হেরেও শেষ ষোলতে জাপান

672

পোল্যান্ড আগেই বাদ পড়েছিল। এই ম্যাচ ড্র করলেই জাপানের তৃতীয়বার বিশ্বকাপের শেষ ষোল নিশ্চিত, ভলগোগ্রাদে হিসেবটা ছিল এমন। কিন্তু পোল্যান্ডের কাছে ০-১ গোলে গ্রুপ এইচের শেষ ম্যাচটা হেরে গেল তারা। কিন্তু ওদিকে সামারায় এই গ্রুপে বৃহস্পতিবার একই সময়ে কলম্বিয়া ও সেনেগাল মুখোমুখি হয়েছিল। সেই ম্যাচে কলম্বিয়ার জয় ছাড়া বিকল্প ছিল না। আরো হিসেব ছিল। কলম্বিয়া ১-০ তে জিতে দুই জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে হলো গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। আর ফেয়ার প্লের হিসেবে মানে সহজ কথায় সেনেগালের চেয়ে কম কার্ড পাওয়ার হিসেবে জাপান আফ্রিকান দলের সমান ৪ পয়েন্ট নিয়েও নক আউট পর্বে গেল রানার্স আপ হয়ে। এবারের বিশ্বকাপে শেষ ষোলতে তাই আফ্রিকার কোনো দল থাকল না। সেনেগালের ৬ হলুদ কার্ড, জাপানের ৪; এটাই বুক ভাঙল আফ্রিকানদের, উৎসবে মাতাল এশিয়ানদের।

১৯৯৮ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পায় জাপান। সেই থেকে টানা বিশ্বকাপ খেলে যাচ্ছে তারা। একবারও মিস করেনি। এর মধ্যে ২০০২ জাপান-কোরিয়া বিশ্বকাপের সহ আয়োজক এই দলটি সেবার শেষ ষোলতে উঠেছিল। দ্বিতীয়বার তারা প্রথম রাউন্ড পেরিয়ে নক আউট পর্বে যায় ২০১০ বিশ্বকাপে। তবে দুবারই শেষ ষোলতে শেষ হয়েছে তাদের বিশ্বকাপ মিশন। ওই বাধা পার হওয়া হয়নি।

জাপানকে কৃতজ্ঞ থাকতে হবে কলম্বিয়ার কাছে। এই ম্যাচের আগে সেনেগাল ও জাপানের সমান ৪ পয়েন্ট ছিল। ম্যাচশেষেও তাই থাকল। দুই দলই ড্র করলে কলম্বিয়া বিদায় নিত। পোল্যান্ড বাদ পড়েছে আগেই। কলম্বিয়া খেলতে নেমেছিল ৩ পয়েন্ট নিয়ে। দুই ম্যাচেরই প্রথমার্ধ ছিল ০-০। এবং দুই ম্যাচে একটি করে গোল এসেছে দ্বিতীয়ার্ধে।

পোল্যান্ড আচমকাই ৫৯ মিনিটে জ্যান বেডনারেকের গোলে ১-০ তে লিড নিয়ে নিল। রাফায়েল কুরজায়া ফ্রি-কিক নিলেন। বক্সের মধ্যে পড়া বলকে ভলিতে জালে পাঠিয়ে বেডনারেক পেয়ে গেলেন তার প্রথম আন্তর্জাতিক গোল। ওদিকে কলম্বিয়া-সেনেগাল ম্যাচ তখনো গোলশূন্য। ২০০২ বিশ্বকাপের চমক সেনেগাল এবার ফিরে এসেছে। মনে হচ্ছিল তাদের দেখানো চমক অব্যাহত থাকবে।

প্রথমার্ধে সেনেগাল একটি পেনাল্টি পেয়েছিল। রেফারি তাই দিয়েছিলেন। কিন্তু ভিএআর জানিয়ে দিল, ওটা ফাউল নয়। তাই পেনাল্টি বাতিল। এই ম্যাচের প্রথমার্ধে গোল হলো না। যদিও আফ্রিকানরা অপেক্ষাকৃত ভালো খেলেছে। এটা কলম্বিয়ার অস্তিত্বের লড়াই। এই লড়াইয়ে তাদের সেরা খেলোয়াড় হামেস রদ্রিগেজ ইনজুরির কারণে আধ ঘণ্টার মধ্যেই মাঠ ছাড়লেন। তিনি গেল বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুট জিতেছিলেন।

আরো চাপে পড়া কলম্বিয়ানদের অবশ্য গেল বিশ্বকাপ প্রেরণা যোগাচ্ছিল। ১৯৯৮ সালের পর গতবারই এই টুর্নামেন্টে ফিরেছিল তারা। রদ্রিগেজ-রাদামেল ফ্যালকাওদের পারফরম্যান্সে উঠে গিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত। গতবার গ্রুপপর্বের সবগুলো ম্যাচই জিতেছিল। এবার প্রথম ম্যাচে জাপানের কাছে ২-১ গোলে হেরেই বিপদে পড়েছিল। সেই জাপানকে শেষে বাঁচিয়ে দিল তারাই! দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্য পোল্যান্ডকে ৩-০ গোলে হারিয়ে এই ম্যাচে ভাল কিছু করার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে দলটি।

সেই ভালোটা এক গোলে নির্ধারিত হলো। ফ্যালকাও একটা গোল মিস করলেন। কিন্তু ৭৪ মিনিটে লিড নিল কলম্বিয়া। কর্নার থেকে উড়ে আসা বলকে হেড করে ডিফেন্ডার ইয়েরি মিনা ১-০ গোলে এগিয়ে দিল কলম্বিয়াকে। এবং ওই গোলই তাদের শুধু জেতালো না গ্রুপ চ্যাম্পিয়নও করে দিল।

জাপান ও সেনেগালের পয়েন্ট, গোল ব্যবধান সমান হয়ে গেল। ২-২ গোলে তারা ড্র হয়েছিল এই দুই দলের ম্যাচ। সবকিছুই শেষে সমান। হলুদ কার্ডের হিসেবটা শেষে সামনে চলে আসে শেষ ষোলর নির্ধারক হিসেবে। ওখানেই কপাল পোড়ে সেনেগালের। কার্ড দেখার ক্ষেত্রে জাপানের চেয়ে এগিয়ে থাকায় দারুণ সম্ভাবনার রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকেই লড়াকু দলটির বিদায় হয়ে গেল। এশিয়ার একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে নক আউট পর্বে থাকল ব্লু সামুরাই নামে পরিচিত জাপান।