ইন্সপেক্টর মামুন হত্যায় তিন মডেল কন্যা নজরদারিতে

1367

পুলিশের বিশেষ শাখা এসবি’র পরিদর্শক মামুন ইমরান খানের হত্যায়  জড়িত সন্দেহভাজন কথিত তিন তরুণী মডেলকে শনাক্তের পর তাদেরকে গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১২ জুলাই) রাতেই অভিযান চালিয়ে তাদের আটকের কথা রয়েছে। এই তিন তরুণী মডেল হলো— মেহেরুন নেসা ওরফে আফরিন ওরফে শেখ আন্নাফি ওরফে আন্নাফি আফরিন, তার ছোট বোন ফারিয়া বিনতে মীম ওরফে মাইশা ও সুরাইয়া আক্তার কেয়া। মামুনকে হত্যার সময় এই তিন জনই বনানীর ওই ফ্ল্যাটে উপস্থিত ছিল।

সন্দেহভাজন এই তিন মডেলের বিরুদ্ধে মামুনকে হত্যায় সহযোগিতা   ছাড়াও ফাঁদ পেতে অশ্লীল ছবি তুলে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। মামুন হত্যা মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি-পূর্ব) খোন্দকার নুরুন্নবী বলেন, ‘আমরা এই ঘটনায় রহমত নামে একজনকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তার কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবার নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। আমরা জড়িত সবাইকে গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছি। খুব শিগগিরই এই হত্যার পুরোরহস্য উন্মোচিত করা সম্ভব হবে।’

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গুলশান-বনানীকেন্দ্রিক এই চক্রটিতে ১০-১২ জন সদস্য রয়েছে। চক্রের অন্যতম সদস্য হলো এই তিন তরুণী। আফরিন, কেয়া ও মাইশা বিভিন্ন লোকের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে তাদেরকে বনানীর ওই ফ্ল্যাটে নিয়ে যেতো। নানারকম পার্টি করার আড়ালে তাদের অন্তরঙ্গ ছবি তুলে তা প্রকাশের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করাই ছিল এই চক্রের কাজ। সূত্র জানায়, আফরিন ও মাইশা আপন বোন। আর কেয়া এই চক্রের অন্যতম এক সদস্য শেখ হৃদয় ওরফে আপনের দ্বিতীয় স্ত্রী। তারা তিন জনই শোবিজ মিডিয়ায় তৃতীয় শ্রেণির মডেল ও অভিনেত্রী হিসেবে কাজ করে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, শোবিজ মিডিয়ায় কাজের সুবাদে পুলিশ কর্মকর্তা মামুনের সঙ্গে রহমতের সঙ্গে পরিচয় হয়। এছাড়া, আফরিনের সঙ্গে তিনি (মামুন) একাধিক টিভি নাটকে সহশিল্পী হিসেবে কাজও করেছেন। এ কারণে আফরিনের জন্মদিনের পার্টির কথা শুনে রহমতের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন মামুন। কিন্তু তিনি বুঝতেই পারেনি যে, সেখানে রহমতসহ তাকে ফাঁদে ফেলার জন্য ডাকা হয়েছিল।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, তিন কথিত মডেলসহ এই প্রতারকচক্রের সঙ্গে একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক তিন সদস্যও জড়িত। মূলত তারাই  ‘টার্গেট’ ব্যক্তিকে মারধর এবং নিজেদেরকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে অর্থ আদায় করতো। এই তিন জনের মধ্যে আতিক অন্যতম বলে জানিয়েছেন এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা। আর স্বপন ও মিজান তাকে সহযোগিতা করতো। এই তিন জনের মধ্যে স্বপনের অবস্থান শনাক্তের পর নজরদারি করা হচ্ছে। তারা তিন জনে মিলে এসবি কর্মকর্তা মামুনকে বেধড়ক পিটিয়ে হত্যা করে।

উল্লেখ্য, গত রবিবার (৮ জুলাই) রাত থেকে মামুনের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন তার পরিবারের সদস্যরা। পরদিন এসবি কার্যালয়ে গিয়ে তার কোনও খোঁজ না পেয়ে সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তারা। এসবি ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের খিলগাঁও জোনাল টিম যৌথভাবে ঘটনাটি অনুসন্ধান শুরু করে। পরে প্রযুক্তির সহযোগিতায় তারা কিছু তথ্য পায়। সেই সূত্র ধরেই গাজীপুরের একটি বাঁশঝাড় থেকে লাশ খুঁজে বের করে।
এরপর মঙ্গলবার (১০ জুলাই) সন্ধ্যায় গ্রেফতার করা হয় রহমত উল্লাহকে। সে জিজ্ঞাসাবাদে মামুনকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে। জিজ্ঞাসাবাদে রহমত জানিয়েছে— ওই বাসায় আগে থেকেই আফরিন, কেয়া, মাইশা, স্বপন, মিজান, আতিক, দিদার, শেখ হৃদয় ওরফে আপন, রবিউল উপস্থিত ছিল।

জিজ্ঞাসাবাদে রহমত দাবি করেছে, সে আসলে এই হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল না। চক্রটি তাকেই টার্গেট করেছিল। কিন্তু সে মামুনকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ায় প্রতারকরা তাদের দুজনকেই টার্গেট করে। পরবর্তীতে মামুন মারা গেলে সে নিজে এই হত্যার দায় থেকে বাঁচতে চক্রটির সঙ্গে হাত মেলায় এবং লাশ গুমে সহায়তা করে। লাশ গুমের জন্য নিজের গাড়িও ব্যবহার করে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পুলিশ বুধবার রহমতের প্রাইভেট কারটি জব্দ করেছে।