হামলা-মৃত্যু: ‘উল্টো পথে’ বাংলাদেশ

1092

এখন রিপোর্ট।।

সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী হামলা ও তাতে হতাহতের সংখ্যা কমলেও বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে তা বেড়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

‘গ্লোবাল টেরোরিজম’ শিরোনামের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, ২০১২ সালের পর গত বছরই প্রথমবারের মতো বিশ্বে এই ধরনের হামলার সংখ্যা কমেছে।

২০১৪ সালের তুলনায় এ বছর সন্ত্রাসী হামলা ১৩ শতাংশ এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে হতাহতের সংখ্যা ১৪ শতাংশ কমেছে।

পররাষ্ট্র দপ্তরের সন্ত্রাস দমন বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়ক জাস্টিন সিবেরেল বলেন, ইরাক, পাকিস্তান ও নাইজেরিয়ায় সন্ত্রাসী হামলা কম হওয়ায় বিশ্বব্যাপী হামলার সংখ্যা নেমেছে।

তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বিশ্বে যতো সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে তার ৫৫ শতাংশের বেশি হয়েছে ইরাক, পাকিস্তান, ভারত, আফগানিস্তান ও নাইজেরিয়ায়।

এই সময়ে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, মিশর, ফিলিপিন্স, সিরিয়া ও তুরস্কে সন্ত্রাসী হামলা ও নিহতের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ নিয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী হামলা বাড়তে দেখা গেছে এবং প্রথমবারের মতো আন্তঃদেশীয় বিভিন্ন গোষ্ঠী এসব হামলার ‘দায় স্বীকার’ করেছে।

গত বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায় থেকে শুরু করে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান বাবু, ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ ও নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় এবং প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন হত্যায় আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা একিউআইএসের ‘দায় স্বীকারের’ কথা উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।

এছাড়া ইতালীয় এনজিও কর্মী চেজারে তাভেল্লা ও জাপানি কুনিও হোশি হত্যা এ সময় নয়টি হামলায় আইএসের নামে ‘দায় স্বীকারে’ কথা উঠে এসেছে এতে।
বাংলাদেশে আইএসের সাংগঠনিক তৎপরতা নেই বলে সরকার যে দাবি করে আসছে তাও উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।

গত ডিসেম্বরে চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর ঘাঁটিতে দুটি মসজিদে বোমা হামলা এবং খ্রিস্টান, হিন্দু ও ভিন্ন মতাবলম্বী মুসলিমদের ওপর হামলার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে তাদের প্রতিবেদনে।

এতে বলা হয়, একিউআইএস যে সব সন্ত্রাসী হামলার দায় স্বীকার করেছে তার প্রতিটিতে হামলাকারীরা চাপাতি ব্যবহার করেছে। অপরদিকে আইএসের ‘দায় স্বীকারের’ হামলাগুলোয় চাপাতির পাশাপাশি পিস্তল ও বোমাসহ বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া আহমদিয়াদের মসজিদে হামলায় ‘সুইসাইড ভেস্ট’ ব্যবহার করা হয়।

এ বছর বিশ্বের ৯২টি দেশে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

পররাষ্ট্র দপ্তরের জন্য ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকলিত তথ্যে দেখা গেছে, গত বছর বিশ্বজুড়ে মোট ১১ হাজার ৭৭৪টি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এসব হামলায় ২৮ হাজার ৩০০ মানুষের মৃত্যু এবং আনুমানিক ৩৫ হাজার ৩০০ জন আহত হয়েছেন।

২০১৫ সালেও সন্ত্রাসী হামলার হুমকি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের এখনও সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, যদিও গত বছর ইরাক ও সিরিয়ায় উল্লেখযোগ্য হারে এলাকা হারিয়েছে তারা।
তবে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লিবিয়ায় অবস্থান শক্ত করেছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, সেখানে তাদের প্রায় পাঁচ হাজার ‘যোদ্ধা’ রয়েছে।

এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য অংশ, দক্ষিণ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও পশ্চিম আফ্রিকায়ও আইএস সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়েছে উঠেছে। তবে এসব গোষ্ঠীর সঙ্গে আইএস নেতৃত্বের সম্পর্ক ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতীকী’ বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

গত কয়েক বছরের মতো এবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বিশ্বে সন্ত্রাসবাদে সবচেয়ে বড় মদদদাতা দেশ হিসেবে ইরানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এতে দাবি করা হয়, ইরাক ও সিরিয়ায় সংঘাতকে উস্কে দেওয়ার পাশাপাশি বাহরাইনে সহিংস শিয়া বিক্ষোভেও তেহরানের মদদ রয়েছে।

ইরানের বিরুদ্ধে দেশে অস্থিরতা তৈরিতে উস্কানি এবং শিয়া জঙ্গিদের অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ করে আসছে বাহরাইন সরকার। তবে তেহরান তা অস্বীকার করছে।