১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বাংলার ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কজনক ঘটনার পর এদেশের বুকে নেমে আসে অন্ধকারময় এক দুঃসময়ের। জলপাই রঙের ট্যাংকের ঝনঝনানি আর স্বৈরশাসনে জর্জরিত তখন এদেশের মানুষ। সেই অন্ধকারাছন্ন সময়ে কবি বলেছেন, ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ’।
১৯৮১ সালের ১৭ই মে। জ্যৈষ্ঠের এক বৃষ্টিময় দিন। তিনি তার বাবার স্বাধীন করা দেশে প্রিয় মাতৃভূমিতে পদার্পণ করলেন। এয়ারপোর্টে হাজার হাজার মানুষ অশ্রুসজল চোখে আর রিক্ত হাতে তাকে স্বাগত জানালো। সেদিন চোখের পানি আর বৃষ্টি একাকার হয়ে মাটিতে গড়িয়ে পড়েছিল।
তিনি কথা বলতে পারছিলেন না। শুধুই অঝর ধারায় কেঁদে চলেছেন। যে পিতা পরম মমতায় তাকে এতদিন বুকে আগলে রেখেছিলেন। জার্মানিতে যাওয়ার দিনে অশ্রুসজল নয়ণে বিদায় দিয়েছিলেন। সেই পিতা আজ নেই।
যে মাতা সারাটা জীবন মায়ার বাঁধনে বেঁধে ছিলেন। বাবার অনুপস্থিতি বুঝতে দেন নি কখনো। জার্মানিতে যাওয়ার দিন প্রিয় খাবার রান্না করে খাইয়েছেন। সেই মমতাময়ী মাও আজ নেই।
যে ছোট্ট ভাইটি সারাদিন বুবু বুবু বলে অস্থির করে ফেলত। টইটই করে সাইকেলে করে ঘুরে ফিরে এসে কোলের মধ্যে ঝাপিয়ে পরত। সেই আদরের ছোট্ট সোনার টুকরা ভাই টি পর্যন্ত আজ নেই।
কেউ নেই। কোন প্রিয় মুখ আজ এয়ারপোর্টে আসে নি। কোন প্রিয় কণ্ঠের আওয়াজ আজ বলে নি; হাসু, কেমন আছিস মা?
সাজানো -গোছানো সংসারটি আজ নেই। বাবার প্রিয় চুরুট আজ কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। মায়ের যত্নের পানদানিটিও আজ অবহেলায় আবর্জনায় ঘরের কোণে পরে আছে। ছোট্ট রাসেলের সেই টইটই করে ঘুরে বেড়ানোর সাইকেলটি আজ কোথাও নেই।
সব হারিয়ে গেছে। সব শেষ হয়ে গেছে। সব যেন কোথায় মিলিয়ে গেছে। কেউ জানে না তাদের খবর।
১৯৮১ সালের ১৭ই মে শেখ হাসিনা যখন এদেশে এসেছিলেন তিনি সারাক্ষণ কেঁদেছেন।তার সাথে সেদিন জ্যৈষ্ঠের খরতাপ আকাশও কেঁদেছে। এয়ারপোর্টে অভ্যর্থনা জানাতে আসা সকল মানুষ হু হু করে কেঁদেছে…!
তবুও এই কাঁদা ছিল আনন্দের। বেদনাবিধুর। বাংলাদেশের মানুষের জন্য ছিল চরম আকাঙ্খিত। শেখ হাসিনার আগমনে নিভে যাওয়া প্রদীপ আবার জ্বলে উঠেছিল। জ্বেলেছিল আলো।
যে আলো আজও দীপ্তিমান।
লেখক – সহ-সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