পরিস্থিতির পরিত্রাণ না ঘটলে দেশ হুমকির মধ্যে পড়বে—আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী

1418

আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী। স্কুল থাকতেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ছিলেন জন্মস্থান চাঁদপুরের মতলব থানা ছাত্রদলের বিভিন্ন দায়িত্বে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে দায়িত্ব পালন করেন কলা অনুষদের সিনিয়র সহ-সভাপতির। ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের গত কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক। বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদকের। নেতাকর্মীদের কাছে তিনি পরিশ্রমী নেতা হিসেবে পরিচিত। ছাত্র রাজনীতি নিয়ে তার মূল্যায়ন এবং সমসাময়িক বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলেছেন্ এখন-এর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্টাফ রিপোর্টার ওয়ালী উল্লাহ খান।

এখন: রাজনীতি আসার অনুপ্রেরণা কী ছিল?

আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী: আমার বড় ভাই এম এ শুককুর পাটোয়ারী। তিনি ৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে মতলব থানা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ছিলেন সেই থেকেই ছাত্র রাজনীতিতে আমার অনুপ্রেরণা জাগে।

এখন: ছাত্রদলের স্কুল কমিটি কি এখনও হয়?

আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী: এখন আর স্কুল কমিটি হয় না।

এখন: সম্প্রতি ছাত্রলীগের স্কুল কমিটির ঘোষণা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হলো। ছাত্র সংগঠনগুলোর স্কুল কমিটি থাকা দরকার বলে মনে করেন কি?

আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী: মুক্ত রাজনীতির চর্চা তো এখন বাংলাদেশে নেই।সরকারের সহযোগীতায় ছাত্রলীগ দেশের প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে। ছাত্রলীগের স্কুল কমিটি দেওয়ার পর ছাত্রদের হাতে স্কুলের শিক্ষকদের মার খাওয়ার ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি মনে করি পড়ালেখার প্রথম ধাপ প্রাইমারি স্কুল। এখানে শিশুদের মাঝে রাজনৈতিক চর্চা না করাই ভাল।

jcd 9

এখন: ছাত্রলীগ তো নেতৃত্ব নির্বাচনে ছাত্র-অবিবাহিতদের প্রাধন্য দিচ্ছে। সে তুলনায় ছাত্রদলের প্রতি অভিযোগ যে, অছাত্র এবং বিবাহিতদের নিয়ে ছাত্রদলের কমিটি। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী: আপনার এ কথাটি সঠিক নয়। ছাত্রলীগের নেতৃত্বে যারা আছে তারা কেউই নিয়মিত ছাত্র নয়। ছাত্রদলের সভাপতি-সেক্রেটারিসহ মূল পদগুলোতে যারা আছেন তারা ছাত্র এবং অবিবাহিত। সুতরাং তাদেরকে দিয়ে আমরা কমিটিকে মূল্যায়ন করতে পারি।

এখন: বর্তমানে রাজপথে যে ভূমিকা ছাত্রদলের রাখা দরকার ছিল, অভিযোগ আছে ছাত্রদল সে তুলনায় কিছু করতে পারেনি। একজন ছাত্রদল নেতা হিসেবে অভিযোগটার মূল্যায়ন করবেন কীভাবে?

আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী: ছাত্রদলের প্রতি সবার চাওয়া একটু বেশী থাকে। এটা বিগত আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রদলের সফলতার কারণে। কিন্তু প্রায় গত ১০ বছর যাবত ছাত্রদলের ওপর দমন পীড়নের মহা উৎসব চালিয়েছে সরকার। ঢাকায় বর্তমানে ১৭ জন ছাত্র নেতা গুম অবস্থায় আছে, সারাদেশে অসংখ্য। অনেককে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান জনিকে হাতে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে তার বুকে ১৭ রাউন্ড গুলি করা হয়েছে শুধু ছাত্রদল করার অপরাধে। এমন অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। সরকারের দমন পীড়নের কারণে অনেকে বাড়ি ঘরে থাকতে পারছে না এমনকি অনেক নেতাকর্মী বাবা-মা, স্বজন মারা গেলেও জানাজায় অংশ নিতে পারে না। তারপরও ছাত্রদল নেতা-কর্মী প্রত্যেকটি কর্মসূচি সফলতার সাথে পালন করছে।

