সবজির দাম দ্বিগুণ

1174

এখন রিপোর্ট।।

শুরু হয়েছে পবিত্র মাহে রমজান। রমজানের প্রধান অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ ইফতার। দেশের সব শ্রেণি-পেশার মুসলমান ইফতারে বাহারি খাবারের আয়োজন করেন।

ইফতারকে সামনে রেখে সাধ্য অনুযায়ী রোজাদারা ছুটছেন বাজারে। তবে বাজারে গিয়েই পণ্যের অগ্নিমূল্য দেখে আঁতকে ওঠার মতো অবস্থা ক্রেতার।

গত সোমবার (০৬ জুন) সরেজমিনে রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে জানা যায়, ইফতার আয়োজনে প্রয়োজনীয় সবজি যেমন- বেগুন, গাজর, শসা, ধনেপাতা, কাঁচামরিচ ও লেবু গত দুদিন আগের থেকে প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর খুচরা বাজার মালিবাগ, শান্তিনগর, মুগদা ও পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজার ঘুরে জানা যায়, পাইকারি বাজারের থেকে প্রায় দ্বিগুণ দামে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য।

সবজি ব্যবসায় মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের কারণেই রোজা শুরু হতে না হতেই বেগুন, কাঁচামরিচ, ধনেপাতা, লেবু, গাজর ও শসার দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে দাবি খুচরা বিক্রেতাদের।

কারওয়ান বাজারে পাইকারি হিসেবে বেগুনের (গোল সাদা) কেজি ৩০ টাকা, লম্বা বেগুন ৪৫ টাকা ও গোল লাল বেগুন ৪০ টাকায় কিনছেন খুচরা বিক্রেতারা।

তবে খুচরা বাজারে বেগুনের (গোল সাদা) কেজি ৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ১০০ টাকা ও গোল লাল বেগুন ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া পাইকারি হিসেবে ২০ টাকা কেজিতে কেনা গাজর ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। লেবুর (কাগজি) ডজন ১২ থেকে ১৫ টাকা পাইকারি বাজারে বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে লেবুর হালি ২০ থেকে ২৫ টাকা।

পাইকারি ২৫ টাকা কেজিতে কেনা কাঁচামরিচ খুচরা বাজারে ৮০ টাকা কেজি। ১০০ টাকা কেজিতে কেনা ধনেপাতা ২০০ টাকা কেজি। ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজিতে কেনা শসা ৬০ টাকা। ২৫ টাকা কেজিতে কেনা টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করছেন রাজধানীর খুচরা বিক্রেতারা।

চলতি সপ্তাহের শুক্রবার (০৩ জুন) এসব সবজি প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি হয়েছে। সেসময় খুচরা বাজারে প্রতিকেজি শসা ২৫ থেকে ৩০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, বেগুন ৩০ থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ২০ থেকে ২৫ টাকা, কাঁচামরিচ ৬০ টাকা এবং ধনেপাতা ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।

এসব সবজির দাম এতো বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা গোলাম সবুর বাংলানিউজকে বলেন, বেগুন, শসা, গাজর, ধনেপাতা ও লেবুর আমদানি কম। এ জন্য বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।

এ বিষয়ে মালিবাগ বাজারের কাঁচামাল সরবরাহ করা ভ্যানচালক মো. টোকান বলেন, প্রতি রাতে এসব সবজি নিয়ে ৪০ থেকে ৫০টি ট্রাক আসে। কিন্তু রোজার শুরুর আগের রাতে বেগুনের একটিও ট্রাক আসেনি। আর অন্য সব পণ্যের ট্রাকও এসেছে খুব কম।

তিনি বলেন, সবজি ব্যবসায় মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা এসব সবজির সরবরাহ বন্ধ রেখেছে বাজারের দাম বাড়ানোর জন্য।

কারওয়ান বাজারের অপর পাইকারি বিক্রেতা মনোয়ার জানান, মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের কারণে কৃষক ও ক্রেতারা সমস্যায় পড়েন। আর মাঝখান থেকে আমরা অসাধু ব্যবসায়ী হয়ে যাই।

মালিবাগ কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা রমজান বলেন, পাইকারি বাজার থেকে মাল কিনে আনলে অনেক সবজি পঁচা থাকে। তারপর মাল পরিবহন খরচ থাকে। এরপর চাঁদা দিতে হয় নানা জায়গায়। সবকিছু মিলিয়ে আমরা কেজিপ্রতি মাত্র ১০ টাকা লাভ করি। কিন্তু ক্রেতারা তা বোঝে না, গালাগালি করেন।

পরিবহন খরচের বিষয়ে ভ্যান চালক মো. টোকন বলেন, রাত ২টার দিকে মাল আনতে গিয়ে সকাল ৬টার দিকে মাল নিয়ে মালিবাগ আসলে প্রতিভ্যান খরচ ৪০০ টাকা। এক ভ্যানে ১০ মণ সবজি আনা যায়।

এদিকে, রাজধানীর খুচরা বাজারে অন্যসব পণ্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। শুধু ইফতার আয়োজনের সবজি গাজর, শসা, ধনেপাতা, কাঁচামরিচ, বেগুন ও লেবুর দাম দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।

মালিবাগ বাজারে সবজি কিনতে আসা মো. আতাউর নামের এক ক্রেতা বলেন, রমজানের নাম শুনলেই কিছু কিছু পণ্যের দাম এমনি বেড়ে যায়, যা দেশের ট্রেডিশন হয়ে গেছে। অবশ্য এই বিষয় নিয়ে আমরা কেউ প্রতিবাদ না করায় বিক্রেতারা সাহস পেয়ে গেছেন। আর সরকারের পক্ষে যারা এ বিষয় নিয়ন্ত্রণ করবেন তারা তো অন্য জগতের মানুষ।

অপরদিকে, ইফতারের আরেক অন্যতম উপাদান শরবত। শরবতের মধ্যে রয়েছে ইসুফগুলের শরবত, তোকমা, লেবুর শরবত, গুড়ের শরবত, চিড়ার শরবত।
এসব পণ্যের দামও কেজিপ্রতি ১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।

৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হওয়া ইসুফগুল বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকা কেজি। আখের গুড় ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। তোকমা ৩০০ টাকা কেজি। চিড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এখন/এসএস