সোনারগাঁওকে পর্যটনবান্ধব শিক্ষানগরী গড়ে তুলবো —মাসুদ দুলাল

2188
৯০-এর দশকে আগেই ছাত্র রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ঢাকা কলেজে পড়াশোনাকালীন জড়িয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধুর গড়া সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে। ৯০-এ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রেখেছেন সক্রিয় ভূমিকা। তিনি এ এইচ এম মাসুদ (দুলাল)। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় গ্রন্থনা ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সদস্য। দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছরের রাজনীতিতে আন্দোলন সংগ্রামে সবসময়ই সক্রিয় ছিলেন, ভেঙ্গেছেন বাধার দেয়াল। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে বেঁচে এসেছেন দুলাল। তবুও থেমে যাননি। সেবার যে উদ্দেশ্য নিয়ে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন, সেটিকে পূর্ণ করতে চান নিজেকে মানুষের কল্যাণে নিবেদন করে। নিজ এলাকা নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁওকে গড়ে তুলতে চান পর্যটনবান্ধব শিক্ষানগরী। সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত শহর গড়ার পাশাপাশি সোনারগাঁওয়ের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চান তিনি।

সম্প্রতি এ এইচ এম মাসুদ (দুলাল) মুখোমুখি হয়েছে মাল্টিমিডিয়া পোর্টাল ‘এখন’-এর। ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও প্রাসঙ্গিক নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্টাফ রিপোর্টার হাসান ওয়ালী।

Dulal-2এখন: ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন, ছাত্র রাজনীতি করেছেন। শুরুটা হয়েছিল কীভাবে?এ এইচ এম মাসুদ এ এইচ এম মাসুদ (দুলাল): ৯০-এর আগে ঢাকা কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হই। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ১৯৯৬ সালের আন্দোলন এবং ২০০১ সালে জামায়াত-বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে রাজপথে ছিলাম। এরপর ২০০৩ সালে তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি-সেক্রেটারির সাথে জামায়াত বিএনপির নির্যাতনের শিকার হই। তখন প্রাণপ্রিয় নেত্রী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনা হসপিটালে আমাদের দেখতে গিয়েছিলেন। ২০০৪ সালের ২১ই আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আহত হই। এইভাবেই রাজনীতির সঙ্গে আমার পথচলা।

অনেকেই কেন্দ্রে রাজনীতি করতে চান, তারা এলাকায় যান শুধুমাত্র নির্বাচন করতে। কিন্তু আপনি এলাকার সাধারণ নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ গড়ে তুলেছেন। এটা কী এলাকার প্রতি টান থেকেই?
এলাকায় আমি স্কুল জীবন শেষ করেছি। আর আমার বাবা-মা এলাকাতেই থাকেন। আমি সবসময় চেষ্টা করি যেকোন সামাজিক কর্মকাণ্ডে যেতে, এলাকার মানুষের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে।

Dulal-3আপনার পরিচালিত কার্যক্রমে নতুনত্ব এনেছেন। গতানুগতিক কার্যক্রমের বাইরে গিয়ে বই বিতরণ করছেন।
আসলে রাজনীতিটা গতানুগতিক হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানাতে পারলে সব উন্নয়ন বৃথা হয়ে যাবে। ১৫ই আগস্টে সবাই খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করেছে, আমি ওইদিন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী,কারাগারের রোজনামচা এই ধরণের বই বিতরণ করেছি। যাতে করে সঠিক ইতিহাস সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানতে পারে। বর্তমান সময়ে তরুণরা বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে, এর থেকে মুক্ত করতে গেলে তাদেরকে সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। বাংলাদেশ সম্পর্কে জানাতে হবে। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানাতে হবে।

আপনি ইতোমধ্যেই গণসংযোগ শুরু করেছেন। হাইকমান্ড থেকে কোন গ্রিন সিগনাল পেয়েছেন?
আমি যেহেতু রাজনৈতিক কর্মী। আমার ইচ্ছা জনগণের সেবা করা। আমি ছাত্র রাজনীতি করেছি। নেত্রী চাচ্ছেন সৎ, শিক্ষিত, যোগ্য নেতৃত্ব। আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি। দল যদি মনোনয়ন দেয় এবং যদি নির্বাচিত হই তাহলে সোনারগাঁওকে আধুনিক পর্যটনবান্ধব শিক্ষা নগরী হিসেবে গড়ে তুলবো।

যদি মনোনয়ন না পান, সেক্ষেত্রে কি স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন?
মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়া বিষয় না। নেত্রী নৌকা যাকে দেবেন আমি তার পক্ষেই কাজ করবো। আমি আশা করি নেত্রী সৎ, যোগ্য ব্যক্তিকেই মনোনয়ন দেবেন। এলাকার সাধারণ মানুষ নতুন কাউকে চান। তারা পরিবর্তন চায়। এবং আমি সুখে দুঃখে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করি, তারাও আমার উপর আস্থা রাখতে চায়।

Dulal-1অনেকেই অভিযোগ করেন যে, রাজনীতি ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাচ্ছে। প্রকৃত রাজনীতিবিদরা অবমূল্যায়িত। আপনি কী মনে করেন ?
আসলে বিষয়টা উদ্বেগজনক। রাজনীতিটা রাজনীতিবিদদের হাতে থাকাটাই শ্রেয়। বলে না- বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। বিষয়টা অনেকটা এমন। ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে আসলে রাজনীতিটা ব্যবসায় পরিণত করে। কিন্তু দোষটা রাজনীতিবিদদের উপরেই আসে। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ থাকবে কিন্তু রাজনীতিবিদদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকাটা জরুরি।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিগত নির্বাচনের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে বলে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করছেন…।
বিএনপি অবশ্যই নির্বাচনে আসবে। বিএনপি যে ভুল গতবার করেছে এর পুনরাবৃত্তি আর করবে না আশা করি। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হবে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে বলে আমরা আশাবাদী। আর বিএনপি যদি সহিংসতা করার অপচেষ্টা করে তাহলে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা তা প্রতিহত করতে প্রস্তুত। তারেক জিয়া যতোই চক্রান্ত করুক বাংলাদেশের মানুষ তা প্রতিহত করবে।

আপনার এলাকা সোনারগাঁওকে কেন্দ্র করে বিশেষ কী কী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন ?
আমার লক্ষ্য হচ্ছে সোনারগাঁকে পর্যটন বান্ধব নগরী গড়তে চাই। আমাদের এখানে লোকশিল্প জাদুঘর আছে, যেটাকে কেন্দ্র করে অনেক পর্যটক আসেন। প্রাচীন বিভিন্ন স্থাপনা আছে। সবমিলিয়ে যদি এইগুলোকে সংস্কার করা যায়, তাহলে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা যাবে। এছাড়া প্রযুক্তির কল্যাণে এখন অনেক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এটাকে কাজে লাগিয়ে যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চাই। এবং একইসাথে শিক্ষাক্ষেত্রে আরও উন্নত করতে চাই। নারায়নগঞ্জে এখনও কোন বিশ্ববিদ্যালয় নেই। আমি শিক্ষাক্ষেত্রে আরও অগ্রগতি আনতে চাই। যার মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষ আরও বেশি শিক্ষার সুযোগ পাবে। সব মিলিয়ে সোনারগাঁওকে আধুনিক ও আর্থ সামাজিক উন্নত শহর হিসেবে গড়ে তোলাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।