মেয়র চলে যেতেই ফের দখল ফুটপাত

1258

এখন রিপোর্ট।।

তোফাজ্জল হোসেন মোল্লা প্রায় ত্রিশ বছর ধরে হকারি করেন গুলিস্তান এলাকায়। কিন্তু বৃহস্পতিবার তার এই ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ে। মেয়র গুলিস্তান এলাকা পরিদর্শনে আসবেন, তাই পুলিশ কাউকে সড়কে বসতে দিচ্ছে না। ক্ষোভ প্রকাশ করে তোফাজ্জল বললেন- রাস্তায় বইসা ব্যবসা করি। মাঝে মধ্যে উচ্ছেদ হই। আসলে এগুলা আমাগো অভ্যাস হইয়া গেছে। আমরা এখন আর উচ্ছেদ-রে ভয় পাই না। তার মতে, মেয়র চলে যাওয়ার পর সব ঠিক হয়ে যাবে।

এমনই ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে। মেয়র সাঈদ খোকন আসবেন বলে পালিয়ে গেছে সব হকাররা। আবার মেয়র চলে যেতেই ফের দখল হয়ে গেছে ফুটপাত। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তানের দৃশ্যপট পাল্টে যায়। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে কোনও হকার নেই। এমনকি গুলিস্তান কমপ্লেক্স থেকে গোলাপ শাহ মাজার পর্যন্ত সড়কও হকারশূন্য। যানবাহন দ্রুত চলাচল করছে। তবে ফুটপাতগুলো যথারীতি হকারদের দখলেই আছে। যেসব পথচারী ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে পারছেন না তারা প্রধান সড়কের এক পাশ দিয়ে হাঁটছেন।

বিকাল তিনটায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন গুলিস্তান এলেন। এর কয়েক মিনিট আগে এলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। গুলিস্তান কমপ্লেক্স থেকে গোলাপ শাহ মাজার পর্যন্ত সড়কটিকে হকারমুক্ত করায় অধীনস্থ কর্মকর্তাদের সাধুবাদ জানিয়ে পুলিশ কমিশনার বললেন- সড়ক থেকে শুধু হকার সরালেই চলবে না, সড়কটি দিয়ে যেন সবসময় যানবাহন চলে সে ব্যবস্থাও করতে হবে। যানবাহন চললে হকাররা সড়কের ওপর আসতে পারবে না।

এরপর মেয়র ও পুলিশ কমিশনার গোলাপ শাহ মাজার থেকে পায়ে হেঁটে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের কাছে আহাদ পুলিশ বক্সের সামনে যান। এ সময় তারা সড়কের ওপর কোনও হকার ও যানজট না থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং সবশেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

মেয়র বলেন, বর্তমানে গুলিস্তান এলাকার রাস্তাঘাট হকারমুক্ত থাকায় নগরবাসী স্বস্তির সঙ্গে চলাফেরা করতে পারছেন। পবিত্র রমজানের সময় নগরবাসী যেন স্বস্তির সঙ্গে চলাফেরা করাসহ কেনাকাটা করতে পারেন এবং যানবাহন চলাচল যেন বিঘ্নিত না হয় সেজন্য গুলিস্তান এলাকার রাস্তা যেকোনও মূল্যে হকারমুক্ত রাখা হবে। এজন্য তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা কামনা করেন।

পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া গুলিস্তান এলাকায় যানবাহন ও জনসাধারণের সহজ চলাচল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পুলিশি কঠোর নজরদারি অব্যাহত রাখবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

মেয়র ও পুলিশ কমিশনার চলে যাওয়ার পর গুলিস্তানের অবস্থা কেমন হয় সেটা দেখতে এই প্রতিবেদক বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন। দেখা গেলো বিকাল সাড়ে তিনটায় মেয়র চলে যাওয়ার পর পরই হকাররা আবার সড়কে চলে এসেছে। আন্ডার পাসের পশ্চিম প্রবেশপথ সংলগ্ন সড়কে টাকা পরিবর্তনকারী হকাররা কাঁধে ব্যাগ নিয়ে সড়কে বসে গেছে। গোলাপ শাহ মাজার থেকে গুলিস্তান কমপ্লেক্স পর্যন্ত সড়কের একধারে এসে জড়ো হয়েছে ফল, জুতাসহ বিভিন্ন পণ্যের হকাররা।

তখন আবার দেখা মিলল হকার তোফাজ্জল হোসেন মোল্লার। পরিস্থিতি সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই তিনি বলেন- কইছিলাম না, সব ঠিক অইয়া যাইব। দেখলেন তো? তোফাজ্জল বলেন, সামনে ঈদ। হকাররা ব্যবসা করতে না পারলে খাইব কী?

অন্যদিকে মেয়র সাঈদ খোকন চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর হকাররা আবারও সড়কে বসে যায়। তখন বাধা দেয় সড়ক সংলগ্ন ঢাকা ট্রেড সেন্টারের দোকান মালিকরা। এর ফলে হকার ও দোকান মালিকদের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এতে আশপাশের সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায় পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগ জানিয়েছে, সম্প্রতি জরিপ চালিয়ে তারা দুই হাজারের কিছু বেশি হকারের তালিকা তৈরি করেছেন। পুনর্বাসনের পর্যন্ত এদেরকে ফুটপাতে বসতে দেওয়া হচ্ছে। তবে কোনও হকারকে সড়কের ওপর বসতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।

এখন/এসএস