কেউ কি রেহাই পাবে? বেপরোয়া পুলিশকে কে রুখিবে?

মোস্তফা ফিরোজ

1012


22042049_1823559501017605_6072271054517618763_o copyমোস্তফা ফিরোজ:
 
বার্তা প্রধান, বাংলাভিশন

পুলিশের হাতে ডিবিসি টিভির ক্যামেরা সাংবাদিক সুমন হাসানের নির্যাতনের ছবিটি ভাইরাল হয়েছে। সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। কিন্তু এই ঘটনা কি খুব অস্বাভাবিক? সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের বেপরোয়া মনোভাব খেয়াল করবেন। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। কোথাও কোন উত্তেজনা নেই। কিন্তু হঠাৎ করে পুলিশ উত্তেজনা সৃষ্টি করে বিএনপির রাজনীতিক নেতা- কর্মীদের আটক করছে এবং রিমান্ডে নিচ্ছে। আপনি খেয়াল করেন, যেভাবে প্রকাশ্যে চোর পকেটমারদের ধরার ষ্টাইলে তাদেরকে আটক কার হচ্ছে তা যেকোন সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে ভাবাই যায় না। নিশ্চয় মনে আছে, কিছুদিন আগে বিএনপি নেতা শফিউল বারী বাবুকে আটকের সময়, জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিতরে ঢুকে ডিবি পুলিশের অস্ত্র হাতের মহড়া, আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিলো। দুঃখজনক হচ্ছে, সমাজের বিবেক বলে পরিচিত সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে এর কোন প্রতিবাদও করা হয়নি। কিন্তু আমার মনে আছে, বিএনপির আমলে প্রেসক্লাব অঙ্গনে পুলিশ ঢুকে পড়ার বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা সোচ্চার প্রতিবাদ জানিয়েছিলো।

বিরোধী রাজনীতিকদের কেবল আটকই না রিমান্ডেও নেয়া হচ্ছে। আর রিমান্ডের অর্থ কি হতে পারে তা কারোই অজানা না। ছাত্রদল নেতা জাকির হোসেন মিলন তিন দিন রিমান্ডে থাকার একদিন পরই কারাগার হয়ে হাসপাতালে পৌঁছেই মারা গেলো। তার দল ও পরিবার দাবি করছে, পুলিশী নির্যাতনে মিলনের মৃত্যু হয়েছে।

এমন ঘটনা যখন ঘটে চলেছে তখন অনেকেই ভাবতে পারে এটা সরকারের সাথে বিএনপির তিক্ত সম্পর্কের জের, আমার তাতে কি আসে যায়। কিন্তু এই ঘটনা যে ঘুরতে ঘুরতে সবাইকে আঘাত করতে পারে সেটা অনেকেই টের পাচ্ছেন না। পুলিশ যদি আইনের বাইরে বেপরোয়া হয়ে ওঠার বৈধতা পেয়ে যায় তখন তার হাত থেকে কেউই রেহাই পাবে না। বরিশালের ডিবিসি’র সাংবাদিক সুমনের ওপর নির্যাতনের ঘটনা সেটাই প্রমান করে। সুমন এমন একটি টিভিতে কাজ করেন যার মালিক প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরি। তাই বলে কি সুমন নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে পারলো? পারে নাই। পুলিশ ঠিকই যখন তাদের স্বার্থে লেগেছে তখন তারা বেপরোয়া হয়ে আঘাত হেনেছে। তখন তারা এটা মাথায় রাখেনি টিভির মালিকানা কার।

তবে হ্যাঁ। যেটা হয়েছে তাহলো সাথে সাথে ৮ ডিবি পুলিশকে তাদের কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এই দৃষ্টান্ত যদি সকল ক্ষেত্রে আগে থেকে স্থাপন করা হতো তাহলে হয়তো এমনটা রাজনৈতিক অঙ্গনেও ঘটতো না। এখন যদি ধরে নেয়া হয়, এটা কেবল বিরোধী রাজনীতির বেলায় হবে, আর কোন স্থানে প্রয়োগ হবে না, সেটা বাস্তবে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব না। ফ্রাঙ্কেনষ্টাইনের দানবকে ছেড়ে দেয়া হলে তার সৃষ্টিকারিকেও সে রেহাই দেয় না। এটা দানব সংস্কৃতি। সবাইকে গ্রাস করবেই।

এরই ধারাবাহিকতায় এর আগেও শাহবাগে পুলিশের রাবার বুলেটে নিরীহ এক ছাত্রের চোখ নষ্ট হওয়া, প্রেসক্লাবের সামনে তেল গ্যাস বিরোধী আন্দোলনে বাম নেতা কর্মীদের ওপর পিপার স্প্রে নিক্ষেপ, শিক্ষকদের ওপর লাঠিচার্জ, হাইকোর্টের সামনে ছাত্রী নির্যাহনসহ অনেক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এসব বিষয়ে পুলিশকে কার্যকর কোন রাজনৈতিক নির্দেশনা না দেয়ার ফলে ঘটনা ঘটেই চলেছে। তাই এখন পুলিশের বেপরোয়া আচরণ কেবল বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, এটা বিস্তৃত হচ্ছে সমাজের অন্যান্য অংশেও। সুতরাং, সাধু সাবধান!