শাহাদাত হোসেন তৌহিদ:
সত্যিকার একটি সামাজিক সংগঠন দিয়ে যে ওই অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া, অসহায়, দরিদ্র, শোষিত- বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের যথাযথ সেবা করা যায় তার প্রকৃষ্ট উদাহারন ফেনীর পরশুরাম উপজেলার সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘কুঁড়েঘর ফাউন্ডেশন’। নদীবিধৌত বাংলাদেশের সীমান্ত জেলা ফেনীর একটি উপজেলা পরশুরাম। ভারতের সীমান্তবর্তী এ ছোট্ট উপজেলায় এর আগে শত সংগঠন সৃষ্টি হলেও কালক্রমে তা হারিয়ে যেতে দেরি হয়নি। কুঁড়েঘর ফাউন্ডেশনটি সে ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এক ঝাঁক তরুণদের নিয়ে প্রতিশ্রুতিশীল সংগঠন হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। স্থান করে নিয়েছেন উপজেলার সকল শ্রেণির মানুষের মনিকোঠায়। সকল বাঁধা বিপত্তি ডিঙিয়ে পরশুরামের ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিবে বলে আশা করছেন স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
প্রায় তিন বছর আগে এ প্রতিষ্ঠানটি করার স্বপ্ন দেখেন তুহিন নামে শিক্ষিত এক তরুণ। ফেনী ইউনির্ভাসিটির খুবই পরিচিত মুখ, শিক্ষক শিক্ষার্থী সকলের কাছে ছিলো সে জনপ্রিয়। খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চা পড়াশোনা সবকিছুতে তার ব্যতিক্রমী পদচারণা। তার পুরো নাম মো: মহিউদ্দিন চৌধুরীর তুহিন। বিবিএ তৃতীয় বর্ষে পড়াকালিন তার সমমনা কিছু বন্ধুবান্ধব নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ফেনী জেলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সামাজিক সংগঠন ‘কুঁড়েঘর ফাউন্ডেশন।’ নামকরনটাও তার। সমর্থন দিলেন তাঁর সমমনা বন্ধুরা।
উদ্দেশ্য একটাই উপজেলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে স্বরুপে ফিরিয়ে আনা, কিশোর যুবকদের মাঝে সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া চর্চা অব্যাহত রাখা, উপজেলার রোগীদের রক্তের চাহিদা মিটানো, হতদরিদ্র অসহায় মানুষদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, অসহায়ের ঘর তৈরি করে দেয়া, মাদক ও অসামাজিক কর্মকাণ্ড তথা মাদকদ্রব্য থেকে দূরে রেখে নানান সামাজিক কাজে উৎসাহিত করা, অসহায়ের ত্রান-সাহায্য প্রদানসহ ইত্যাদি ইত্যাদি।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত যতগুলো কাজ করেছেন সবগুলো ছিলো প্রশংসনীয়।
সংগঠনের পক্ষ থেকে গত তিন বছরে কাজের বিবরণ:
-২ জন অসহায় মহিলাকে ২টি ঘর নির্মাণ (উত্তর কোলাপাড়া ‘চিন্তা রানি’ বাউরখুমার ‘হোনাধনি’।
-উপজেলা পর্যায়ে ৩ বার বৃহৎ আকারে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় কর্মসূচি।
-দরিদ্র পরিবারের মধ্যে পরপর ৪ বছর ইফতার সামগ্রী বিতরণ।
-বছরব্যাপি নিয়মিত রক্তদান, উপজেলার ৭০% রক্তের যোগানদাতা।
-মাদক বিরোধী ক্যাম্পেইন।
-প্রতিবছর শীত উপকরণ বিতরণ ও শীতবস্ত্র বিতরণ।
-করোনা পরিস্থিতিতে বিনামূল্যে সবজি বিতরণ।
-পথ শিশুদের নিয়ে কুইজ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।
– যৌথ ভাবে ২ জন রোগীর জন্য লক্ষাধিক অর্থ উত্তোলন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
-বিনামূল্য বৃক্ষ প্রদান কর্মসূচি।
-করোনা পরিস্থিতিতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান ও সার্জিকেল মাস্ক বিতরণ।
-বেকায়দায় পড়া ৩ কৃষকের ধান কেটে বাড়িতে পৌছে দেয়া।
– করোনা পরিস্থিতি তে ত্রান বিতরণ।
-পরশুরাম বাজারে সামাজিক দূরত্ব নির্দেশক প্রতিক অঙ্কন।
-করোনা পরিস্থিতিতে লক ডাউনে থাকা কিছু পরিবারকে বিনামূল্য খাদ্যসামগ্রী প্রদান ও বাজার সদাই করে দেয়া।
-করোনা পরিস্থিতিতে বাজার মনিটরিং তথা সামাজিক দুরত্ন নিশ্চিত করন।
-ক্রিকেট ফুটবল ও ব্যাডমিন্টন খেলায় সংগঠন থেকে উপজেলা ব্যাপি সকল টুর্নামেন্ট এ অংশগ্রহনসহ প্রচুর কাজ করে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
গত তিন বছরে সুনামের সাথে কাজ করে চতুর্থ বর্ষে পদার্পণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আজ ১২ জুন শুক্রবার সংগঠনের তৃতীয় লপ্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সম্পূর্ণ নিজেদের অর্থায়নে কুঁড়েঘর ফাউন্ডেশন সদস্যরা একটি সুসজ্জিত অফিস তৈরি করল।
বর্তমানে সংগঠনের সভাপতি হিসেবে রয়েছেন প্রাইম মজুমদার এবং সাধারণ সম্পাদক পরশুরামের ক্রীড়াঙ্গনের সুপরিচিত মুখ আলাউদ্দিন জুয়েল।
খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, চিত্তবিনোদন, আনন্দভ্রমন, পড়াশোনা, রক্তদান, সমাজসেবা ও পরোপকারী চিন্তাচেতনায় পরশুরাম উপজেলার তরুন ও যুব সমাজকে সুসংগঠিত করে রাখছে কুঁড়েঘর ফাউন্ডেশন।
এ বিষয়ে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা তুহিন চৌধুরী জানান, ভবিষ্যতেও মাদকমুক্ত, ও আদর্শ তরুণ সমাজ বিনির্মানে কার্যকরী ভুমিকা রাখার চেষ্টা করে যাবে সংগঠনের কর্মীরা।
লেখক, গণমাধ্যমকর্মী।