কবি ও গীতিকার মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী। ৭০’র দশক থেকে কবিতা লেখার শুর। জন্ম ১৯৫৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর ফেনীর পরশুরাম উপজেলা গুথুমা চৌধুরী বাড়িতে। কবির উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে-‘স্মৃতির এপিটায়ে রৌদ্দুর’, ‘স্মৃতির ক্যানভাসে’, ‘একটি রক্তাক্ত শার্ট’, ‘ভালোবাসার গৌরচন্দ্রিকা’, ইত্যাদি। কবি ও কবিতা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনলাইন নিউজ পোর্টাল এখন’র কাছে সাক্ষাৎকার দেন কবি। কবির মুখোমুখি হয়েছিলেন শাহাদাত হোসেন তৌহিদ
এখন: কিভাবে কবিতার জগতে এলেন এবং কবিতা লেখায় উদ্বুদ্ধ হলেন?
ইকবাল চৌধুরী: সে সত্তর’র দশক থেকে কবিতা চর্চায় আসি। তবে মুলত আমি ৮০’র দশকে কবিতা কিংবা লেখালেখির সাথে যুক্ত হই। আর কবিতা জীবনের সঙ্গে বয়ে যাওয়া একটি বিষয়। কবিতা লেখার চেয়ে কবি মন হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। সর্বোপরি আমার জন্মে পর থেকে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম, তৎকালী সময়ে মানুষের উপরে মানুষের শোষন, বঞ্চনা, নির্যাতন নিপীড়ন ইত্যাদি থেকেই নিজের ভেতরে এক ধরনের প্রতিবাদ তৈরি হয়। সে থেকে আমি কবিতা লেখার উদ্বুব্ধ হই। তবে কবিতার কাজ শুধু প্রতিবাদই নয়, সেখানে জগতের সকল কিছুই অনুষঙ্গ। সে হিসেবে প্রেম-ভালোবাসা, জীবনের পাওয়া না পাওয়া এগুলোও সংশ্লিষ্ট। সে ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও আমার কবি জীবনে প্রভাব পড়েছে।
এখন: কৈশোরে প্রেমে পড়েছিলেন নিশ্চয়ই?
ইকবাল চৌধুরী: প্রেম-ভালোবাসাও আমার কবি জীবনে বেশ তাড়া করে বেড়িয়েছিল। কৈশোরে আমি জামালপুর স্কুলে পড়ার সময়ে একটি মেয়ের প্রেমে পড়েছিলাম। মেয়েটিকে প্রেম নিবেদন করে অনেক কবিতা লিখেছি। তাই আমার কবিতায় প্রেমের বিষয়টি অনেকবার এসেছে।
এখন: নিজেকে কোন দশকের কবি হিসেবে মনে করেন?
ইকবাল চৌধুরী: কবি হিসেবে যদি নিজেকে দশক নির্বাচন করতে হয় তবে আমি বলব আমি ৮০’র দশকের কবি। তার আগের সময়টা ছিল আমার কবিতা লেখালেখির শুরুর সময়। তখন বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার চিঠিপত্র কলামে লিখতাম। লিখতে লিখতে একটা সময় কবিতার মধ্যে ঢুকে যাই। কবিতার মায়ায় পড়ে যাই। তখন থেকে এখনো কবিতা লেখার মধ্যেই রয়েছি। আজীবন এ পথে থাকতে চাই।
এখন: কবিতার মধ্য দিয়ে কবিরা কিসের আহবান করে থাকেন?
ইকবাল চৌধুরী: কবিতার মধ্য দিয়ে কবিরা সুন্দরের আহবান করে। জগতের যেসব অসুন্দর বিষয় রয়েছে তা থেকে সুন্দরের দিকে আহবান করে। কবিতা, গান, নাটক, গল্প, উপন্যাসসহ সাহিত্যের সব বিষয়গুলো মানুষের বেঁচে থাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এগুলো না থাকলে সভ্যতা বৃথা।
এখন: একজন কবির গন্তব্যটা কোথায়?
