জঙ্গী সন্ত্রাসের ডিরেক্টর জামায়াত, প্রডিউসার বিএনপি

1089

এখন রিপোর্ট।।

বাংলাদেশে যে জঙ্গি-সন্ত্রাসের তৎপরতা চলছে তার ডিরেক্টর (পরিচালক) জামায়াত, প্রডিউসার (প্রযোজক) বিএনপি এবং মাঠের অ্যাক্টর (অভিনেতা) শিবির, আনসারউল্লাহ বাংলাটিম ও জঙ্গি সংগঠনগুলো বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

সচিবালয়ে তথ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে সোমবার দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘আগুনযুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর (দেশকে) অস্থিতিশীল করতে বেগম খালেদা জিয়ার নতুন কৌশল গুপ্তহত্যা। বাংলাদেশে কোন খুনী ছাড় পাবে না। প্রত্যেক খুনীর জন্য একটি করে ফাঁসির দড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমাকেও হত্যা করলে তাদের কেউ ছাড় দেবে না। তাই আমার কোন দুঃখ নেই।’

গুপ্তহত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের উদ্দেশ্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের কিন্তু কোন নিস্তার নেই। আজ হোক কাল হোক আপনারা ধরা পড়বেন।’

তিনি বলেন, ‘সরকারকে প্রতিপক্ষ মনে করছে জঙ্গিরা ও বেগম খালেদা জিয়া। সরকারের গায়ে হাত দিতে ব্যর্থ হয়ে সাধারণ নাগরিকের গায়ে হাত দিচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’

জাসদের একাশেংর সভাপতি বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকারের পক্ষ থেকে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে এ কথাটিই বলব, সরকার জানে কখন ধৈর্য্য ধরতে হয়, কখন মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হয়। সরকার জানে কখন এ ধরনের অপকর্ম কঠোরভাবে দমন করতে হয়।’

জঙ্গি-সন্ত্রাস-গুপ্তহত্যা দমনে সরকার বদ্ধপরিকর জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এর সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের অনেকের জড়িত থাকার প্রমাণ সরকারের হাতে রয়েছে। তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই কাজ করে সরকার, অহেতুক দোষারোপ করে না, ব্লেম-গেম খেলে না। খালেদা জিয়াই নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে দোষারোপের রাজনীতি করছেন, ব্লেম-গেম খেলছেন।’

হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘যারা বলছেন সরকার এসব গুপ্তহত্যা ও জঙ্গি হামলার ব্যাপারে সজাগ নয়, এ কথাটা সঠিক নয়। সরকার ২৪ ঘণ্টা জেগে আছে, সরকার ২৪ ঘণ্টা জনগণকে পাহাড়া দিচ্ছে। পাহাড়া দিচ্ছে বলেই আমরা বড় বড় স্থাপনাগুলোকে রক্ষা করতে পেরেছি। পাহারা দিচ্ছে বলেই আগুন যুদ্ধ থামাতে পেরেছি।’

মন্ত্রী বলেন, ‘তারপরও একজন সাধারণ নিরস্ত্র নাগরিকের ব্যাপারে আমরা দুঃখিত, আমরা এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। আমরা এটা নিষ্পত্তির চেষ্টা করছি।’

‘আমরা ঘুমাচ্ছি না। যদি ঘুমাতাম একেক জায়গায় ৫০ জন মারা যেতেন কিন্তু সেটা ঠিক নয়। একজনের হত্যার জন্য আমরা কৈফিয়ত দিতে প্রস্তুত আছি।’

জঙ্গিবিরোধী বিশেষ অভিযানে পুলিশের হাতে গত দু’দিনে ৫ হাজার ৩২৪ জন গ্রেফতার হয়েছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যাদের মধ্যে ৮৫ জন জঙ্গি বলে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে পৌনে ২ হাজার সুনির্দিষ্ট মামলায় অভিযুক্ত আছেন। বাকিরা সন্দেহভাজন। উপযুক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যদি দেখা যায় তারা কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িত নয়, তখন তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে।’

