সেমিফাইনালে চোখ আওয়ামী লীগের

629

টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে হ্যাটট্রিক জয়ের মধ্য দিয়ে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে কেন্দ্রীয়-তৃণমূল নেতা এবং সমর্থকরা। তাই ফাইনালের আগে চার সিটি নির্বাচন অর্থাৎ সেমিফাইনালে চোখ এখন আওয়ামী লীগ’র।

নৌকা প্রতীকে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চার সিটিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরাও। রাজধানীর ধানমন্ডিতে সোমবার (১৮ জুন) দলের সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ফের বৈঠকে বসবে আওয়ামী লীগ।

বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীন দলের নেতারা ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনকে ‘ফাইনাল’ এবং সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ‘সেমিফাইনাল’ খেলা উল্লেখ করে বক্তব্য রাখছে। জানাচ্ছেন তাদের আমলে উন্ননের অগ্রগতি এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা। জনগণকে সতর্ক করছেন, “বিএনপি-জামায়াত আগামী নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের দল। সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার সরকারের অধীনেই বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। বিজয়ের মাসে হবে নির্বাচনী ফাইনাল খেলা- তাতে আওয়ামী লীগই জিতবে”।

বর্তমান সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছিল ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি, সে অনুযায়ী আগামী ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি ৫ বছর পূর্ণ হবে। সংবিধান অনুযায়ী, এর ৯০ দিন আগে অর্থাৎ ২৯ অক্টোবর থেকে যে কোনো দিন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

আওয়ামী লীগ মনে করছে, বিজয়ের মাস ডিসেম্বরই নির্বাচনের উপযুক্ত সময়। ২০০৮ এবং ২০১৪ সালেও ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন চেয়েছিল আওয়ামী লীগ। যদিও বিএনপিকে নির্বাচনে আনার চেষ্টায় এবং সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন করতে হয়।

আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে গত ১৭ এপ্রিল রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, “ভোটের আমেজে বিএনপি’র কোনো আন্দোলন কাজে আসবে না। আগামী সংসদ নির্বাচনের ফাইনালে বিএনপিকে হারিয়ে আওয়ামী লীগ জয়ী হবে”।

নেতারা মনে করছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। এতেই স্পষ্ট হয়ে যাবে, দেশে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা। তাই চার সিটির নির্বাচন আমাদের জন্য মহা চ্যালেঞ্জ। কারণ সামনে চার সিটি নির্বাচনের জয়-পরাজয় আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। সংবিধান অনুযায়ী, অক্টোবরে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে ডিসেম্বরের যে কোনো দিন জাতীয় নির্বাচন হবে।

সোমবার (১৮ জুন) থেকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হবে। সামনে থাকছে আরো তিন সিটি নির্বাচনে। এই পরিস্থিতিতে দলের অবস্থান তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক সারাবাংলাকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে এসব নির্বাচনকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। ইতোমধ্যে আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দলের সভপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গাজীপুর জেলা ও মহানগরের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে আগামীকাল (সোমবার) সকাল ১১টায় বৈঠক হবে।

গত ১৫ মে ভোটের দিন ধরে ৩১ মার্চ গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়নের ছয়টি মৌজা গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় অন্তর্ভুক্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ রিট করেন চেয়ারম্যান এবিএম আজহারুল ইসলাম সুরুজ। ওই রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে ৬ মে নির্বাচন ৩ মাসের জন্য স্থগিত করেন হাই কোর্ট ডিভিশান। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দুই মেয়র প্রার্থীর আবেদন এবং ইসি’র লিভ টু আপিলের নিষ্পত্তি করে আপীল বিভাগ। একইসঙ্গে স্থগিতাদেশ বাতিল করে ২৮ জুনের মধ্যে ভোট করতে নির্দেশ দেন ইসিকে।

ইতোমধ্যে ইসি আগামী ২৬ জুন গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ভোট গ্রহণের নতুন তারিখ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ১৭ জুন পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণা চালানোর ব্যাপারে বিধি-নিষেধ ছিল। ১৮ জুন থেকে প্রচারণা শুরু হবে।

এই নিয়ে রোববার (১৭ জুন) সকালে ঘরোয়া বৈঠকে বসেন আওয়ামী লীগের তিন নেতা। এরা হলেন, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং কার্যনির্বাহী সদস্য এসএম কামাল হোসেন। তবে বৈঠকের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি কেউই।

এদিকে ১৩ জুন আওয়ামী লীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিন সিটি করপোরেশন, উপ-নির্বাচন এবং উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ফরম সংগ্রহের আহ্বান জানানো হয়েছিল। রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আগামী ১৮, ১৯, ২০ জুন সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে মনোনয়নের আবেদনপত্র সংগ্রহ এবং আগামী ২১ জুন (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে জমা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। ২২ জুন বিকেল ৫টায় গণভবনে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে।