খিলগাঁওয়ের কাউন্সিলর মিল্টনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ

1048

ঢাকা: কারাবন্দি বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের ঘনিষ্ট সহযোগী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর  ওয়াহিদুল হাসান মিল্টনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসা, ভূমি দখলসহ নানা অপরাধের অভিযোগ থাকলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন খিলগাঁওয়ের কাউন্সিলর ওয়াহিদুল হাসান মিল্টন।

এই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েই বেপরোয়া হয়ে পড়ে ওয়াহিদুল হাসান মিল্টন। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অবৈধ দখলদার, বিচারের নামে ঘুষ নিয়ে পক্ষপাতদুষ্ট রায় দেয়া, জুয়ার আসর চালানো, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে সে। তার ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়নি।
এলাকাবাসীর অভিযোগে জানা যায়, খিলগাঁও জাগরণী সংসদ ক্লাব একটি ঐতিহ্যবাহী ক্লাব হলেও এখন সেখানে প্রতিদিন ইয়াবা, মদ ও জুয়ার আসর বসে। এতে বহু যুবক নেশাগ্রস্ত হয়ে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। কাউন্সিলর ওয়াহিদুল হাসান মিল্টন তার লাইসেন্স করা পিস্তল ও শর্টগান দেখিয়ে এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক প্রায় সকল ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসা দখল করে একক আধিপত্য বিস্তার করেছে। প্রতিমাসে ডিশ ও ইন্টারনেট লাইন দিয়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সে।
কয়েক বছর পূর্বেও কাউন্সিলর ওয়াহিদুল হাসান মিল্টন ছিলেন বেকার যুবক। বর্তমানে তার নিজ নামে ও তার স্ত্রীর নামে দুবাই ও মালয়েশিয়ায় একাধিক বাড়ি, দোকানপাট ও ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা গচ্ছিত রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে তার নামে-বেনামে একাধিক ফ্ল্যাট ও গাড়ি রয়েছে বলে জানা যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, খিলগাঁও বাগিচা সংলগ্ন লেগুনা স্ট্যান্ড, জোড়পুকুর মাঠের সিএনজি স্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন সিএনজি, লেগুনা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড থেকে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা যায় কাউন্সিলর মিল্টনের কাছে। এছাড়া জোড়পুকুর মাঠ সংস্কারের নামে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। খিলগাঁও মডেল কলেজের ক্রয় কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠানের অনেক কেনাকাটায় তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়। যা ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক সমালোচিত। খিলগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় ও খিলগাঁও গার্লস স্কুলের নির্মাণ কাজের দায়িত্ব নিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই খিলগাঁও পাকা মসজিদ মার্কেট কমিটির সভাপতি হিসেবে ক্ষমতার জোড়ে জালিয়াতির মাধ্যমে দোকান বরাদ্দে অনেক অনিয়ম করেছেন। যার কারণে প্রকৃত প্রাপকরা তাদের যথাস্থানে দোকান বুঝে পাননি। এছাড়াও খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সহ-সভাপতি হিসেবে নিজে ও তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে মার্কেট থেকে আর্থিক সুবিধা আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কাউন্সিলর মিল্টনের ছত্রছায়ায় তার সেকেন্ড ইন কমান্ড শাহাদাত হোসেন সাদু খিলগাঁও রবি সংঘ নামের একটা ক্লাব চালু করে জুয়া ও মাদকের আসর বসাচ্ছে। মিল্টনের বড় দুই ভাই বাদল ও কাজল বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও ছোট ভাই তৌহিদুল হাসান টফি বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার সেকেন্ড ইন কমান্ড। খালেদের হয়ে সে খিলগাঁওয়ের বিভিন্ন নির্মাণাধীন ভবন থেকে চাঁদাবাজি করে। এছাড়াও সে খিলগাঁও সি ব্লকের গার্লস স্কুলের সামনের সড়ক দখল করে টফি নামে বাজার বসিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। খিলগাঁও তালতলা সুপার মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় জোয়েনা হকের ১৮৬ নম্বর ও মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ’র ১৮৫ নম্বর মালিকানাধীন দুইটি দোকান পিস্তল ঠেকিয়ে দখল করে রেখেছে এবং তাদের কাছ থেকে প্রায় দশ লাখ টাকা আত্মসাত করেছে। সে খিলগাঁও সি ব্লকের ৩৬৯/সি, ইডেন রিয়েল এস্টেট বাড়ির ৭ম তলার একটি ফ্ল্যাট জোরপূর্বক দখলে নিয়ে ওই ফ্ল্যাটের মালিককে ভয়-ভীতি দেখিয়ে নামমাত্র টাকা দিয়ে ফ্ল্যাটটি নিজের নামে করে নিয়েছে।
এছাড়াও মিল্টনের বড় দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে খিলগাঁও মেইন রোডের (৯০৯/সি), ‘চায়ের বাড়ি’ নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং এক নিঃসন্তান দম্পতির ট্রাস্টিকৃত সম্পত্তি (প্লট নং ৫৮১/সি) জোড়পূর্বক দখলের অভিযোগ রয়েছে (যা বর্তমানে ‘ক্যাফে কাঠমুন্ডু’ নামে রয়েছে)।

কাউন্সিলর ওয়াহিদুল হাসান মিল্টনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি এসব অভিযোগ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কে কি অভিযোগ করলো, তা তদন্ত করে দেখেন। তাহলেই সব বুঝতে পারবেন। সামনে নির্বাচন তাই অনেকেই অনেক কিছু বলবে। তবে চায়ের বাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি তার ভাজিতার বলে স্বীকার করেন তিনি। আরআর