হাসানুল হক আরো বলেন, ‘সম্প্রতিক এসপির স্ত্রী মিতু, পুরোহিত ও সেবায়েত হত্যা ছাড়া প্রায় সব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমরা (আসামীদের) শনাক্ত করতে পেরেছি। মামলা তৈরি হচ্ছে। আমরা আদালতে পেশ করব। তবে আশা রাখছি এ ব্যাপারে (এসপির স্ত্রী, পুরোহিত ও সেবায়েত হত্যা) আমরা একটা সফলতার খবর আপনাদের দিতে পারব।’

ইউ পার্লামেন্টের মন্তব্য অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল

সম্প্রতি বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইউ) পার্লামেন্টের ‘প্রকৃত বিরোধী দলের সঙ্গে প্রকৃত সংলাপ’ মন্তব্যের বিষয়ে ইনু বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টের মন্তব্য দুঃখজনক। এটা আমাদের নির্বাচিত সরকার ও সংসদের প্রতি সম্মানজনক নয় এবং দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল বলে আমি মনে করি।’

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় আমরাই যথেষ্ট

বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদির কাছে আবেদন জানিয়ে বলা হয়েছে- বাংলাদেশে তারা (সংখ্যালঘুরা) নিরাপদ নয়। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোদীকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে- ভারতের সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত এ ধরনের খবরের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘১৬ কোটি মানুষের সঙ্গে আমরা সংখ্যালঘুদেরও নিরাপত্তা বিধান করে থাকি। বাংলাদেশে ২০ হাজার মন্দির রয়েছে। আমরা নিরাপত্তা বিধান করতে পেরেছি বলেই এ সব মন্দিরে কোন আক্রমণ হচ্ছে না।’

সরকারকে বিব্রত করার জন্য কতিপয় জঙ্গিবাদীরা কতিপয় সংখ্যালঘুর উপর আক্রমণ করছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হওয়ার মতো কোন ঘটনা ঘটেনি কিন্তু।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিধান করার জন্য বাইরের কোন রাষ্ট্র নায়কের কাছে আর্জি করার প্রয়োজন নেই। আমরাই যথেষ্ট। সরকার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পক্ষে।’

তনু হত্যারে বিষয়ে মন্তব্য নেই তথ্যমন্ত্রীর

তনু হত্যার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না কেন- জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটা বিচারাধীন অবস্থায় আছে, তদন্তের মধ্যে আছে। এ ব্যাপারে আমি মন্তব্য করতে চাই না। তবে আমরা আশা করছি এ ব্যাপারে নিষ্পত্তি হবে।’

আমার দিন শেষ, মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই

কাফনের কাপড় পাঠয়ে হত্যার হুমকির বিষয়ে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘যারা হুমকি দিচ্ছে তারা বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে খবর তৈরির চেষ্টা করছে। আমি একাত্তরে যুদ্ধ করেছি, কর্নেল তাহেরকে সাথে নিয়ে সিপাহী বিদ্রোহ করেছি, ৫ বছর জিয়ার কারাগারে ছিলাম। বেশ কয়েক বার আমি মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। আমার বয়স প্রায় সত্তরের কোঠায়, আমার দিন শেষ। এখানে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমি যে কয় দিন বাঁচি, মিতু পুরোহিতদের মতো সাধারণ নাগরিকরা যাতে মারা না যায়, তার ব্যবস্থা করে দেব। হায়াত-মউত আল্লাহর হাতে। যারা আমার মৃত্যুর দিনক্ষণ ঠিক করে দিচ্ছেন, তারা খোদা-তায়ালার উপর খবরদারি করছেন। যে দিন আমার মৃত্যু লেখা আছে সেদিনই আমারা মৃত্যু হবে। জঙ্গিদের হাতে মৃত্যু থাকলে আমি তা ঠেকাতে পারব না। তবে সাবধান থাকা দরকার, আমি সাবধান আছি।’

এখন/এসএস