হাতিয়ায় নির্বাচনী হাওয়া: বিএনপিতে নতুন চমক রহমত

4465

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশের মতো নির্বাচনের হাওয়া বইছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া নিয়ে গঠিত নোয়াখালী-৬ আসনেও। পাড়া-মহল্লা, রেস্টুরেন্ট ও চায়ের দোকানে আলোচনা হচ্ছে নির্বাচন নিয়ে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর কারণে সর্বত্র এমনটি পরিলক্ষিত হচ্ছে।

এ উপজেলায় একটি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন রয়েছে। আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে একাধিক হেভিওয়েট নবীন-প্রবীণ প্রার্থী মনোনয়ন পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন। তবে নতুন নেতৃত্বের প্রতি মানুষের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে।

 

দ্বীপ হাতিয়া আসনের বর্তমান সাংসদ আয়েশা ফেরদৌস এবারও মনোনয়ন পাওয়ার জন্য কেন্দ্রে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মোহাম্মদ আলী এই আসনে মনোনয়নের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন হাইকমান্ডের গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার জন্য।

আরেক প্রবীণ সাবেক সাংসদ ও হাতিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অলি উল্যাহর নামও শোনা যাচ্ছে। তবে এ আসনে মোহাম্মদ আলী প্রার্থী হলে তার সঙ্গে নতুন মুখ ব্যবসায়ী মাহমুদ আলী রাতুলের মধ্যে ভোটযুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বিএনপিতে নতুন মুখ রহমত উল্লাহ চমক দেখাতে পারেন আগামী নির্বাচনে।

জেলার রাজনীতিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসন বলে চিহ্নিত এই এলাকার বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের আয়েশা ফেরদৌস আলী। ২০১৪ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রার্থিতা করে বিজয়ী হন তিনি। আগামীবারও দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে প্রার্থিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। নৌকা প্রতীকের দাবিদার হিসেবে মাঠে আছেন বর্তমান এমপির স্বামী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মোহাম্মদ আলী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক ওয়ালীউল্যাহ ও মাহমুদ আলী রাতুল।

অন্যদিকে, বিএনপি’র নতুন মুখ কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা রহমত উল্লাহ রহমত এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করছেন এবং গ্রামগঞ্জ চষে বেড়াচ্ছেন। রহমত উল্লাহ রহমতের পক্ষে গত কয়েক মাস ধরে হাতিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক প্রচার প্রচারনা চলছে।

হাতিয়া উপজেলা বিএনপি, পৌর বিএনপি ও বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা তার পক্ষে মাঠে নেমেছেন। তরুন প্রজন্মের কাছে অত্যন্ত গ্রহনযোগ্য এই ব্যাক্তিটি ইতিমধ্যে জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে চমক সৃষ্টি করেছেন। বিএনপির ভঙ্গুর অবস্থায় দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা এখন অনেকটাই চাঙ্গা। বিভিন্ন সেবামূলক এবং সাংগঠনিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে তিনি সর্বস্তরের মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন।

দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব রহমত উল্লাহ রহমতের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব ব্যাক্ত করেছেন। এ আসনে বিএনপি অনেকটাই অস্তিত্ব সংকটে ছিল। সাংগঠনিক দূর্বলতার কারনে ঘুরে দারাতে পারছিল না বিএনপি। সংস্কারপন্থী নেতা মোহাম্মদ ফজলুল আজিমকে দল থেকে বহিস্কারের পর দলে যে শূন্যতা দেখা দিয়েছে তা এখনও পূরণ হয়নি। দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা দলীয় প্রার্থী হিসেবে রহমত উল্লাহ রহমতকে দেখতে আগ্রহী।

একসময় স্থানীয় বিএনপি নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়লেও বর্তমানে অনেকটা শক্তিশালী। ধানের শীষের অসংখ্য ভোটার রয়েছে। এখন প্রয়োজন মাঠপর্যায়ে ভোটারদের সংগঠিত করা।

হাতিয়ায় নির্বাচনের ইতিহাস

১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে মোহাম্মদ আলী এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক ওয়ালী উল্লাহ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ আলী পরাজিত হন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনেও মোহাম্মদ আলী জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন করে পরাজিত হন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি মাহামুদুর রহমান বেলায়েতের হাত ধরে মোহাম্মদ আলী আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে মোহাম্মদ আলী নৌকার টিকিট না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।

২০০৮ সালে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হন। কিন্তু ঋণ খেলাপি হওয়ায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। তার স্ত্রী আয়েশা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী আয়েশা ফেরদৌস আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য হন। এ আসনে আওয়ামী লীগ কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত। এক গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক ওয়ালী উল্যা। অন্য গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী। দুই গ্রুপের মধ্যে দলীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দফায় বন্দুকযুদ্ধ ও সংঘর্ষে গত এক বছরে ডজন খানেক নেতাকর্মী নিহত ও পাঁচ শতাধিক আহত হন।

এ আসনে আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী মাহমুদ আলী রাতুল। মোহাম্মদ আলী ও ওয়ালীউল্যাহর দ্বন্দ্বের সুযোগে রাতুল দলীয় প্রার্থী হিসেবে অগ্রাধিকার পেতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগে। রাজনীতিতে নবাগত হলেও ইতিমধ্যে তিনি হাতিয়ায় নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন।

২০০৮ সালে বিএনপির প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন সাখাওয়াত হোসেন শওকত। ঢাকার এই ব্যবসায়ী নবম জাতীয় নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পরই বিএনপির অবস্থা দুর্বল হতে থাকে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে সবচেয়ে আলোচিত সম্ভাব্য প্রার্থী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফজলুল আজিম।

১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি এ আসনের এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এক সময় বিএনপি করা মোহাম্মদ ফজলুল আজিম বিএনপির বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র এবং সংস্করেপন্থী হওয়ায় দল থেকে বহিস্কৃত হয়েছেন। এসব কারণে এবারের নির্বাচনে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে রহমত উল্লাহ মনোনয়ন পেলে নতুন চমক দেখাতে পারেন।