ইকবাল চৌধুরী: কবির নির্দিষ্ট কোন গন্তব্য নাই বলে মনে করি। কবিতা হচ্ছে একটি অনি:শেষ যাত্রা। এই যাত্রার দিকে কবিরা ছুটছে। আমরা সে যাত্রার যাত্রী। তবে সাধারণ মানুষের বিপরীত দিকেই কবি হাঁটেন। তার চিন্তা ভাবনা অনেকের চেয়ে এগিয়ে থাকে। সাধারণগণ যেসব বিষয় নিয়ে ভাবেন না কবি লেখকরা সেসব বিষয় নিয়ে ভাবেন। এ ক্ষেত্রে কবিগণ ব্যাতিক্রম বলা যায়।
এখন: কি মনে হয়, কবিতা গান কখনো হারিয়ে যাবে?
ইকবাল চৌধুরী: না, কখনোই না, গান কবিতা কখনোই হারাবে না, এসবের সাথে মানুষের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। কবিতা গান বিনোদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে প্রত্যেকটি মানুষের কাছে এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কবিতা সুন্দরের কথা বলে, আর সুন্দরজীবন যাপন করা আমাদের সকলের কামনা। সভ্যতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সাহিত্য, কবিতা, গান, নাটক ইত্যাদি। এগুলো ছাড়া মানুষ প্রাণহীন। মানুষের ভেতরে প্রাণ না থাকলে যেমন মানুষ মানুষ বাঁচে না তেমনি এ কবিতা সাহিত্য এগুলো মানুষের প্রাণের অংশ।
এখন: একজন কবির সঠিক পেশাটা কি হওয়া উচিত বলে করেন?
ইকবাল চৌধুরী: পেশাতে কোন আপত্তি নেই। যে কোন পেশা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সৃজনশীল কোন একটি পেশা হলে ভালো। কবি যেহেতু পাঠককে সর্বদাই বিনোদন দিয়ে থাকেন। তাই তাকে যে কোন একটি সৃজনশীল কাজে থাকলে ভালো।
এখন: নিজের যে কবিতাটি বার বার মনে পড়ে?
ইকবাল চৌধুরী: এটি একটি নষ্টালজিক কবিতা। অনেক আগে লিখেছি এখনো আমাকে তাড়া করে বেড়ায়।
-আপন হাতে সাজানো বাগান
আমি নিজেই তার মালি
রোজ প্রভাতে তাই আমি
আপন হাতে জল ঢালি
নদীর জল ফুরিয়ে গেলে
পড়ে থাকে শূন্য বালি
শূন্য ফুলের বাগান মানে
প্রিয়া বিনে হৃদয় খানি
ভিনদেশি এক বন্ধু আমার
নীল সাগরে ভাসে
হাত বাড়ালে দু:খগুলো
শুধু ছুটে আসে
কবিতার শব্দ মুছে যাবে
মুছে যাবে একটি নাম
দোয়েল ঢাকা ভোরে কামিনি
ফুটবে কে দেবে আমার দাম।
এখন: আপনি তো অনেক গানও লিখেছিলেন?
ইকবাল চৌধুরী: হ্যাঁ, দীর্ঘদিন ধরে আমি বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রথম শ্রেণির একজন গীতিকার। আমার রচিত অনেক গান বিভিন্ন শিল্পীরা গেয়েছেন। আমার রচিত গানগুলো যারা গেয়েছেন তাদের মধ্যে, বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী প্রবাল চৌধুরী, সুবীর নন্দী, শেফলী ঘোষ, শাম্মী আখতার, জয়ন্তী লীলা, কল্পনা লালা, ফাহমিদা রহমান, ফাহমিদা নবী, আবদুল মান্নান রানা, সৈকত দাস, প্রমদ দত্ত, সাইফুদ্দিন মাহমুদ খানসহ আরো অনেক শিল্পিরা গেয়েছেন। আর তরুণ বর্তমান প্রজন্মের শিল্পীদের অনেকেও আমার রচিত অনেকগুলো গান গেয়েছেন।
এখন: এখন কিভাবে কাটছে সময়?
ইকবাল চৌধুরী: একটা প্রবাদ আছেনা- “ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান বানে”, ঠিক তেমনই। তো এখনো কবিতা লেখা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে নিজেকে জড়িয়ে রাখছি। পাশাপাশি নিজের একটি স্কুল (ফেনী গ্রামার স্কুল) দেখাশোনা করছি।
এখন: ধন্যবাদ আপনাকে
ইকবাল চৌধুরী: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এবং এখন২৪ডটকম পরিবারকে।