সোনালি প্রজন্মের স্বপ্ন ভেঙে ফাইনালে ফ্রান্স

754

এবারও পারল না বেলজিয়াম। অলরেডসদের দুঃখ হয়ে রইল বিশ্বকাপের আরও একটি সেমিফাইনাল। মঙ্গলবার বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্মের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালের টিকিট কাটল ফ্রান্স। সেন্ট পিটার্সবার্গে দিদিয়ের দেশমের শিষ্যরা ১-০ গোলে পরাজিত করল রবার্তো মার্টিনেজের বেলজিয়ামকে।

এই জয়ের মধ্য দিয়ে ২০০৬ সালের পর আবারও বিশ্বকাপের স্বপ্নের ফাইনালে জায়গা করে নিল ফ্রান্স। ফরাসিদের সামনে এখন ১৯৯৮ সালের পর আবারও বিশ্বকাপের ট্রফি উঁচিয়ে ধরার হাতছানি।

আগামী ১৫ জুলাই, রবিবার ফাইনালে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ কে, সেটাও জানা যাবে বুধবারের দ্বিতীয় সেমিফাইনালের শেষে। ইংল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়ার মধ্যকার ম্যাচের বিজয়ী দলই ফাইনালে ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে।

রাশিয়া বিশ্বকাপের শুরু থেকেই অসাধারণ পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছে ফ্রান্স-বেলজিয়াম। গ্রুপ পর্ব, শেষ ষোলো কিংবা কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের নজরকাড়া পারফরম্যান্স উপভোগ করেছে গোটা ফুটবল দুনিয়ার ভক্ত-অনুরাগীরা।

ফ্রান্স-বেলজিয়াম গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ২০১৮ বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের বাধা অতিক্রম করে। শেষ ষোলোতে আর্জেন্টিনাকে আর কোয়ার্টার ফাইনালে উরুগুয়েকে বিদায় করে রাশিয়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের টিকিট কাটে দিদিয়ের দেশমের ফ্রান্স। সেই সঙ্গে ২০০৬ সালের পর আবারও সেমিতে জায়গা করে নেয় গ্রিজম্যান-এমবাপ্পেরা।

অন্যদিকে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের পর আবারও স্বপ্নের সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয় বেলজিয়াম। কঠিন এই পথের শেষ ষোলোতে জাপানকে পরাজিত করে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বেলজিয়াম বিদায় করেছে ফেবারিট ব্রাজিলকে। এ কারণেই সেমিফাইনালে ফ্রান্স-বেলজিয়ামের ম্যাচে আলাদা করেই নজর রেখেছিল গোটা দুনিয়ার ফুটবলপ্রেমীরা।

সেন্ট পিটার্সবার্গেও রোমাঞ্চকর ফুটবল ম্যাচ উপহার দিয়েছে দুই দল। শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলে তারা। কিন্তু ম্যাচের ১৯ মিনিটে হ্যাজার্ডের দারুণ এক শট বারের উপর দিয়ে হেড দিয়ে ফিরিয়ে দেন রাফায়েল ভারানে। প্রথমার্ধের ২১ মিনিটে গোলের আরও একটি সুযোগ পায় বেলজিয়াম। কিন্তু টবি এল্ডারওয়ারেল্ডোর অসাধারণ শট রুখে দেন ফরাসি গোলরক্ষক লরিস। তার পরের মিনিটেই পাল্টা আক্রমণ করে দিদিয়ের দেশমের দল। কিন্তু অলিভিয়ের জিরুড তা কাজে লাগাতে পারেননি।

world cup২৭ মিনিটে কেভিন ডি ব্রুইন ফরাসি ডিফেন্ডারদের বোকা বানিয়ে প্রতিপক্ষের জালে বল জড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তা কাজে লাগাতে পারেননি তার সতীর্থরা। ৩০ মিনিটে অ্যান্তোনিও গ্রিজম্যানের ফ্রি-কিক থেকে হেডে বেলজিয়ামের জাল খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন জিরুড। এবারও ব্যর্থ দলের এই অভিজ্ঞ ফুটবলার।

