৯০ ভাগই অবৈধ রিক্সা, রাজস্ব ক্ষতি বছরে ৯ কোটি

1373

রাজধানীতে চলাচলকারী রিকশার আনুমানিক সংখ্যা ১০ লাখ। এরমধ্যে নিবন্ধিত রিকশার পরিমান ৭৯ হাজার ৫৪৭টি। বাকি রিকশাগুলোর সবাই অবৈধ। বৈধ রিক্সা নবায়ন থেকে সরকার বছরে ১ কোটি টাকা পায়। সে হিসাবে ৯০ভাগ অবৈধ রিক্সা থাকায় ৯ কোটি টাকা রাজস্ব হারাতে হচ্ছে। অবৈধ রিক্সাগুলো বিভিন্ন সংগঠন ও সমিতির নামে রাজধানী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিবন্ধিত রিকশা তিন বছর পর পর নবায়ন করতে হয়। একটি রিকশার নিবন্ধন নবায়নয় ফি সবমিলিয়ে ৩৩০ টাকা। এরমধ্যে সরকার নির্ধারিত ফি ১০০ টাকা। বাকি টাকা নেওয়া হয় রিকশার মেরামত ব্যয়ের অংশ হিসেবে। এ নিবন্ধন নবায়ন থেকে সরকার প্রতিবছর রাজস্ব পায় ১ কোটি টাকা। সে হিসেবে রাজধানীতে চলাচল করা সব রিকশা নিবন্ধিত হলে এ খাত থেকে সরকারের বছরে আরও প্রায় ১০ কোটি টাকা রাজস্ব পেতো। একই সঙ্গে এগুলো নিবন্ধনের আওতায় আনা গেলে সিটি করপোরেশনের নিজস্ব কর্মী বাহিনীর একটা অংশের ভাতা এই রাজস্ব আয় থেকেই দেওয়া সম্ভব।
জানা গেছে, সিটি করপোরেশন ভাগ হলেও রিকশার লাইসেন্স নবায়নটা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনই করে আসছে। দুই সিটি করপোরেশন ভাগ হওয়ার সময় অভ্যন্তরিণ সম্পদ, সীমানা সব ভাগ হলেও রিকশার লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে কোনো ভাগ হয়নি। তবে চলতি অর্থ বছরে উত্তর সিটি করপোরেশন রিকশার লাইসেন্স নবায়ন করবে।

নতুন রিকশার লাইসেন্স প্রদান করা না হলেও রাজধানীতে অবৈধ রিকশার সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়তে থাকে। আর নতুন নিবন্ধন দেওয়া বন্ধ থাকায় দুই সিটি করপোরেশনসহ সরকারি কোনো সংস্থার কাছে রাজধানীতে কতগুলো অনিবন্ধিত রিকশা রয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই।

এ ব্যাপারে ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে একবারে রিকশা উঠিয়ে দেওয়া যাবে না। কারণ পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সহজলভ্য না। রিকশা উঠিয়ে দিলে যারা প্রতিনিয়ত রিকশায় চলাচল করেন তারা বিপদে পড়ে যাবেন।’

একই নাম্বার দিয়ে একাধিক রিক্সা রাজধানীতে চলাচলের কারন জানতে চাইলে বলেন ‘এমন নজির এখনো পাইনি তবে মাঝে মধ্যে সাড়াশি অভিযানের মাধ্যমে ভুয়া রেজিস্ট্রেশন আটক এবং একাধিক প্রমাণ পাওয়া গেলে সেই রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দেওয়া হবে।’

রাজধানীতে অবৈধ রিকশা বন্ধের জন্য কঠোর উদ্যোগ নিতে সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা বিবেচনাধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, রাজধানীকে যানজট মুক্ত রাখতে বেশকিছু সড়ক ও ভিআইপি সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

অবৈধ রিকশা চলে কার অধীনে
সিটি করপোরেশন বা অন্য কোনো সরকারি সংস্থার কাছ থেকে নিবন্ধন না নিলেও ২৫টি বেসরকারি ও রাজনৈতিক সংগঠনের অধীনে চলছে অবৈধ রিকশা। সংগঠনগুলো থেকে সদস্যপদ গ্রহণের মাধ্যমে মালিকদের রাজধানীতে নতুন রিকশা নামাতে হচ্ছে।

রাজধানীতে ছোট-বড় ২৫টি সংগঠনের মধ্যে অনিবন্ধিত রিকশার নেতৃত্ব দিচ্ছে প্রধানত ‘বাংলাদেশ রিকশা ও ভ্যান মালিক ফেডারেশন’, ‘জাতীয় রিকশা-ভ্যান শ্রমিক লীগ’ ও ‘বাংলাদেশ রিকশা মালিক লীগ’।

তবে বাংলাদেশ রিকশা ও ভ্যান মালিক ফেডারেশনের অধীনে কতগুলো রিকশা আছে তার সঠিক সংখ্যা জানা নেই খোদ সংগঠনের কর্তাব্যক্তিদের।
রাজধানীতে মোট অনিবন্ধিত রিকশার সংখ্যা নিয়েও এ সব সংগঠন দিচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য।

তাদের মতে, রাজধানীতে মোট অবৈধ রিকশার সংখ্যা প্রায় দুই লাখ, যা ২৫টি সংগঠনের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। আর তাদের দাবি, রাজধানীতে মাত্র ৫০ হাজার রিকশা চলছে বাংলাদেশ রিকশা ও ভ্যান মালিক ফেডারেশনের অধীনে।

রিকশা সরকারি কোনো সংস্থা বিশেষ করে সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে নিবন্ধন না পেয়ে বাংলাদেশ রিকশা ও ভ্যান মালিক ফেডারেশনের কাছ থেকে ‘অনুমোদন’ নিয়ে থাকে। নির্ধারিত ফি দিয়ে এই সমিতি থেকে বিক্রি করা হয় সিরিয়াল নম্বরসংবলিত নিবন্ধন কার্ড। আর এ সব কার্ড পেছনে লাগিয়েই চলছে অনিবন্ধিত রিকশাগুলো অবৈধ রিক্সাগুলো।

এখন/এসএস