সোশ্যাল মিডিয়ার হুমকি | জর্জ সোরোস

1073
জর্জ সোরোস

সময়টা বিশ্ব ইতিহাসের একটি পীড়াদায়ক অধ্যায়। একনায়কতন্ত্রের ভিন্ন ভিন্ন রূপ, মাফিয়া রাষ্ট্রগুলোর ক্রমবর্ধমান উত্থান— উদাহরণ হিসেবে ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়ার কথা বলা যেতে পারে— সব মিলিয়ে ওপেন সোসাইটি বা মুক্ত সমাজ একটি সংকটকালের মধ্যে রয়েছে। এদিকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চাইছেন নিজের পছন্দসই একটি মাফিয়া ধাঁচের রাষ্ট্র গড়তে। কিন্তু সংবিধান, নিরপেক্ষ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আর সক্রিয় সুশীল সমাজের বাধার মুখে তিনি তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারছেন না।

এ পর্যায়ে কেবল মুক্ত সমাজের টিকে থাকাটাই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে না, বরং মানবসভ্যতার অস্তিত্ব এক ধরনের অনিশ্চিত ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের উত্থান আর ট্রাম্পের হাতে আমেরিকার শাসনভার এ অনিশ্চয়তাকে কয়েক ধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। ক্ষমতায় থাকার জন্য তারা পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি পর্যন্ত নিতে দারুণ উত্সুক, যার পরিণতি ভয়াবহ। গঠনমূলক উদ্দেশ্যে হোক অথবা ধ্বংসাত্মক, প্রাকৃতিক উৎস ব্যবহারে মানুষের ক্ষমতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পেলেও নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণের সামর্থ্য লোপ পাচ্ছে। বর্তমানে যা আরো অবনতির দিকে ধাবিত।

আমেরিকান ইন্টারনেট প্লাটফর্ম কোম্পানির উত্থান এবং তাদের একচেটিয়া আচরণ মার্কিন সরকারের অক্ষমতাগুলো তুলে ধরতে শক্তিশালী ভূমিকা রাখার পাশাপাশি স্বাধীন ও উদ্ভাবনী ভূমিকা পালন করছে। তবে ফেসবুক কিংবা গুগল এত বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে, তারা নতুন উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক ও বিভিন্ন ধরনের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও মাত্র কিছুদিন ধরে আমরা এসব সমস্যা সম্পর্কে কিছুটা অবগত হতে শুরু করেছি।

কোম্পানিগুলো তাদের প্রতিষ্ঠানের পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে আয় তুলে নিচ্ছে। খনিজ সম্পদ উত্তোলন ও তেল কোম্পানি যেমন তাদের কাঠামোগত পরিবেশকে কাজে লাগাচ্ছে, তেমনি সোস্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলো তাদের সামাজিক পরিবেশ ব্যবহার করছে; যা সুনির্দিষ্টভাবেই শঠতায় ভরা। কারণ কোম্পানিগুলো মানুষের অজান্তেই তাদের চিন্তাকে প্রভাবিত করতে সক্ষম। এমনকি গণতন্ত্রের কার্যকারিতা থেকে শুরু করে হস্তক্ষেপ করছে অখণ্ড নির্বাচন প্রক্রিয়ায়ও। কারণ ইন্টারনেট প্লাটফর্ম কোম্পানিগুলো হচ্ছে একটি নেটওয়ার্ক, যারা ক্রমবর্ধমান প্রান্তিক আয় উপভোগ করে। এর মাধ্যমে তাদের বিস্ময়কর প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়। কোম্পানিগুলোর এ প্রভাব সত্যিই অভূতপূর্ব ও রূপান্তরযোগ্য, কিন্তু একই সঙ্গে এটি অস্থায়ীও। বিলিয়নসংখ্যক ব্যবহারকারী জুটিয়ে নিতে ফেসবুকের আট বছরের বেশি সময় লেগেছে এবং এর অর্ধেক সময় লেগেছে ব্যবহারকারীর সংখ্যা দুই বিলিয়ন করতে। এ গতিতে অগ্রসর হতে থাকলে আগামী তিন বছরের ব্যবধানে এটি নতুন নতুন ব্যবহারকারীর সংকটে ভুগবে।

