‘সুন্দর পৃথিবীর কিছুই দেখে না ওরা’

1181

সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেছেন, যখন আমাকে আঘাত করা হয়েছিল তখন এখানেই বসেছিলাম আমরা। তার জন্য আমার বিন্দুমাত্র রাগ নাই। মায়া আছে, করুণা আছে। কেন এটা করেছে? বেহেশতে যাবে বলে। এটা তার মাথায় ঢুকানো হয়েছে একজনকে মারলে বেহেশতে যাওয়া যাবে। পৃথিবীতে তাকিয়ে দেখো। কী সুন্দর। এ সুন্দর পৃথিবীর কিছুই সে দেখে না, জানে না। কেবল জানে একজনকে মারলে বেহেশতে যাবে।

মাথা, পিঠ ও হাতের জখম নিয়ে ১২ দিন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসার পর বুধবার সকালে ছাড়া পান জাফর ইকবাল।

সিলেটে ফিরে বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে বক্তব্য দেন তিনি, যেখানে গত ৩ মার্চ উগ্রপন্থি তরুণ ফয়জুল হাসান ওরফে শফিকুরের ছুরি হামলার শিকার হয়েছিলেন।

বুধবার বিকালে ‘সাদাসিধে কথা শীর্ষক’ অনুষ্ঠানে তিনি শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘দেশের মানুষ, আমার প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীরা আমাকে কতোটা ভালোবাসা দিয়েছে তা আমি ফিরিয়ে দিতে পারবো না। আমি তাদেরকে আজীবন ভালোবাসবো। আমি জানিনা তোমাদের ভালোবাসার প্রতিদান দিতে পারবো কিনা। পাশাপাশি তিনি খোদার কাছে কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন।’

তিনি বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন। নিশ্চয় তিনি আমাকে দিয়ে ভালো কিছু করাতে চান। এখানেও একজন হয়তো আছে। যে ভাবছে, পারলাম না আরেকবার অ্যাটেম নিতে হবে। তার উদ্দেশে বলছি, আমার সঙ্গে কথা বলতে আসো। অস্ত্রটা বাসায় রেখে আসো। আমি শুনতে চাই, কেন তোমার এত কষ্ট।’

জাফর ইকবাল বলেন, আমাকে নাস্তিক বলো? আমি কোরআন শরিফ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিখুতঁভাবে পড়েছি। সেখানে একটি আয়াত আছে, তুমি যদি একজনকে মারো, তুমি সারা মানবজাতিকে হত্যা করছো। কেমন করে তারা এত বড় দায়িত্ব ঘাড়ে নেয়। কে তোমাদের এসব বুঝিয়েছে। যারা বুঝিয়েছে তারা নিশ্চিন্তে আছে। আর তুমি, যে কিনা রিমান্ডে আছো, তোমার মা, ভাই, বাবা রিমান্ডে।

এ সময় তিনি পবিত্র কোরআনের আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, তুমি যদি একটা মানুষকে হত্যা করো তবে সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করলে। কোরআন শরিফে আছে। যারা তোমাকে বুঝাচ্ছে তারা বিভ্রান্ত করছে। তোমরা একটা মানবজাতিকে যদি বাঁচাও তারা সমগ্র মানবজাতিকে বাঁচিয়েছো। যারা আমাকে এখান থেকে তুলে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। তারা সমগ্র মানবজাতিকে বাঁচিয়েছে। আমি তোমাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি সিএমএইচ এর চিকিৎসকের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। যারা বিভ্রান্তির পথে রয়েছো তারা আসো আমরা সামনা সামনি কথা বলবো। তোমাদের বিভ্রান্তি দূর করা প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানে বিমানবন্দরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ এবং জাফর ইকবালের স্ত্রী ড. ইয়াসমিন হক বক্তব্য রাখেন।