২০১৮ সালের আগে ইউরোপে পান রফতানি হচ্ছে না

1191

এখন রিপোর্ট।।

নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ায় ২০১৮ সালের আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে বাংলাদেশের পান রফতানি সম্ভব হচ্ছে না।
দেশীয় পানে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ‘স্যালমোনেলা’ থাকার অভিযোগ এনে ইইউ ২০১৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং ও বাংলাদেশ ফ্রুট ভেজিটেবল এলাইড প্রোডাক্ট এক্সপোর্টারি অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং-এর উপপরিচালক (রফতানি) মুহা. আনোয়ার হোসেন খান দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত সপ্তাহে পান রফতানি নিষেধাজ্ঞা বাড়ানোর কথা জানিয়ে দিয়েছে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত নতুন করে জারি করা এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।’

তিনি বলেন, ২০১৮ সাল পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ব্যাকটেরিয়া ‘স্যালমোনেলা’ পরীক্ষার সুযোগ-সংবলিত স্বীকৃত ল্যাবরেটরি থাকার বিষয় নিশ্চিতসহ কতিপয় শর্ত পূরণ করে আগেই বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের ১৭টি দেশে পান রফতানি করা যাবে।’

উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৩০ জুন ইইউ-এর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ইতিপূর্বে ইইউ কিছু শর্ত সাপেক্ষে বাংলাদেশ থেকে ফের পান পাতা আমদানিতে আগ্রহ প্রকাশ করে।

ইইউ-এর এ আগ্রহে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি রফতানিকারকদের পান পাতা থেকে ‘স্যালমোনেলা’ ব্যাকটেরিয়া অপসারণসহ কতিপয় শর্ত পূরণের অনুরোধ জানায়।

রফতানিকারকদের কাছে উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং-এর এসব শর্তগুলোর মধ্যে ছিল—নিবন্ধিত রফতানিকারকরাই শুধুমাত্র পান রফতানি করতে পারবে; কনটাক্ট ফার্মিং-এর আওতা ব্যতীত স্যালমোনেলা মুক্ত পানের বিষয়টি নিশ্চিত না হয়ে কোনো পান রফতানি করা যাবে না; অ্যাকশন প্ল্যান মোতাবেক পান উৎপাদন ও পরিবহনসহ এইচএসিসিপি নীতিমালা অনুসরণ করে সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত অবস্থায় প্যাকেজিং নিশ্চিত করতে হবে; স্যালমোনেলা মুক্ত রফতানিযোগ্য পান উৎপাদনের লক্ষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তৈরি অ্যাকশন প্ল্যান মোতাবেক নির্বাচিত ১৩টি জেলার ৫৯৫ জন কৃষকের তালিকা হতে কনটাক্ট ফার্মিং-এর জন্য কৃষক নির্বাচন ও চুক্তি করতে হবে; চুক্তিবদ্ধ কৃষকের তালিকা (নিবন্ধন ফর্মের মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ) উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং-এ জমা দিতে হবে; বিসিএসআইআর থেকে স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া ফ্রি টেস্ট রেজাল্টের ভিত্তিতে পিসি ইস্যু করা হবে ইত্যাদি।

এ নির্দেশনার আলোকে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. বাহানুর রহমান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর লতিফুল বারীকে দিয়ে পানের পাতা থেকে স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া অপসারণের উপায় আবিষ্কার করা হয়।
উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং এবং রফতানিকারকদের নানা উদ্যোগের পরেও সন্তুষ্ট না হওয়ায় ইইউ আবারও শর্তসপেক্ষে পান আমদানির আগ্রহ জানিয়ে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশ ফ্রুট ভেজিটেবল এলাইড প্রোডাক্ট এক্সপোর্টারি অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা মো. মঞ্জুরুল ইসলাম দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘স্যালমোনেলা অপসারণের উপায় উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে। এখন কন্টাক্ট ফার্মিংসহ অন্যান্য শর্ত পূরণ করে ২০১৮ সালের আগেই পান রফতানি করা যাবে।’
হরটেক্স ফাউন্ডেশনের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘পান সরাসরি চিবিয়ে খেতে হয় বিধায় স্বাস্থ্যসম্মত দিকগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা দরকার। পান একটি অর্থকরী ফসল। বাংলাদেশ থেকে ৩৫০ কোটি টাকার পান বিদেশে রফতানি হয়। কাজেই বিদেশি ভোক্তাদের কথা মাথায় নিয়েই আমাদের কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং-এর উপপরিচালক (রফতানি) মুহা. আনোয়ার হোসেন খান বলেন, ‘নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মতের বিষয় নিশ্চিত না হয়ে কোনো পণ্য বিদেশে রফতানি করা হবে না। নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে পড়ার চেয়ে রফতানি না করাই ভালো।’