রাজনৈতিক সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে—ইখতিয়ার রহমান কবির

2058

ইখতিয়ার রহমান কবির।পারিবারিক ভাবেই ছিলেই জাতীয়তাবাদী দলের সমর্থক। এখন নিজেই দিচ্ছেন নেতৃত্ব। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি তিনি। এফ, রহমান হল ছাত্রদল এর যুগ্ম সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন তিনি। সমসাময়িক বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলেছেন এখন-এর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ওয়ালী উল্লাহ খান।

এখন: রাজনীতিতে আসার শুরুটা কীভাবে?

ইখতিয়ার রহমান কবির: শুরুটা পারিবারিকভাবেই হয়েছিল। বাবা বিএনপি করতেন। তারপর ১৯৯৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর বড় ভাইদের সাথে রাজনীতিতে যুক্ত হই। এরপর হলে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দায়িত্ব পালন করেছি। এক পর্যায়ে কেন্দ্রে চলে আসি।

এখন: ছাত্রদলের মাঠে-ময়দানে যে পরিমান ভূমিকা রাখা দরকার তা রাখতে পারে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

ইখতিয়ার রহমান কবির: পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে যে পরিমান ভূমিকা রাখার প্রয়োজন তা ছাত্রদল রাখতে পারে না-একথা আমিও স্বীকার করি। ইতোঃপূর্বে দেশে গুম-খুনের রাজনীতি ছিল না। কিন্তু এখন রাস্তায় নামলে যেভাবে পুলিশ দ্বারা হয়রানি, গ্রেফতারের স্বীকার হয় এবং বর্তমান সময়ে নেতাকর্মীরা যেভাবে গুম খুনের স্বীকার হয়েছেন তাতে এখন আর আগের মত করে ভূমিকা পালন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তারপরও ছাত্রদল সাধ্যমত মাঠে ময়দানে থেকে আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে।

এখন: শোনা যায় গ্রুপিং এর কারনে ছাত্রদল সম্পূর্ণ শক্তি প্রয়োগে ব্যর্থ হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?

ইখতিয়ার রহমান কবির: গ্রুপিং আসলে তেমন কিছুই না। প্রতিযোগিতা সব জায়গাতেই থাকে, তেমনি একটা দলে প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে, তবে এমন নয় যে তা খুব প্রকট। আগে যতটুকু বিশৃঙ্খলা ছিল এখন তা খুবই সামান্য। তবে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বলে সবাই নতুন কমিটি চাই, নেতা হতে চাই। এ কারণে একটু প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে।

ekhtiar3

এখন: ছাত্রলীগ তো তাদের সংগঠন করার ক্ষেত্রে বয়স বা বিবাহিতের একটা সীমাবদ্ধতা তৈরী করেছে। তবে ছাত্রদলের অনেক নেতা-কর্মী অছাত্র বা বিবাহিত। এ বিষয়ে কী বলবেন?

ইখতিয়ার রহমান কবির: হ্যাঁ, এটা হওয়া উচিত। কিন্তু পরিস্থিতির বিবেচনায় দেখা যায় ২০১০-১১ সালে পর থেকে আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেতে পারিনি। ফলে অনেক ছাত্র পরিস্থিতির স্বীকারে প্রকাশ্যে ছাত্রদলে আসতে পারছে না। ফলে সম্পূর্ণ ছাত্র দিয়ে কমিটি তৈরী করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমি মনে করি এর একটা নির্দিষ্টতা থাকা উচিত।

এখন: ছাত্র সংগঠন হিসেবে ছাত্রদলের যে মূল কাজ, ছাত্রদের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করা। সেক্ষেত্রে ছাত্রদল অনেক পিছিয়ে…

ইখতিয়ার রহমান কবির: ছাত্র সংগঠনের মূল জায়গা তো ক্যাম্পাস। আপনি যদি সেই ক্যাম্পাসে না-ই যেতে পারেন তবে কী ভাবে অধিকার আদায়ে আন্দোলন করা যাবে! তারপরও দূর থেকে যতটুকু করা যায় ছাত্রদল তা করে যাচ্ছে।

এখন: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? আগামীতেও কি ছাত্রদলেই থাকবেন ?

ইখতিয়ার রহমান কবির: এটা দলের সিদ্ধান্ত। দল যদি রাখে তাহলে থাকবো। আর যদি অন্যদেরকে আনে তাহলে আমরা থাকবো না।

এখন: খালেদা জিয়ার যে মামলা চলছে, এটার ভবিষ্যৎ কী মনে করেন?

ইখতিয়ার রহমান কবির: বেগম জিয়াকে যদি সরকার জেলে পাঠায় তাহলে আামাদেরকে আন্দোলনে নামতে হবে। আর সেটা তো হবে আমাদের অস্তিত্ব টিকানোর আন্দোলন। সে আন্দোলনে অন্যান্য সব সময়ের মতই ছাত্রদলও মাঠে ময়দানে যা যা করা দরকার তার সবই করবে।

ekhtiar2

এখন: দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

ইখতিয়ার রহমান কবির: দেশে তো রাজনীতি করার কোন পরিবেশই বর্তমানে নেই। একদলীয় স্বৈরাচারী শাসন চলছে।

এখন: এর থেকে উত্তরনের উপায় আছে কী?

ইখতিয়ার রহমান কবির: উপায় তো আছেই। জেনারেল এরশাদও তো স্বৈরাচার চালু করেছিলেন, তারা তো রেহাই পায় নাই। আশা করি জনগণের বিরোধী কোন শাসন এদেশে স্থায়ী হবে না।

এখন: বর্তমান তরুণরা তো ছাত্র সংগঠনে আসতে চাই না। এটা কি ছাত্র সংগঠনগুলোর ব্যর্থতা?

ইখতিয়ার রহমান কবির: আমাদের ব্যর্থতা তো কিছু আছেই। তবে দেশে রাজনীতির সুস্থ পরিবেশ না থাকায় ছাত্ররা রাজনীতিতে আসতে অনীহা প্রকাশ করে এবং তাদের মাঝে রাজনীতি সম্পর্কে খারাপ ধারণার জন্ম নিয়েছে।

এখন: ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আপনার প্রত্যাশা কী?

ইখতিয়ার রহমান কবির: আমার ব্যক্তিগত প্রত্যাশা হলো এ সরকারের বিরুদ্ধে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ছাত্র নেতৃত্ব বিকশিত হওয়ার জন্য ডাকসু নির্বাচন এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্বাচন দিতে হবে। তবে অবশ্যই তার আগে রাজনৈতিক সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।