সাইবার অ্যাটাক মোকাবেলায় একেবারেই অপ্রস্তুত ২৮ শতাংশ ব্যাংক

957

বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সেমিনারে উপস্থাপিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বড় সাইবার অ্যাটাকের মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেই ২৮ শতাংশ ব্যাংকের। আর আংশিক প্রস্তুতি আছে ৩৪ শতাংশ ব্যাংকের। যেকোন ধরণের সাইবার অ্যাটাক মোকাবেলায় প্রস্তুত ৩৮ শতাংশ ব্যাংক।

রোববার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘আইটি সিকিউরিটি অব ব্যাংকস ইন বাংলাদেশ: থ্রেটস অ্যান্ড প্রিপিয়ার্ডনেস’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫০টি জালিয়াতির ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এটিএম কার্ডে জালিয়াতির ঘটনা বেশি।  প্রায় ৪৩ শতাংশ এটিএম কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে ঘটেছে। এর পরেই রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং । প্রায় ২৫ শতাংশ ঘটনা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঘটেছে। প্রায় ১৫ শতাংশ এসিপিএস ও ইএফটির মাধ্যমে জালিয়াতি ঘটছে ব্যাংকিং খাতে। ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১২ শতাংশ, ব্যাংকিং অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারে ৩ শতাংশ, সুইফট এবং অন্যান্য মাধ্যম দিয়ে ঘটছে ২ শতাংশ।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান আলম। গবেষণা দলে ছিলেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. শিহাব উদ্দিন খান, বিআইবিএমের সহকারি- অধ্যাপক কানিজ রাব্বী, বিআইবিএমের প্রভাষক মো. ফয়সাল হাসান, ব্র্যাক ব্যাংকের হেড অব টেকনোলজি শ্যামল বি দাশ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (এফভিপি) মো. সাইফুল ইসলাম।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর মো. আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান। এছাড়া অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিআইবিএমের মুজাফফর আহমেদ চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মাহবুব-উল- আলম, কমার্সিয়াল ব্যাংক অব সিলন পিএলসি’র কান্ট্রি ম্যানেজার ভরুনা প্রিয়াশান্ত কলামুনা, মধুমতি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সফিউল্লাহ আজম, সাউথ ইস্ট ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম   মঈনুদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক দেবদুলাল রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ড. মোসাদ্দেক হোসেন কামাল, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক মো. ইয়াছিন আলী প্রমুখ।

বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন এবং পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী। তিনি সেমিনারের বিষয়টির ওপর সূচনা বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর মো. আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, “দিন দিন বিশ্বব্যাপী আইটি ঝুঁকি বাড়ছে। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতও এর বাইরে নেই। এ খাতের ওপর যেসব আক্রমণ হচ্ছে তা জটিল। বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে আলাদা গাইড লাইন তৈরি করে দিয়েছে। এগুলো সঠিকভাবে পালন করলে ঝুঁকি কমে আসবে।”

বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, “আইটি খাতে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকারদের মানসিকতার পরিবর্তন করা দরকার। কারণ এই খাতটি অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মাহবুব-উল- আলম বলেন,  “হ্যাকিংয়ের ঘটনা চলতে থাকবে তবে আমাদের মোকাবেলার প্রস্তুতি কতটুকু নিলাম তা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে আইটি জ্ঞান স্পষ্ট থাকা জরুরি।”

কমার্সিয়াল ব্যাংক অব সিলন পিএলসি’র কান্ট্রি ম্যানেজার ভরুনা প্রিয়াশান্ত কলামুনা বলেন, “হ্যাকাররা সব সময় সাইবার অ্যাটাকের জন্য প্রস্তুত। ব্যাংকিং খাত এ ঝুঁকির বাইরে নেই। ব্যাংকের সুবিধার্থে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার অপেক্ষায় না থেকে নিজেদেরই উদ্যোগি হয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।”

মধুমতি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সফিউল্লাহ আজম বলেন, “ব্যাংকিং খাত  এখনো আন্তর্জাতিক হ্যাকারদের নজরে আসেনি। তবে অর্থনীতি বড় হলে হ্যাকিং বেড়ে যাবে। এজন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ড. মোসাদ্দেক হোসেন কামাল বলেন, “ব্যাংক খাতে কর্মী নিয়োগের সময় আইটিতে জ্ঞান আছে কিনা তা যাচাই করতে হবে।  ব্যাংক কর্মীদের আইটি খাতে গভীর জ্ঞান থাকা জরুরি। কারণ প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান না থকলে কার্যক্রম পরিচালনা সমস্যা সৃষ্টি হয়।”

পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, “আইটি খাতে ব্যাংকগুলো বাজেট বাড়াতে আগ্রহ দেখায় না। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে বুঝিয়ে আইটি খাতে বাজেট বাড়াতে হবে। এতে ব্যাংকের নিরাপত্তা জোরদার হবে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক মো. ইয়াছিন আলি বলেন, “কিছু কিছু ব্যাংক ভেন্ডর থেকে সফটওয়্যার নিচ্ছে। এসব ব্যাংকের  হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি বেড়েছে। এখনই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে না পারলে ক্ষতিগ্রস্থ হবে ব্যাংকিং খাত।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক দেব দুলাল রায় বলেন, “আইটি প্রডাক্ট কেনার আগে তার কোয়ালিটি ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। অহেতুক বড় বাজেট করে আইটি প্রডাক্ট কেনার কোন মানে নেই।”