লীল ভাষায় নয়।

মোদী তরুণ প্রজন্মকে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। এ প্রজন্ম সেক্ষেত্রে কংগ্রেসকে ভোট দেবে কেন?
খুব ভাল প্রশ্ন! দেখুন, এমন অনেক রাজ্য বা প্রদেশ রয়েছে, যেখানে আঞ্চলিক দল কংগ্রেসের চেয়ে ভাল অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু যখন জাতীয় দল হিসাবে একটি রাজনৈতিক বিকল্পের কথা ভাবা হয়, তখন কংগ্রেসের গুরুত্ব বুঝতে পারা যায়। দেশের প্রত্যেক কোণে যে রাজনৈতিক দলটির অস্তিত্ব রয়েছে, সেটি হল কংগ্রেস! তাছাড়া, এর আগেও বহুবার সরকারে এসে দেশ চালিয়েছে কংগ্রেস। ইউপিএ সরকার সাফল্যের সঙ্গে দেখিয়েছে, নাগরিকের জীবনে কী-কী পরিবর্তন আনা সম্ভব। গরিব মানুষের কথা ভাবা হয়েছে। তাঁদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এই দলটির সঙ্গেই জুড়ে রয়েছে গাঁধীজির মতাদর্শ। সবদিক দেখা জরুরি! আশা করি, আগামিদিনে কংগ্রেস আবারও মানুষকে বোঝাতে সফল হবে, কেন তাদের সঙ্গে নিয়ে দেশের মানুষের চলা উচিত। কেন শুধু ভাষণ শুনে বা নাড়া লাগানো দেখে ভোট দেওয়া উচিত নয়! গরিব মানুষ খেতে না পেলে গ্রামে শৌচাগার বানিয়ে কী হবে! পেটে খাবার পড়লে তবে তো শৌচাগার মানুষের কাজে লাগে! ফোর-জি ব্যবহারের নেশায় শেষে মানুষ মোদীজিকেই ভুলে না যান!

গাঁধীজি, নেহরু, দীনদয়াল বা গোয়ালকর— তরুণ প্রজন্ম কাউকেই দেখেনি। তারা নরেন্দ্র মোদীকে দেখেই নতুন ভারত চিনছে। দোষ তবে কার?
ঠিকই। ইতিহাসটা ঠিকভাবে না জানলে কার সঙ্গে হাঁটব, সে সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যাই হয়। তাই এই প্রজন্মকে আরও বেশি-বেশি পড়তে হবে। সংবাদমাধ্যম, সামাজিক মাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। সর্বোপরি, বর্তমান পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে হবে। শুধু মোদীকে দেখে ভোট দেবেন কেন! ভাবুন, নাগরিক হিসাবে আপনার জীবনে কি কোনও ফারাক অনুভব করতে পারছেন? কোনও সদর্থক কিছু ঘটেছে? কাজ পেয়েছেন? উত্তর ‘না’ হলে তো চিন্তারই বিষয়! মানুষ আগে ভাল করে বুঝে নিন যে, ভোট দেওয়ার অর্থ কী! নির্বাচনের চার বছর পরেও যদি কোনও পরিবর্তন না ঘটে, তাহলে সে নির্বাচনের ফায়দা কী?

শশী তারুর ও চৈতালি বিশ্বাস

দল পছন্দ হলেও বহু সময় প্রার্থী পছন্দ হয় না। নোটায় ভোট দিতে হচ্ছে! উপায় কী?
আমার মতে, যিনি নোটায় ভোট দিচ্ছেন, তাঁর নিজস্ব কোনও রায় নেই। অন্য প্রার্থী বা দলকে যাঁরা ভোট দিচ্ছেন, শেষ অবধি তাঁদের রায় তো জিতছে! খুব খারাপের মধ্য থেকে কম খারাপ একজনকে বেছে নিলে অন্তত যাঁকে পছন্দ নয়, তাঁর বিপক্ষে রায় দেওয়াই হয়।