বাজেট জটিল, দাবির প্রতিফলন হয়নি : এফবিসিসিআই

1158

এখন রিপোর্ট ।।

নতুন অর্থবছরের (২০১৬-১৭) প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট আগের বাজেটগুলোর তুলনায় বেশ জটিল মন্তব্য করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমদ বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেটের সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে আগামী ৭ অথবা ৮ জুন এফবিসিসিআই’র পক্ষ থেকে বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।

তিনি বলেন, এ বারের বাজেট বিশাল। এ বিশাল বাজেটে করের আওতা না বাড়িয়েই আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এফবিসিসিআই’র পক্ষ থেকে বাজেটের জন্য ৭টি পয়েন্ট (প্রস্তাব) দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এখনো পর্যন্ত তার কোন প্রতিফল দেখতে পারিনি। অনেক অ্যাসোসিয়েশন ও ব্যবসায়ী সংগঠনের দাবির প্রতিফল বাজেটে ঘটেনি।

শুক্রবার (০৩ জুন) ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পর্যালোচনা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মাতলুব বলেন, বাজেট নিয়ে এফবিসিসিআই ৪ মাস ধরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে আলোচনা করেছে। আমরা লক্ষ্য করেছি বাজেটের আকার অনেক বড় হয়েছে। বাজেটের আকার বড় হওয়া মানেই রাজস্বের আকার বড় হবে। রাজস্বের আকার বড় হওয়া মানেই ব্যবসায়ীদের আরও টাকা দিতে হবে। আমরা টাকা দিতে প্রস্তুত। কিন্তু আমরা আমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকতে চাই।

অনেক ব্যবসা-বাণিজ্য হয়রানির জন্য বন্ধ হয়ে গেছে এমন মন্তব্য করে মাতলুব বলেন, এ বারের বাজেট বিশ্লেষণের জন্য আমাদের তিনটি টিম কাজ করছে। বাজেটে যে টি পয়েন্ট আমরা চেয়ে ছিলাম, সে টি পয়েন্টের প্রতিফলন আমরা এখনো খুঁজে পাইনি। বরঞ্চ সরকার কিভাবে আরও ট্যাক্স আদায় করা যায় এবং ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের উপর ট্যাক্স আদায়ের নতুন ফর্মুলা দিয়েছে। সেই ফর্মুলা এখন আমাদের খুঁজে খুঁজে বের করতে হচ্ছে ওনারা কিভাবে এগুলো অর্জন করতে চান। ফেডারেশন মনে করে কোন ভ্যাট বা ট্যাক্স অন্যায়ভাবে ব্যবসায়ীদের উপর চাপিয়ে দিলে, তা আদায় করা কঠিন হবে।

তিনি বলেন, এ বিশাল বাজেটকে পর্যালোচনার জন্য আমাদের আরও সময়ের প্রয়োজন আছে। কারণ কয়েকটি জায়গায় ভালো আছে, কয়েকটি জায়গায় খারাপ আছে। যেমন আমরা প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি জুয়েলারি সমিতি, হাইব্রিড গাড়ির আমদানিকারক, লোহা, ই-কমার্স, বেকারি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প যাদের আছে তাদের অনেক সমস্যা রয়ে গেছে। এটি বিশাল বাজেট, তাড়াহুড়া করে এর উপর প্রতিক্রিয়া দেওয়া সম্ভব না। ব্যবসায়ীদের জীবন-মরণ সমস্যা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। আমরা বুঝতে পারছি মানুষের মুখে যে হাসি দেখতে চাই, সে হাসিটা এখন দেখতে পারছি না। কি করলে সেই হাসিটা দেখতে পাওয়া যাবে, সেটিই এখন আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।

আগামীতে ব্যবসায়ীরা প্রাক-বাজেট আলোনায় নাও বসতে পারে এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে মাতলুব আহমদ বলেন, আমাদের ৪৮০টি অ্যাসোসিয়েশন রয়েছে, ৮০টি চেম্বার রয়েছে, জয়েন্ট চেম্বার রয়েছে। অনেক অ্যাসোসিয়েশন এ বাজেট গ্রাহণ করতে পারছে না। তারা আমাদের কাছে প্রতিক্রিয়া পাঠাতে চাচ্ছেন। আমরা ব্যবসায়ীদের কথা সরকারের কাছে তুলে ধরবো এবং আমরা ৪ মাস থেকে যে প্রস্তাবগুলো সরকারের কাছে দিয়েছিলাম, সেটা কতোটুকু সরকার নিয়েছে, কতোটুকু নেয়নি তাও তুলে ধরবো। তাহলে আগামী বাজেটে আমরা বাজেট মিটিং (সভা) করবো কি করবো না, সেটা নিয়েও আমাদের চিন্তা করতে হবে। আমরা বলে যাবো, আর ওনারা শুনবেন, কিন্তু বাজেটে কোন প্রতিফল দেখবো না তাহলে আমরা এতো সময় নষ্ট করতে যাবো কেন? এ সময়টা আমরা আমাদের ব্যবসার কাজে দিতে পারি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই’র প্রথম সহ-সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, পরিচালক হাবিবুল্লা ডন, হারুনর রশিদ, শামীম আহমেদ প্রমুখ।
সংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে পোশাক খাতের করপোরেট করহার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। অপরদিকে উৎস কর দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। উৎস কর দিতে মোট উৎপাদনের উপর। ১ শতাংশ উৎস কর ৫০ শতাংশ করপোরেট করের সমান। আমরা চাই শুধু মুনাফার উপর কর ধরা হোক। তা না হলে রফতানি আয়ের যে প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে, তা মুখ থুবড়ে পড়বে।

কালো টাকার বিষয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ফেডারেশন সব সময় কালো টাকার বিরুদ্ধে। তবে টাকা যদি দেশ থেকে পাচার হয়ে যায়, তাহলে টাকা দেশের ভেতর রাখার জন্য সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।