এখন: আরো একটা অভিযোগ আছে যে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে ছাত্রদল শক্তি থাকতেও নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে…

আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী: আমি যদি বলি গ্রুপিং নেই-তাহলে এটা ঠিক হবে না। ছাত্রদল দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ছাত্র সংগঠন।এত বড় সংগঠন এর সভাপতি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয় দু’জনকে।অনেকে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কমিটিতে আসতে পারেন না। কমিটিতে আসতে না পারলে মন খারাপ হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু তারা দলের জন্য কাজ করে। এমন না যে তারা দল ছেড়ে দেয়।দলের সকল কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ গ্রহণ করেন।সত্যি কথা হচ্ছে গ্রুপিংটা সব দলেই আছে।

satter4

এখন: সম্প্রতি ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আন্দোলন হলো, ডাকসু নিয়ে ছাত্রদলের অবস্থান কী?

আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী: আমরা তো সবসময় ডাকসু নির্বাচন চেয়ে এসেছি। ৯২-৯৪ সালে আমরা ডাকসু নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলাম।কিন্তু ছাত্রলীগের অসহযোগিতার কারণে তখন ডাকসু নির্বাচন করতে পারিনি। কিছুদিন আগেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ডাকসু ভবনে গেলে সেখানে ছাত্রলীগ হামলা চালায়।

এখন: ছাত্রদলকে দেখা যায় বিএনপির কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন করতে। কিন্তু ছাত্র সংগঠনের মূল কাজ ছাত্রদের দাবি আদায়ে ছাত্রদলকে দেখা যায় না…

আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী: দলে এবং দেশের দুঃসময়ে ছাত্রদল সবসময় এগিয়ে এসেছে। ছাত্রদল সবসময় শিক্ষার্থীদের পক্ষে কাজ করেছে। বিতর্কিত শিক্ষানীতি, সকল পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রফাস, পরীক্ষায় বর্ধিত ফি বাতিল, ভ্যাট বিরোধী আন্দোলন সহ ছাত্রদের যৌক্তিক দাবি আমরা নানান সময় তুলে ধরেছি। এছাড়াও আমরা বিভিন্ন দাবি এবং অভিযোগ নিয়ে কাম্প্যাসে যেতে পারি না প্রশাসন এবং ছাত্রলীগের বাঁধার কারণে। আমাদের দাবি আদায়ের যে মূল জায়গা ভিসি, ভিসি আমাদের কথা শুনেন না। দলীয় বিবেচনায় ভিসি নিয়োগ হওয়ার কারণে তারা শুধু ছাত্রলীগের দাবি বাস্তবায়ন করেন।

এখন: আগামীতে কি ছাত্রদলের অন্য কোন পদে আসতে চান?

আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী: থাকা না থাকা পার্টির সিদ্ধান্তের উপরে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যদি মনে করেন আমার ছাত্রদলে থাকা জরুরি। তাহলে থাকবো।

jcd10

এখন: ভবিষ্যত-এ রাজনীতিতে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী: আজ রাজনীতি যে অবস্থানে আওয়ামীলীগ নিয়ে গেছে, এই পরিস্থিতে আমরা যারা ছাত্র রাজনীতি থেকে মূল রাজনীতি করতে চাই তারা কিছুটা হতাশ। আজকে ভোটবীহিন সরকার থাকার কারণে সবকিছু দলীয় করণ হয়ে গেছে। তারপরও ছাত্রদল শেষ করে বিএনপির রাজনীতি করার ইচ্ছা আছে।

এখন: জনপ্রতিনিধি হতে চান?

আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী: ইচ্ছাতো আছে জনগণের সেবা করার।

jcd 8

এখন: সামগ্রিক অর্থে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন দেখছেন?

আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী: দেশে এখন একদলীয় শাসন চলছে।দেশ চলছে শুধু একজনের কথায়। আওয়ামীলীগের অনেকেও প্রধানমন্ত্রীর বাইরে কথা বলতে পারেন না। বর্তমান পরিস্থিতির পরিত্রাণ না ঘটলে দেশ হুমকির মধ্যে পড়বে।