ঘষা থেকে আগুন-বিস্ফোরণ, ২০০ সিলিন্ডার ক্ষতিগ্রস্ত

1088

বগুড়া প্রতিনিধি।।

‘আমরা সাত-আটজন ট্রাক থেকে সিলিন্ডার নামাচ্ছিলাম। ১৫০টার মতো সিলিন্ডার নামিয়ে একটা ট্রাকে তুলে দেই। সেটা চলে যায়। পরে আবার সিলিন্ডার নামাতে থাকি। ২০টার মতো সিলিন্ডার নামানো হয়। এরপর হঠাৎ করেই সিলিন্ডার নামানোর সময় চিৎকার শুরু করে আমাদের সঙ্গে থাকা মিলন। দেখি, হাত পুড়ে গেছে তাঁর। সিলিন্ডারে আগুন জ্বলছে। মিলনকে টান দিয়ে আমরা দৌড়ে দূরে চলে গেলাম। এরপর প্রচণ্ড শব্দে এক এক করে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের শব্দ শুনলাম। আগুন ধরে গেল। ভয়াবহ পরিস্থিতি তখন আমাদের সামনে। দৌড়ে দূরে চলে না গেলে আমরাও হয়তো পুড়ে মরতাম।’—এই বয়ান ইয়াসমিন আলী নামের এক শ্রমিকের।

ইয়াসমিন আলী বগুড়ায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) আঞ্চলিক ডিপোতে মালামাল ওঠানো-নামানোর কাজ করেন। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বনানী লিচুতলা এলাকায় বিপিসির ওই ডিপো প্রাঙ্গণে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তিনি। এ ঘটনায় পদ্মা অয়েল কোম্পানির গ্যাস ভর্তি দুই শতাধিক সিলিন্ডার বিস্ফোরিত, পুড়ে যাওয়াসহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া সিলিন্ডার বহন কাজে ব্যবহৃত তিনটি ট্রাক পুড়ে গেছে। পরে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ ঘটনায় মিলন নামের এক শ্রমিক আহত হয়েছেন। তিনি বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল ভর্তি আছেন।

ডিপো সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট গ্যাস ডিপো থেকে তিনটি ট্রাকে করে ৮৭৮টি গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার বগুড়ার বিপিসির ডিপোতে আসে। দুটি ট্রাকে ছিল মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ৫০০টি সিলিন্ডার, যা ট্রাক থেকে নামানো হয়েছিল। আরেকটি ট্রাকে পদ্মা অয়েলের ৩৭৮টি সিলিন্ডার ছিল, যা নামানোর সময় দুর্ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী অন্তত দুজনের ভাষ্য, শ্রমিকেরা ট্রাক থেকে সিলিন্ডার নামানোর সময় দুটি সিলিন্ডারের ঘষায় আগুন ধরে যায়। সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দে একের পর এক সিলিন্ডারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ওই ট্রাক ও সামনে থাকা অপর দুটি ট্রাক আগুনে পুড়ে যায়।

বগুড়ার বনানী লিচুতলা এলাকায় আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিপিসির ডিপো প্রাঙ্গণে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট গিয়ে আগুন নেভায়। ছবি: সোয়েল রানাবগুড়ায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উপসহকারী

বগুড়ায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উপসহকারী পরিচালক আবদুল হামিদ বলেন, পাঁচটি ইউনিট আগুন নেভায়। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, ট্রাক থেকে গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার নামানোর সময় আগুনের সূত্রপাত। ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে। বিস্ফোরণের কারণ তদন্তের পরে বলা যাবে।

তবে রাজশাহী বিভাগীয় এলপি গ্যাস পরিবেশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহসানুল রশিদের অভিযোগ, বোতলজাত এলপিজি গ্যাস বাজারজাতকারী বিপিসির পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার অনুপযোগী, মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারে গ্যাস ভরে ভোক্তাদের কাছে সরবরাহ করছে। ঝুঁকিপূর্ণ এসব হাজার হাজার সিলিন্ডার বাতিল করে নতুন সিলিন্ডারে গ্যাস সরবরাহের জন্য পরিবেশক সমিতির পক্ষ থেকে দাবি জানানো হচ্ছিল। কিন্তু তা না মেনে পুরোনো এসব সিলিন্ডারেই গ্যাস সরবরাহ করছে কোম্পানিগুলো। পুরোনো সিলিন্ডারের কারণে আজকের দুর্ঘটনা বলে তাঁর ভাষ্য।

আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে পদ্মার ডিপো কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেনের ভাষ্য, একটি সিলিন্ডারের নজেলের সঙ্গে অন্য সিলিন্ডারের ঘষা লেগে আগুনের সূত্রপাত। পরে তা চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে।

আহসানুল রশিদের ভাষ্য, ট্রাকে ৩৭৮টি গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার ছিল। শ্রমিকেরা ১৫০টির মতো সিলিন্ডার নামিয়ে এক ডিলারের ট্রাকে তুলে দিয়েছিলেন। ট্রাকটি দুর্ঘটনার আগেই ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। ফলে দুর্ঘটনায় দুই শতাধিক সিলিন্ডার বিস্ফোরিত কিংবা আগুনে পুড়ে যাওয়াসহ কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী, পরিবেশক ও ডিপো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানির মাধ্যমে বিপিসি বগুড়া আঞ্চলিক ডিপো থেকে উত্তরাঞ্চলের (পাবনা ও সিরাজগঞ্জ ছাড়া) ১৪ জেলায় ৫৫০ জন ডিলারের মাধ্যমে এলপিজি গ্যাস সরবরাহ করে। এসব গ্যাস সিলেটের রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস ফিল্ড থেকে বোতলজাত হয়ে সিলিন্ডারের মাধ্যমে বগুড়া আঞ্চলিক ডিপোতে যায়। ডিলাররা এই গ্যাস ভোক্তা পর্যায়ে বিপণন করেন।