বইপ্রেমী এক মুসাফির

1712

হাসান ওয়ালী

ছোট্টবেলায় স্কুল তাকে টানতো না। ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়ে ইতি টানেন একাডেমিক শিক্ষার। তবে দিন রাত এক করে পড়তেন বই। বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কাজী নজরুল থেকে শুরু করে সব বিখ্যাত বই পড়েছেন কিশোরে। নজরুল ভক্ত আব্দুর রহমান মুসাফির ১৪ বছর বয়সেই লিখে ফেলেন প্রথম উপন্যাস।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ভাদকুড়া গ্রামের বড় বাড়ির ৬ ভাই ৪ বোনের মধ্যে দ্বিতীয় মুসাফির। পরিবার সাহিত্য অনুরাগী হলেও স্কুলে না যাওয়া মানতে পারেনি। আর তাই ১৫ বছর বয়সে ৬ মাস মুসাফিরের সাহিত্য চর্চা বন্ধ করে দেয় পরিবার। কিন্তু দমে যাননি স্বল্পভাষি মুসাফির। বইয়ের নেশা এমনভাবে আঁকড়ে ধরেছিলো, তিনি লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তেন। পড়ার প্রতি এতোটাই ভালোবাসা ছিলো তার, দিন-রাত পেরিয়ে গেলেও টের পেতেন না। কেউ তাড়া না দিলে বই থেকে মুখ তুলে তাকানোরও প্রয়োজন মনে করতেন না।

Musafirএকাডেমিক শিক্ষায় উদাসীনতা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচী শেষ করেছেন নিজে নিজেই। জ্ঞান অর্জন করেছেন রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্মসহ বিভিন্ন বিষয়ে। সাহিত্য আর ইতিহাসের প্রায় সব বইই তিনি পড়ে শেষ করেছেন।

মুসাফিরের জীবনের বড় অধ্যায় বিদেশ যাত্রা। দেশের মায়া ছেড়ে বাইরে ছিলেন ২২ বছর। রুটি-রুজির লড়াইয়ের সাথে সাথে সাহিত্য চর্চা আরও বেশি করে শুরু করেন মুসাফির। বিদেশ থাকতেই ২০০৪ সালে প্রকাশিত প্রথম বই হৃদয়ের জ্বালা। প্রচারবিমুখ এই লেখকের প্রকাশিত বই সংখ্যা ৯টি। আরও প্রায় এক ডজন বইয়ের রসদ তিনি লিখে রেখেছেন। সময় আর সুযোগ মতো সেগুলো প্রকাশ করবেন।

কয়েক হাজার বই পড়ে শেষ করা মুসাফিরের লেখার প্রধান সমালোচক স্ত্রী সন্তানেরা। জানালেন ‘আমার লেখার অনুপ্রেরণা আমি পরিবার থেকেই পাই। আবার আমার লেখার সমালোচনাও তারা করে।’

Musafirনিভৃতচারী এই লেখক বর্তমানে তারটিয়াতে তার বাড়িতে নিজ বাড়িতে বই পড়া এবং লেখার মধ্য দিয়ে সময় পার করছেন। এছাড়াও পরিবারের অন্য ভাইদের সাথে রয়েছে তার নিবিড় যোগাযোগ। আব্দুর রহমান মুসাফিরের সাহিত্য চর্চা নিয়ে সবচেয়ে অবদান বড় ভাইয়ের। ‘আমার সাহিত্য চর্চায় ছোট্টবেলা থেকেই বড় ভাই সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন। আমি যখন যে বই চেয়েছি বড় ভাই আমাকে কিনে দিয়েছেন। আমাকে লেখার প্রতি অনুপ্রেরণা দিয়েছেন’ বললেন মুসাফির।

জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লেখালেখি আর পড়াশোনার এ অনুশীলন চালিয়ে যেতে চান তিনি। পাশাপাশি নিজ এলাকায় প্রতিষ্ঠা করতে চান একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার। তিনি মনে করেন, কেবল বই পড়ার মধ্য দিয়েই একজন মানুষ পরিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।