৩২ মিনিটে গ্রিজম্যান কিছুটা ফাঁকা জায়গা পেয়েছিলেন। কিন্তু তার শট গোলপোস্টের অনেকটা বাইরে দিয়ে চলে যায়। ৩৩ মিনিটে জিরুডকে আবারও গোলের এক সুবর্ণ সুযোগ করে দেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। কিন্তু এবারও ব্যর্থ দেশমের আস্থাভাজন জিরুড।

৩৬ মিনিটে গ্রিজম্যান একক প্রচেষ্টায় গোল করতে চেয়েছিলেন। মাঝ মাঠ থেকে বল নিয়ে সামনের দিকে এগিয়েও যাচ্ছিলেন দুর্দান্তভাবে। কিন্তু তার শট গোলপোস্টের অনেক দূর দিয়ে বাইরে চলে যায়।

৩৯ মিনিটে এমবাপ্পে গোলের পথ তৈরি করে দেন বেঞ্জামিন পাভার্ডকে। সঠিক পথেই এগোচ্ছিলেন ২২ বছরের এই সেন্টারব্যাক। কিন্তু তার শট ফিরিয়ে দেন বেলজিয়ামের গোলরক্ষক থিবাউ কোর্তোয়া। এর পরের সময়টাতেই গোলের জন্য চেষ্টা করে দুই দল। কিন্তু প্রতিপক্ষের জাল খুঁজে পায়নি কেউ। এর ফলে গোলহীন ড্র নিয়েই বিরতিতে যায় দুই দল।

পরিসংখ্যান বলছে, প্রথমার্ধে ৬০ ভাগ বল দখলে রেখেছে বেলজিয়াম। অন্যদিকে ফ্রান্সের ৪০ ভাগ। কিন্তু প্রথমার্ধের বেশির ভাগ সময়ই মাঠে রাজত্ব করেছে দেশমের শিষ্যরা। যেমন গোলের লক্ষ্যে ফরাসিদের শট ছিল ১১টি। বিপরীতে বেলজিয়ামের ছিল মাত্র তিনটি।

দ্বিতীয়ার্ধেও সুন্দর ফুটবল উপহার দেওয়ার ইঙ্গিত দেয় দুই দল। ৪৭ মিনিটে বেলজিয়ামকে এগিয়ে দেওয়ার সুযোগ পান রোমেলু লুকাকু। অলরেডসদের ভরসার প্রতীক হলেও শেষ চারের প্রথমার্ধে তাকে সেভাবে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ব্যর্থ ছিলেন ফ্রান্সের অলিভিয়ের জিরুডও। দ্বিতীয়ার্ধে ফ্রান্সের প্রথম বড় সুযোগটাও কাজে লাগাতে পারেননি তিনি।

ফ্রান্সের একের পর এক গোল করার চেষ্টার সাফল্য আসে ম্যাচের ৫৭ মিনিটে। অ্যান্থনিও গ্রিজম্যানের কর্নার কিক থেকে পাওয়া বলটিকে দুর্দান্ত হেডে বেলজিয়ামের জালে জড়ান স্যামুয়েল উমতিতি।

৬০ মিনিটে ফ্রান্সের জালে বল জড়ানোর চেষ্টা করেছিল বেলজিয়ানরা। কিন্তু ফেলাইনি-লুকাকুদের প্রচেষ্টা রুখে দেন লরিস। ৬৪ মিনিটে আবারও বেলজিয়ামের দুর্দান্ত এক শট রুখে দেন ফরাসি গোলরক্ষক। তার কিছুক্ষণ পর মারোয়ান ফেলাইনির অসাধারণ হেড গোলপোস্টের সাইডে দিয়ে না গেলেই হয়তো গোল উচ্ছ্বাসে ভাসার সুযোগ পেত অলরেডসরা।

৭৮ মিনিটে এডিন হ্যাজার্ডকে ফরাসিরা না আটকালে হয়তো গোলের দেখা পেতেও পারত বেলজিয়াম। এরপরও চেষ্টা চালিয়ে যায় রবার্তো মার্টিনেজের শিষ্যরা। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি হ্যাজার্ড-লুকাকুদের।

ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে গোল ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুযোগ পায় ফ্রান্স। কিন্তু গ্রিজম্যানের শট রুখে দেন বেলজিয়ামের গোলরক্ষক কোর্তোয়া। এর পরের সময়টাতে কোনো দলই গোলের দেখা পায়নি, যে কারণে ১-০ গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে ফ্রান্স।