ডিজিটাল বিজ্ঞাপন থেকে আসা মোট রাজস্বের প্রায় অর্ধেকটাই কার্যকরভাবে ফেসবুক ও গুগলের নিয়ন্ত্রণে। নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে তাদের নেটওয়ার্কের গণ্ডি প্রসারিত করার পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের মনোযোগ ধরে রাখতে হবে। বর্তমানে ব্যবহারকারীদের একটি সুবিধাজনক প্লাটফর্ম প্রদানের মাধ্যমে তারা এটি করছে। তবে জেনে রাখবেন, ব্যবহারকারীরা যে প্লাটফর্মটি যত বেশি ব্যবহার করবে, ততই তারা ওই কোম্পানির মূল্য বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।

Facebook and Google

আরো একটি কারণও রয়েছে। তা হচ্ছে অনলাইন প্লাটফর্মগুলো যে ধরনের শর্ত আরোপ করুক না কেন, কনটেন্ট প্রভাইডাররা তা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে পারে না। আর এভাবেই তারা সোস্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোর লাভের পাল্লা ভারী করে দেয়।

বস্তুত, এ ধরনের কোম্পানিগুলোর এত বেশি লাভ হওয়ার কারণ বড় পরিসরে নিজ নিজ দায়বদ্ধতার জায়গাগুলোকে এড়িয়ে চলা এবং তাদের প্লাটফর্মের কনটেন্ট বাবদ কোনো ধরনের অর্থ প্রদান না করা। কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে প্রায়ই বলা হয় যে, তারা নিছক কিছু তথ্য ভাগাভাগি করছে।

প্রতিযোগিতা, নতুনত্ব এবং সুষ্ঠু ও অবাধ প্রবেশ সংরক্ষণের জন্য কোম্পানিগুলোর উচিত নিজেদের আরো কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা। অথচ সত্যিটা হচ্ছে, নিজেদের সর্বজনীন উপযোগিতা তৈরির মাধ্যমে তারা একচেটিয়া পরিবেশকদের মতোই আচরণ করে।

মূলত বিজ্ঞাপনদাতাই হচ্ছেন সোস্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোর আসল গ্রাহক। তবে নতুন যে ব্যবসায়িক মডেলটি ক্রমে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, তা শুধু বিজ্ঞাপনভিত্তিক নয়; বরং পণ্য বিক্রির পাশাপাশি তা সরাসরি ক্রেতার দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া এবং কোম্পানি নিয়ন্ত্রিত তথ্যকে কাজে লাগিয়ে প্রস্তাবিত পরিষেবাগুলোর বিক্রি বৃদ্ধির চেষ্টা। অতিরিক্ত লাভের আশায় বৈষম্যমূলক মূল্য ধার্যও করে তারা। এটি কোম্পানিগুলোর মুনাফার পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে, কিন্তু বিক্রি বৃদ্ধির প্রবণতা এবং বৈষম্যমূলক মূল্য নির্ধারণ অনেকটা নীরবেই বাজার অর্থনীতির ক্ষতিসাধন করছে বা ভিত্তি দুর্বল করে দিচ্ছে।

সোস্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলো নিজ উদ্দেশ্যে ব্যবহারকারীদের মনোযোগ আকর্ষণের মাধ্যমে একদিকে যেমন তাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে, তেমনি নিজেদের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য হাসিলে ব্যবহার করার পাশাপাশি সূক্ষ্ম প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ইচ্ছাপূর্বক আসক্তি তৈরি করছে; যা কিশোর-কিশোরীদের বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হচ্ছে।

ইন্টারনেট প্লাটফর্ম আর জুয়া কোম্পানির মধ্যে একটি মিল রয়েছে। গ্রাহককে ফাঁদে ফেলে সর্বস্ব লুফে নেয়া কিংবা তাকে সর্বস্বান্ত করার জন্য ক্যাসিনোগুলো নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে। একইভাবে ডিজিটাল যুগে মানুষের মনোযোগ পুঁজি করে তা ব্যবহার করা হচ্ছে, যা কোনোভাবেই এড়ানো বা প্রত্যাহার করা যায় না। এটি নিছক আসক্তি কিংবা চিত্তবিনোদনের বিষয় নয়; বরং সোস্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলো তাদের স্বায়ত্তশাসনের কাছে সাধারণ জনগণকে বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য করছে। আর এ ক্ষমতাটা মুষ্টিমেয় কিছু কোম্পানির হাতেই কেন্দ্রীভূত।

বর্তমান পরিস্থিতিতে জন স্টুয়ার্ট মিলের মনের অবাধ স্বাধীনতার মতবাদটি বহাল রাখা ও সুরক্ষার জন্য প্রয়োজন উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা। বলা হয়ে থাকে যে, যা হারায় তা চিরতরেই যায়। তাই ডিজিটাল যুগে বেড়ে ওঠা প্রজন্মের জন্য হারানো জিনিসগুলো পুনরুদ্ধার করাটাও সম্ভব হয়ে উঠবে না।

