১০ মাসে ৬৪৬ জন ধর্ষণের শিকার

801

চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬৪৬ জন নারী। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছেন ৫৩ জনকে। আর যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৪১ জন নারী।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে নারী ও কন্যা নির্যাতন চিত্র ২০১৮-এর সমীক্ষায় এসব তথ্য তুলে ধরে। বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর তোপখানা সড়কের সুফিয়া কামাল ভবনের মিলনায়তনে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপপরিষদ এই সমীক্ষা করে। ১৪টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এই সমীক্ষা করা হয়।

সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৬৫ জন নারী, ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১১৫ জন নারীকে এবং শ্লীলতাহানির শিকার ৫৫ জন নারী। এ ছাড়া উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছেন ১৪০ জন নারী এবং উত্ত্যক্তে শিকার হওয়ার কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১৪ জন নারী।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, “বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার মূলে রয়েছে মনস্তত্ত্ব, পিতৃতন্ত্র ও বৈষম্যমূলক আইন। ইতিহাস, দর্শন, শিক্ষা কারিকুলাম নারীর প্রতিকূলে। রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নও নারীর প্রতি সহিংসতার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে। রাষ্ট্র আপসহীন না হলে এবং নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ না করলে সমাজের ভেতরে এই অবক্ষয় রুখে দাঁড়ানো যাবে না। তিনি আরও বলেন, পরিবারের দায়িত্ব নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা। এ ক্ষেত্রে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে, নাগরিক আন্দোলনকে আরও সোচ্চার করতে হবে এবং গণমাধ্যমকে আরও সজাগ থাকতে হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আইনজীবী মাকছুদা আখতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অগ্রগতির পাশাপাশি নারীর প্রতি সহিংসতা, প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা, রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা, হাইকোর্টের রায়, নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ১৮টি সুপারিশ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে পারিবারিক মূল্যবোধ গড়ে তুলতে হবে। ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার নারীকে দায়ী করার মানসিকতা পরিহার করতে হবে।

সমীক্ষা প্রতিবেদন তুলে ধরে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের গবেষণা কর্মকর্তা আফরুজা আরমান বলেন, “নারী ও কন্যা, যারা ছাত্রী এবং বয়স তুলনামূলক কম, তারাই বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বেশির ভাগ নারী বা কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে পরিচিত মানুষজন বা প্রতিবেশী দ্বারা। তরুণ প্রজন্ম ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে, যা খুবই উদ্বেগজনক। অভিযুক্ত ব্যক্তির পেশাগত বিশ্লেষণে দেখা যায়, নারী সবচেয়ে বেশি নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে শিক্ষকের দ্বারা।”

সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ (২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর) ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য, ‘ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- মহিলা পরিষদের সহসভাপতি নাহার আহমেদ, রেখা চৌধুরী, লক্ষ্মী চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সম্পাদক রাখী দাশ পুরকায়স্থ, সীমা মোসলেমসহ বিভিন্ন পেশার ৫২ জন নারী।