ডিজিটাল আইন নিয়ে সাংবাদিকদের ভয়ের কারণ নেই: প্রধানমন্ত্রী

653

সরকারের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাংবাদিকদের ভয়ের কোনো করাণ নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদান এবং সপ্তাহব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে আজ বিকেল ৪টার দিকে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই সাংবাদিক তৌফিক ইমরোজ খালিদী ফেইসবুকে ক্রিকেটার লিটন দাসের সাম্প্রদায়িক মন্তব্যের শিকার হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

তিনি বলেন, ক্রিকেটার লিটন দাস দুর্গা পূজার শুভেচ্ছা জানিয়ে দেবীর ছবিসহ একটি পোস্ট দেওয়া পর ফেইসবুকে ‘বাজে ও বিকৃত’ মন্তব্যের শিকার হন। পরে তিনি ওই পোস্ট সরিয়ে নেন। এ ধরনের পরিস্থিতি সামলাতে সরকার কী উদ্যোগ নেবে।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “এগুলো মোকাবেলার জন্য আমরা সাইবার সিকিউরিটি আইন করেছি। এ ধরনের নোংরামি যেন না হয়।”

দেশে মৌলবাদি দর্শনের বিস্তারের কারণেই হয়ত এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে। এ বিষয়ে সরকার কী করবে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “র‌্যাডিকাইলাইজেশন তো হচ্ছে। আমি বলব, যারা এ ধরনের কাজ করে তারা বিকৃতমনা। তাদের কোনো নীতি নাই।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সাইবার সিকিউরিটি প্রত্যেক দেশে বিরাট সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে। সেখানে সামাজিক, পারিবারিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের সমস্যা, পর্ন ইত্যাদি ছড়াচ্ছে। আমরা সে লক্ষ্যে উদ্যোগ নিয়েছি। এ নিয়ে সাংবাদিকদের ভয়ের কোনো কারণ নেই।”

এ ধরনের ঘটনা ঠেকাতে সমাজকে সচেতন করে তোলার এবং সাংবাদিকদের তাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখার ওপর জোর দেন শেখ হাসিনা।

যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠককালে তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে কোনো পরামর্শ দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে কেউ আমাকে কোনো পরামর্শ দেয়নি। বরং যাদের সাথে কথা বলেছি, তারাই আমাকে উইশ করেছে যেন আমি আবার ক্ষমতায় আসি। তাই জনগণ ভোট দিলে আছি, না হলে নাই। সবাই আন্তরিকভাবে চেয়েছে যেন আবার আমরা ক্ষমতায় আসি।

আগামীতে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি না এবং কেমন ষড়যন্ত্র মনে করছেন জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ষড়যন্ত্রের একটি উর্বর ভূমি। এখানে সব সময় ষড়যন্ত্র হয়েছে। গত সাড়ে ৯ বছর আমরা ক্ষমতায়। অনেক উন্নয়ন করেছি। কিন্তু এমন কী করেছি যে কারণে আমাদের রিজাইন দিতে হবে, ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে হবে?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা চিন্তা করে সরকার পড়ে যাবে, সরকার উৎখাত হবে আর তারা ক্ষমতায় আসবে, তারা সব সময় ষড়যন্ত্র করবেই। আর সেটি চরিতার্থ করতেই দেশে মানুষকে বিপদে ফেলবে। যাদের ব্যক্তিস্বার্থ আর নিজেদের আকাঙ্ক্ষা আছে তাদের একটি ষড়যন্ত্র ছিলো, আছে, থাকবে। সেই জন্য সবাইকে সাবধান থাকতে বলেছি। কারণ বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর থেকে দেশে ১৯ টি ক্যু হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ১০ বছরের শাসনামলে দেশের ৬৪ ভাগ মানুষ সন্তুষ্ট। এটা তো আমরা করিনি, আমেরিকার একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণার রিপোর্ট। তাহলে অসন্তুষ্ট কারা? আমরা তো দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গঠন করেছি। মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করেছি, তরুণ সমাজকে উন্নত জীবন দিয়েছি। তারপরেও পত্রিকা খুলে দেখি কোথাও এতটুকু এটা হয়নি, ওটা হয়নি, এতেই তাদের আত্মতুষ্টি। কারণ তারা জনগণের জন্য ক্ষমতায় যেতে চায়নি।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে আজ যে উন্নতি তার সব কিছুর ভিত্তি তো বঙ্গবন্ধু করে দিয়েছেন। স্যাটেলাইট সমুদ্র বিজয় সবকিছুর ভিত্তি কিন্তু তিনিই গড়ে দিয়ে গেছেন মাত্র সাড়ে তিন বছরে। আমরা ২০০৮ সালে যে ইশতেহার দিয়েছি তার সবগুলোই পূরণ করেছি। দিন বদলের সনদ দিয়েছি, সেই দিন বদল কি হয়নি? এখন দেশের প্রত্যেক সেক্টরে উন্নয়নের জোয়ার বইছে।