স্বভাবতই এর দূরবর্তী রাজনৈতিক ফলাফল রয়েছে। আর তা হলো, মানসিকভাবে পরাধীন মানুষ সহজেই প্রভাবিত হয়। ভাবার অবকাশ নেই যে, আশঙ্কাগুলো দূরভবিষ্যতের গর্ভে বেড়ে উঠছে। চক্র এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে ২০১৬ সালে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বড় রকমের ভূমিকা রাখতে সফল হয়েছে অদৃশ্য এ ছায়াগুলো।

দিগন্ত রেখায় উঁকি দিচ্ছে আরো কিছু অশনিসংকেত। কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বড় তথ্যপ্রযুক্তিগুলোর সমন্বিত জোট রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে করপোরেট নজরদারির একটি সম্প্রসারিত উন্নত ব্যবস্থা উদ্ঘাটনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যার ফলাফল হতে পারে ওয়েবের সমগ্রতাবাদী নিয়ন্ত্রণ; ‘অ্যানিমেল ফার্ম’খ্যাত সাহিত্যিক জর্জ অরওয়েলও বুঝি তা কল্পনা করতে পারবেন না।

রাষ্ট্র ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এমন অসাধু পরিণয়ে আবদ্ধ হওয়া দেশের তালিকায় চীন ও রাশিয়াকে এগিয়ে রাখা যেতে পারে। চীনের আইটি কোম্পানিগুলো কোনো অংশেই যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় কম নয়। তাছাড়া প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের পূর্ণ সমর্থন ও সুরক্ষার মধ্যে রয়েছে তারা। চীনের সরকার অন্ততপক্ষে নিজেদের ভূখণ্ডের মধ্যে তাদের পুরোপুরি সুরক্ষা দিতে সমর্থ।

এদিকে আমেরিকাভিত্তিক একচেটিয়া আইটি কোম্পানিগুলো বিশাল ও দ্রুতবর্ধমান এ বাজারে প্রবেশ করতে বিভিন্ন বিষয়ে ছাড় দিতে প্রস্তুত। আবার চীনের একনায়কতান্ত্রিক নেতারা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে আগ্রহী। কারণ নিজ দেশের জনগণের ওপর নিয়ন্ত্রণ অটুট রাখার জন্য উন্নততর প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি আমেরিকাসহ গোটা বিশ্বে নিজেদের শক্তি ও প্রভাবকে তারা আরো বেশি ছড়িয়ে দিতে চায়।

কিছু প্রযুক্তি প্লাটফর্মের একচেটিয়া কর্তৃত্ব এক ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি করছে, বর্তমানে এ ধারণা মোটামুটি স্বীকৃত। তাছাড়া হাতেগোনা কয়েক ব্যক্তির মধ্যে মালিকানা ভাগাভাগির বিষয়টি যেমন এখানে কলকাঠি নাড়ছে, তেমনি আইটি জায়ান্টদের অদ্ভুত সব পদাধিকার বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। এ অবস্থায় পরস্পরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হওয়ার সময়ও কোম্পানিগুলো একচেটিয়া শক্তি অর্জন করছে। তাছাড়া নতুন স্টার্টআপ কোম্পানি, যারা কিনা ভবিষ্যতে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে, এগুলোকে গলাধঃকরণের জন্য তারা যথেষ্ট শক্তিশালী। একে অন্যের সাম্রাজ্য দখলের জন্যও তাদের যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ রয়েছে।

প্রযুক্তি জায়ান্ট এসব প্লাটফর্মের মালিকরা নিজেদের বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অধিপতি হিসেবে জ্ঞান করেন। কার্যত তারা তাদের কর্তৃত্বপূর্ণ অবস্থানের দাস। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, যেমন চালকবিহীন গাড়ি— এ নতুন ধরনের উদ্ভাবনের বিপরীতে তারা মূলত এক ধরনের অস্তিত্ববাদী লড়াইয়ে নিযুক্ত।

