এবার যৌন নিপীড়ন নিয়ে মুখ খুললেন তনুশ্রী

1317

গত বছরের শেষের দিকে হলিউডের অস্কারজয়ী প্রযোজক হার্ভে ওয়েনস্টেইনের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকজন অভিনেত্রী যৌন হেনস্তার অভিযোগ তোলেন। তাদের মুখে হেনস্তার কথা শুনে সাহসী হয়ে ওঠেন আরো অনেকে। এরপর ‘মি টু’ হ্যাশট্যাগে দুনিয়াজুড়ে নারীরা তাদের যৌন হেনস্তার কথা জানাতে শুরু করেন।

বিশ্ব শোবিজ অঙ্গনের অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে ভারতের অনেক অভিনয়শিল্পীও সিনেমা জগতে তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা তুলে ধরছেন। এবার এ বিষয়ে মুখ খুললেন এক সময়ের সাড়া জাগানো বলিউড অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্ত।

আশিক বানায় আপনে সিনেমাখ্যাত এ অভিনেত্রী বলেন, “সত্যি বলতে আমাদের দেশের মানুষ খুব কপট। আমাকে প্রায়ই জিজ্ঞেস করা হয় ভারতে ‘মি টু’ আন্দোলন কেন হচ্ছে না। এটা হবে না যতদিন পর্যন্ত ২০০৮ সালে আমার সঙ্গে যা হয়েছিল তার কোনো প্রতিবাদ না হবে।”

তিনি আরও বলেন, “মি টু’ আন্দোলন হলিউডে শুরু হয়েছে দুই বছর হচ্ছে, কিন্তু ভারতে এটি অনেক আগেই শুরু হয়েছে। আমি সম্ভবত ভারতে প্রথম এই বিষয়ে মিডিয়ার সামনে কথা বলেছিলাম এবং সোচ্চার হয়েছিলাম। সবাই দেখেছিল কি হয়েছে কিন্তু অতীত স্মৃতি ও মানুষের মনোভাব এই যে, তনুশ্রী যৌন হেনস্তার কথা বলে মিডিয়া ছেড়ে চলে গেছে।”

২০০৮ সালে তনুশ্রী নাম প্রকাশ না করে একজন অভিনেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে জানান, হর্ন ওকে প্লিজ সিনেমার একটি গানে ওই অভিনেতা তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। তিনি এতটাই অস্বস্তিবোধ করেছিলেন যে গানটি থেকে তাকে বেড়িয়ে যেতে হয়।

তনুশ্রী বলেন, “পুরো ইন্ডাস্ট্রি দেখেছিল কী হয়েছিল কিন্তু কারো মুখে থেকে কোনো কথা বের হয়নি। প্রত্যেক ব্যক্তির এখনো বিষয়টি মনে আছে এবং তিনদিন ধরে জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে এ বিষয়ে আলোচনা হয় কিন্তু আজও এটি নিয়ে সবাই নিরব। আমার প্রশ্ন, ‘কে এই কপট মানুষগুলোকে বিশ্বাস করবে?’ এই মানুষগুলোই আবার এখন নারীশক্তি নিয়ে সোচ্চার।”

তিনি বলেন, “পুরো বিষয়টি তাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে এবং মনুষ্যত্বের প্রতি তার বিশ্বাস ওঠে গেছে। ‘ওটি আমার জন্য খুবই জটিল একটি বছর ছিল। প্রথমত, আমার ব্যাপারে সরাসরি কেউ কথা বলেনি এবং তার ওপর সেই কুকর্মকারীর সঙ্গে সবাই তখনো কাজ করে যাচ্ছিল।”

শুটিং সেটের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এ অভিনেত্রী বলেন, “আমাকে ধাক্কা দিয়ে ভীতি প্রদর্শন করার চেষ্টা করছিল। সে আমার হাত ধরছিল, ধাক্কা দিচ্ছিল এবং কোরিওগ্রাফারকে সরে যেতে বলে নিজেই শেখাচ্ছিল কিভাবে নাচতে হবে। পরে জানতে পারি, সে আমার সঙ্গে অন্তরঙ্গ দৃশ্য করতেও চেয়েছিল। এটি ছিল হাস্যকর।”

তনুশ্রী বলেন, “গানটিতে সেই অভিনেতার অভিনয়ের কথা ছিল না। প্রাথমিক পর্যায়ে চুক্তিপত্রে লেখা ছিল এটি তার একার গান। তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে আমি এক কর্ণারে গিয়ে বসে এর প্রতিবাদ করছিলাম। আমি তার সঙ্গে গান করতে চাইছিলাম না কারণ তার অন্তরঙ্গতাই আমি খুব অস্বস্তিবোধ করছিলাম।”

তিনি আরও বলেন, “কিন্তু তনুশ্রী যখন অন্তরঙ্গ দৃশ্য করতে অস্বীকৃতি জানায় সেই অভিনেতা একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে ডেকে এই অভিনেত্রীকে ভয় দেখান। তারা এসে আমার গাড়ি ভেঙে দেয়। এটি একদল মানুষের সহিংসতার মতো ছিল, আমি কখনই যার সম্মুখীন হইনি।”

তনুশ্রী জানান, খুব শিগগির তিনি পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারের শিকার হন এবং শুটিং সেট দেখলেই তিনি ভয় পেতেন।

তিনি বলেন, “সেই বিতর্কের পর আমি ৩০-৪০টি সিনেমার প্রস্তাব পেয়েছিলাম, কিন্তু এতটাই ভয় পেতাম যে শুটিং সেটে যেতে পারিনি। কারণ এই ধরনের ঘটনার পর আপনি ভাববেন সবাই একই রকম। আপনার কখনই মনে হবে না, ভালো মানুষের সঙ্গেও আপনি কাজ করেছেন।”

সেই ঘটনার পর ধীরে ধীরে ইন্ডাস্ট্রি থেকে সরে যেতে থাকেন তনুশ্রী। সর্বশেষ ২০১০ সালে অ্যাপার্টমেন্ট সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি।

এই অভিনেত্রী বলেন, “নিজেকে সারিয়ে তোলার জন্য আমার সরে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল। এখন এ বিষয়ে আমার আরো স্বচ্ছ্ব ধারণা হয়েছে। এখন যদি আমি অভিনয়ে ফিরে আসি তাহলে একশ ভাগ নিশ্চিত, ভালো বিষয় বাছাই করব, ভালো মানুষের সঙ্গে কাজ করব। তা না হলে আর ফিরব না।”