ফাহাদের আছে তিনশ দেশের মুদ্রা

1148

এখন রিপোর্ট।।

শুরুটা অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন। ফুফাতো ভাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া এক রুপি ভারতীয় নোট দিয়ে শুরু। এরপর বাহরাইন, ওমান, দক্ষিণ কোরিয়ার কাগজের নোট,  ধাতব মুদ্রা ও স্ট্যাম্প যুক্ত হয়েছে তার সংগ্রহে। তারপর কেটে গেছে দীর্ঘ ৯ বছর।

এই দীর্ঘ সময়ে নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে তার সংগ্রহে রয়েছে প্রায় ৩শ’ দেশের দেড় হাজার কাগজের নোট ও ধাতব মুদ্রা এবং দেড় হাজার স্ট্যাম্প।

খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গার চৌধুরীপাড়া এলাকার বাসিন্দা নাঈম আল তাহসীন ফাহাদ এগুলো সংগ্রহ করেছেন।

চট্টগ্রাম ইনস্টিটিউট অব বিজনেস স্টাডিস কলেজের বিবিএ ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র ফাহাদ লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের মুদ্রা সংগ্রহ করেন। এটা নেশায় পরিণত হয়েছে। শুরুর দিকে বাবা-মায়ের আপত্তি থাকলেও এখন খুশি তারাও। উৎসাহ কিংবা সহযোগিতার কমতি নেই তাদের।

ফাহাদ জানান, বর্তমান তার কাছে রয়েছে ১৩১ থেকে ১৬১ সালে রোমান সম্রাট অ্যান্টোনিয়াস পায়াস আমলের ব্রোঞ্জের মুদ্রা, ১০৮১ থেকে ১১১৮ সালের বাইযানটাইন সম্রাট অ্যালেক্সাস আমলের ব্রোঞ্জের মুদ্রা, আমেরিকার ডলার রেপ্লিকা এবং জিম্বাবুয়ের কাগজের মুদ্রাও রয়েছে তার সংগ্রহে।

এছাড়া প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধচলাকালীন প্রচলিত মুদ্রা, ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান রাজা এবং সুলতানী আমলের ধাতব মুদ্রা, আমেরিকার বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের ধাতব মুদ্রা, সুলতানী আমল থেকে শুরু পূর্ব পাকিস্তান এবং বর্তমান বাংলাদেশের অনেক বিলুপ্ত মুদ্রা ও হাতের স্পর্শহীন প্রুফ কয়েন রয়েছে তার ভাণ্ডারে।

ফাহাদের এই প্রচেষ্টার অন্যতম অংশীদার ভিনদেশি বন্ধুরা। মুদ্রা সংগ্রহ করতে গিয়ে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছে বিশ্বেও প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি দেশের নাগরিকের।

দীর্ঘ ৯ বছরের নিরন্তর প্রচেষ্ঠায় আজ তার বিশাল সংগ্রহশালা। শুরুর দিকে নানা বিড়ম্বনা পোঁহাতে হলেও কোনো বাধাই রুখতে পারেনি তাকে। আর প্রথম বাধা আসে মা-বাবার কাছ থেকে।

মা মনোয়ারা বেগম বলেন, শুরুতে ব্যাপারটা বুঝতে পারিনি। তাই মোটেও পছন্দ করতাম না। এখনকার ছেলেরা তো পড়াশোনার বাইরের সময়টুকু বাইরে কাটায়। আর এখনকার সময়ে ছেলেগুলো নানা রকম খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ছে। সেই তুলনায় আমার ছেলে বিভিন্ন দেশের মুদ্রা সংগ্রহের মাধ্যমে নিজে যেমন সেসব দেশের ইতিহাস,ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারছে। তেমনি আগামী প্রজন্মের জন্য ইতিহাস সংরক্ষণের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে আমি ভালো চোখে দেখছি।

ফাহাদের বাবা মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পড়ার সময়ও তার হাতে বিভিন্ন কয়েন নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে দেখতাম। বেশ কয়েকবার কয়েকগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছি। মারধরও করেছি। সে(ফাহাদ) কিছুদিন পর পর আমার কাছে বায়না ধরতো ‘আব্বু আমাকে কিছু টাকা দাও’। তখন তাকে বলতাম; আমি কিন্তু তোমাকে স্কুলে যাওয়ার জন্য, নাস্তা করার জন্য টাকা দিচ্ছি। অন্য কিছুর জন্য না।

ফাহাদ জানান, মুদ্রা সংগ্রহ করতে গিয়ে মূল অর্থেও যোগান হয়েছে বাবা-মায়ের দেওয়া টাকা থেকে। কখনো টিফিনের টাকা কখনোবা নানা অজুহাতে নেওয়া টাকা দিয়েই এসব মুদ্রা, স্ট্যাম্প সংগ্রহ করেছি। ব্রিটিশ ইন্ডিয়া, বায়াফ্রা, ফিউম, ইউনিয়ান আইল্যান্ডের কাগুজে এবং ধাতব মুদ্রাও রয়েছে তার কাছে।

‘এক একটি মুদ্রা এক একটি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক। তাই আগামী প্রজন্মের জন্য জ্ঞানের সোপান উন্মুক্ত করতে সম্মলিত প্রচেষ্টায় ভবিষ্যতে একটি মুদ্রার জাদুঘর গড়ে তুলতে চাই।’ বললেন শৌখিন মুদ্রা সংগ্রাহক নাঈম আল তাহসীন ফাহাদ।

এখন/এসএস

ফেসবুকে আমাদের লাইক দিন: http://www.facebook.com/ekhon247