এ ধরনের উদ্ভাবনের ফলে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাবে কিনা, তা নির্ভর করে একটি দেশের সরকারের নীতির ওপর। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বিশেষ করে নরডিক দেশগুলো তাদের লৌকিক নীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেক বেশি দূরদর্শী। কর্মক্ষেত্র নয়, তারা তাদের কর্মীদের সুরক্ষা দেয়। কর্মীদের অবসরে যাওয়া বা কাজ হারানো শ্রমিকদের প্রশিক্ষিত করতে তারা বরং অর্থ প্রদানে ইচ্ছুক। বিষয়টি আমেরিকার তুলনায় নরডিক দেশগুলোর শ্রমিকদের সার্বিক নিরাপত্তা বোধ তৈরির পাশাপাশি প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের পক্ষে অনেক বেশি উৎসাহী করে তুলতে সমর্থ হয়েছে।

এদিকে নিজেদের কর্মফলের পরিণাম থেকে সমাজকে সুরক্ষা প্রদানের ইচ্ছা বা অনুরাগ কোনোটাই নেই ইন্টারনেটভিত্তিক এসব একচেটিয়া অধিপতির। এমন আচরণের কারণে তারা রীতিমতো জনসাধারণের ভীতিতে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থা থেকে সমাজকে সামলে রাখা নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। যদিও আমেরিকার নিয়ন্ত্রকরা এমন একচেটিয়া নীতির রাজনৈতিক প্রভাব মোকাবেলার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। এক্ষেত্রে ইইউ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। কারণ তাদের নিজেদের দেশে এ ধরনের কোনো প্রযুক্তি জায়ান্ট গড়ে ওঠেনি।

ইইউর কাছে একচেটিয়া শক্তির ব্যাখ্যাটাও ভিন্ন। আমেরিকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থা প্রাথমিকভাবে অধিগ্রহণ দ্বারা সৃষ্ট একচেটিয়াত্বর গুরুত্ব দেয়, ইউরোপীয় আইন নির্বিশেষে একচেটিয়া ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে শক্তি অর্জনের প্রক্রিয়াকে প্রতিহত করে। কারণ ইউরোপের গোপনীয়তা ও তথ্য সুরক্ষা আইন আমেরিকার চেয়ে ঢের বেশি শক্তিশালী।

এদিকে আবার আমেরিকান আইন অদ্ভুত একটি মতবাদ গ্রহণ করেছে, যা সেবা প্রদানের বিপরীতে প্রদেয় মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে গ্রাহককে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যদিও এটি প্রমাণ করা অসম্ভব। বেশির ভাগ বড় ইন্টারনেট প্লাটফর্মের পক্ষ থেকে দেখানো হয়, অধিকাংশ পরিষেবাই তারা বিনামূল্যে জোগান দিয়ে যাচ্ছে। অথচ প্রযুক্তি প্লাটফর্মগুলো ব্যবহারকারীদের থেকে মূল্যবান যে তথ্য সংগ্রহ করছে, তা ওই মতবাদের আওতায় বিবেচনার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।

এ পর্যায়ে ইইউর কম্পিটিশন-বিষয়ক কমিশনার মার্গারেট ওয়েস্টগারকে ইউরোপীয় দৃষ্টিভঙ্গির পক্ষে চ্যাম্পিয়ন বলা যায়। গুগলের বিরুদ্ধে একটি মামলার নিষ্পত্তিতে সাত বছর লাগলেও রায়ের সফলতার সূত্র ধরে প্রবিধান প্রবর্তন দ্রুততর হয়েছে (গুগল তাদের নিজেদের সার্চ ইঞ্জিনের সার্চ ফলাফলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় নিজের শপিং সার্ভিসকে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছিল। এ অভিযোগ প্রমাণ হলে সার্চ রেজাল্টে জালিয়াতির মামলায় গুগলকে ২৭০ কোটি মার্কিন ডলার জরিমানা করেছে ইইউর দায়িত্বপ্রাপ্ত কম্পিটিশন কমিশন)। এ ধরনের কাজের জন্য মার্গারেট ওয়েস্টগারকে ধন্যবাদ। কারণ ইউরোপ কর্তৃক গৃহীত এ উদ্যোগ আমেরিকার দৃষ্টিভঙ্গিতেও এক ধরনের প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।

আমেরিকান ইন্টারনেট কোম্পানির বৈশ্বিক আধিপত্যের পতন নেহাতই সময়ের ব্যাপার মাত্র। আর এক্ষেত্রে মার্গারেট ওয়েস্টগার কর্তৃক প্রবর্তিত প্রবিধান ও প্রদানযোগ্য করনীতিই তাদের ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

লেখক: সোরোস ফান্ড ম্যানেজমেন্ট ও ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান

[স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট ২০১৮, ভাষান্তর: রুহিনা ফেরদৌস, সৌজন্যে: বণিক বার্তা]