মুস্তাফিজ ও মুশফিকই বর্ষসেরা

1192

এখন রিপোর্ট।।

হাতে একটা চিরকুট, তাতে লেখা পাঠকের ভোটে ২০১৫ সালের বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদের নাম। তবে চিরকুট পড়ার আগে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব কুতুবউদ্দিন আহমেদ জানতে চাইলেন উপস্থিত দর্শকদের মতামতটাও। সমস্বরে উচ্চারিত হলো, ‘মুস্তাফিজ…।’

মুস্তাফিজুর রহমান: বর্ষসেরা ২০১৫দর্শকদের রায়ের সঙ্গে মিলে গেছে চিরকুটের নাম, মুস্তাফিজুর রহমান সেখানেও। গতকাল শুক্রবার হোটেল সোনারগাঁওয়ে রূপচাঁদা-প্রথম আলো বর্ষসেরা ক্রীড়া পুরস্কারে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন না ক্রিকেটের এই বিস্ময়বালক। আইপিএল-ক্লান্ত বাঁহাতি পেসার বিশ্রামে আছেন সাতক্ষীরার তেতুঁলিয়া গ্রামে নিজ বাড়িতে। তবে না থেকেও অনুষ্ঠানের অনেকটা আলোই কেড়ে নিলেন তিনি। বিচারকদের রায়েও ২০১৫ সালের বর্ষসেরা যে তিনিই! কুতুবউদ্দিন আহমেদ ও বিসিবির প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদের হাত থেকে মুস্তাফিজের দুটি পুরস্কারই নিয়েছেন তাঁর বড় ভাই মাফুজার রহমান।

জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবির সাবেক পরিচালক গাজী আশরাফ হোসেনের নেতৃত্বে এবারের বিচারক প্যানেলে ছিলেন গ্র্যান্ড মাস্টার নিয়াজ মোরশেদ, সাবেক অ্যাথলেট শামীমা সাত্তার মিমু, জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক জুয়েল রানা ও জাতীয় হকি দলের সাবেক খেলোয়াড় রফিকুল ইসলাম। কনা-কিশোরের গাওয়া থিম সংয়ের পরই স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্র। বক্তব্য রাখেন রূপচাঁদা-প্রথম আলো বর্ষসেরা ক্রীড়া পুরস্কারের পৃষ্ঠাপোষক বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডের বিক্রয় ও বিপনন প্রধান শোয়েব মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।

২০১৪ ও ২০১৫ সালের বর্ষসেরার পুরস্কার এবার এক সঙ্গে দেওয়া হয়েছে। ২০১৪-এর আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু। ২০১৫-এর আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের কিংবদন্তী অ্যাথলেট সুফিয়া খাতুনকে। তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক ইনাম আহমেদ ও প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান।

প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমটা ‘মুস্তাফিজময়’ হয়ে ওঠার আগে আরও অনেকের ওপরই গিয়ে পড়েছে আলো। ২০১৪ সালটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ভালো না গেলেও টেস্ট এবং ওয়ানডেতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছিলেন মুশফিক। বাংলাদেশ দলের টেস্ট অধিনায়ক সেটারই স্বীকৃতি পেয়েছেন সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের হাত থেকে ২০১৪ সালের বর্ষসেরার পুরস্কার নিয়ে।

ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে ঘিরে হলরুমের একটা অংশে তৈরি হয়েছিল ড্রেসিংরুমের আবহ। অনুষ্ঠান শুরুর অনেক আগে থেকেই সেখানে জমে ওঠে ক্রিকেটারদের আড্ডা। তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিম, সৌম্য সরকার, তাসকিন আহমেদ, তাইজুল ইসলাম, এনামুল হক, নুরুল হাসান, কামরুল ইসলাম, মেহরাব হোসেন জুনিয়রদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার জাভেদ ওমর, দুই কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও মিজানুর রহমান। হাবিবুল মুশফিকের নাম ঘোষণা করলে উল্লাস ধ্বনিটা সবচেয়ে বেশি উঠেছে হলরুমের ওই অংশ থেকেই।

আসলে দুই বছরের পুরস্কারজয়ীর বেশির ভাগই মিশে ছিলেন ক্রিকেটারদের ভিড়ে। ২০১৫-এর দুই রানারআপই ক্রিকেটার-তামিম ও মাহমুদউল্লাহ। সৌম্য হয়েছেন ২০১৫-এর বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রীড়াবিদ, তাইজুল ২০১৪-এর। এছাড়া ২০১৪-এর বর্ষসেরা নারী ক্রীড়াবিদও একজন ক্রিকেটার, সালমা খাতুন। তবে ২০১৫-এর বর্ষসেরা নারী ক্রীড়াবিদের পুরস্কারটা উঠেছে কমনওয়েলথ ভারোত্তলনে সোনা জয়ী মাবিয়া আক্তারের হাতে। ২০১৪-এর দুই বর্ষসেরা রানার আপের কেউই ক্রিকেটার নন। একজন জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম, অন্যজন কমনওয়েলথ গেমসে রূপা জয়ী জাতীয় শ্যুটার আব্দুল্লাহ হেল বাকি। দুজনের কেউই অবশ্য আসতে পারেননি অনুষ্ঠানে। তাজিকিস্তানে থাকা মামুনুলের হয়ে পুরস্কার নিয়েছে তাঁর বাবা নুরুল ইসলাম। বাকির পুরস্কার নিয়েছেন আরেক শ্যুটার আসিফ হোসেন খান। বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ ও আজীবন সম্মাননার পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্টের সঙ্গে ছিল দু লাখ টাকা এবং অন্য সব পুরস্কার হিসেবে ছিল ক্রেস্ট ও এক লাখ টাকা।