আগাম বিক্রি: নিয়মে তোয়াক্কা নেই ইজারাদারদের

2178

এখন রিপোর্ট।।

ঢাকা সিটি করপোরেশনের ঠিক করে দেয়া সময়ের আগেই কোরবানীর পশু বিক্রি করতে শুরু করেছে ব্যবসায়ীরা। আর এতে সরাসরি সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে হাট কর্তৃপক্ষ। তবে ইজারা নেয়ার সময় ডিসিসির নিয়ম মেনে চলার ‘অঙ্গীকারে’ স্বাক্ষর দিলেও এখন প্রকাশ্যেই সেটা অমান্য করা হচ্ছে। বিভিন্ন হাটে মাইকে ঘোষণা দিয়েই পশু বিক্রি চলছে।

রাজধানীর কয়েকটি হাট সরেজমিন ঘুরে ও নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

কোরবানির পশু বিক্রির জন্য সিটি করপোরশনের নির্ধারিত সময় শুরু হবে ঈদের তিনদিন আগ থেকে। সে অনুযায়ী ১০ সেপ্টেম্বরের আগে পশু বিক্রি করা নিয়ম অনুযায়ী অবৈধ। অথচ এ নিয়মে তোয়াক্কা নেই ইজারাদারদের।

৭ সেপ্টেম্বর থেকে ডিসিসি নির্ধারিত কোরবানির হাট সাজানো ও পশু তোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে বিক্রি করার অনুমতি নেই। বুধবার ও বৃহস্পতিবার বিভিন্ন হাটে এ নিয়ম লঙ্ঘণের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মেরাদিয়ার হাটে গিয়ে দেখা যায়, দেদারসে বিক্রি না হলেও ক্রেতাদের আনাগোনা অনুযায়ী বিক্রি চলছে। এ বাজারে সহস্রাধিক গরু ইতোমধ্যে তোলা হয়েছে। সকাল থেকে বিভিন্ন দামের ১০-১২টি গরু বিক্রি হয়েছে।

একটি গরু বিক্রি সময় ইজারদারের কন্ট্রোল বক্সের সামনে দেখা হয় ক্রেতার সঙ্গে। বনশ্রীর ই ব্লকের বাসিন্দা মো. ওয়াজিউল্লাহ কুষ্টিয়ার বিক্রেতা ফিরোজ ইসলামের কাছ থেকে ৭৫ হাজার টাকায় গরুটি কিনেছেন। এর হাসিল হিসেবে ইজারাদারকে ক্রেতা দিয়েছেন ৩ হাজার ৭৫০ টাকা। কন্ট্রোল বক্সে পুলিশ অবস্থান করলেও তাদের নিয়মবহির্ভুত এ বিক্রির বিষয়ে কিছু বলতে দেখা যায়নি।

এসময় হাট কমিটির সদস্য মো. আমিনুল ইসলামের কাছে সময়ের আগে বিক্রি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিয়ম তো অনেক কিছুই আছে। কয়টা আমি আপনি মানি। আর এটা তো মহা অন্যায় কিছু না। একটু সুবিধার জন্য কেউ আগে কিনে নিয়ে যায়, আমরা সে সুযোগটাই দিচ্ছি।’

ক্রেতা ওয়াজিউল্লাহর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অবগত নন বলে জানান। আর বিক্রেতা ফিরোজও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

পরে ইজারাদার শাহ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আজ (৮ সেপ্টেম্বর) থেকে বিক্রি করার অনুমতি আমি পেয়েছি। তাই বিক্রি করছি।’

তার এমন বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহম্মেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ঈদের তিনদিন আগ থেকে কোরবানির পশু বিক্রির অনুমতি রয়েছে। তার মানে ১০ সেপ্টেম্বর থেকে পশু বিক্রি করা যাবে। এর আগে কেউ বিক্রি করলে সেটা আইনত অন্যায়।’

নিয়ম ভেঙে পশু বিক্রির চিত্র দেখা গেছে অন্যান্য হাটেও। আফতাব নগর গরুর হাটেও এ বিক্রি থেমে নেই। ঢাকার অন্যতম বৃহৎ এ হাটের গেটে দাঁড়িয়ে এক ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে বিক্রি হওয়া অন্তত দুই ডজন গরু নিয়ে যেতে দেখা গেছে।

হাটের ভেতর গিয়ে কয়েকজন বিক্রেতার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হলে তারা জানান, বিক্রি করার নিয়ম না থাকলেও সেটা অনেকেই মানছে না। আগে গরু বিক্রি করে দিতে পারলে আগে বাড়ি ফেরা যাবে। এ বিক্রিতে কোনো বাধা কেউ দিচ্ছে না।

হাট কর্তৃপক্ষের কোনো বিধিনিষেধ আছে কী না জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা বলেন, তারা তো চায়ই, যতো পারুক, বিক্রি হোক। বিক্রি হলেই তো তাদের লাভ। ব্যবসায়ীর সঙ্গে এসব কথার ফাঁকেই বেজে ওঠে আফতাবনগর হাটের মাইক। ঘোষককে বলতে শোনা যায়, ‘কোরবানির গরু কেনা শেষে সবাই হাসিল দিয়ে যাবেন, কেউ হাসিল ছাড়া যাবেন না।’ হাট কর্তৃপক্ষের কাউন্টারের সামনে গিয়ে বিক্রির অর্থ লেনদেনেরও আহ্বান জানায় তারা।

এ বিষয়ে হাট কমিটির সদস্য তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘তিন আগে থেকে বিক্রি করার কথা রয়েছে। তবে কোনো কোনো ক্রেতার অনুরোধে আমরা আগে এক/ দুইটা গরু বিক্রি করছি। এতে তেমন কারো ক্ষতি হচ্ছে বলে তো মনে হয় না।’

এদিকে, কোরবানির পশুর বর্জ্য সংরক্ষণ করে সঠিকস্থানে ফেলার জন্য ডিসিসি থেকে একটি করে পলিথিন প্রত্যেক ক্রেতাকে দেয়ার কথা। পশু কিনে নিয়ে যাওয়ার সময় হাট কর্তৃপক্ষ সে পলিথিন দিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও কোথাও সেটা দিতে দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে মেরাদিয়া, আফতাবনগর হাট কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে তারা বলেন, ‘সিটি করপোরেশন থেকে এখনও পলিথিন আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি।’

এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের বক্তব্য হচ্ছে- পশু বিক্রির নির্ধারিত সময়ের আগেই হাট কর্তৃপক্ষের কাছে পলিথিন পৌঁছে দেয়া হবে। নির্ধারিত সময়ের আগে অন্যায়ভাবে কেউ পশু বিক্রি করলে পলিথিন দেয়ার দায়িত্ব তারই নেয়া উচিত। সিটি করপোরেশনের ওপর পলিথিন না দেয়ার দায় পড়বে না।’