শহীদ মিনারে সুবীর নন্দীর কফিনে শেষ শ্রদ্ধা

কফিনের ঢাকনা খুলতেই দেখা গেল সেই চিরচেনা মুখ।

934

ঢাকা: প্রিয় মানুষ সুবীর নন্দীর শেষ যাত্রায় তাকে ফুলের শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলে এসেছেন অগণিত মানুষ। তাঁদের অনেকের হাতেই শেষ শ্রদ্ধা ফুল। কফিনের ঢাকনা খুলতেই দেখা গেল সেই চিরচেনা মুখ। বছরের পর বছর যে মুখটি বাংলা সংগীতের অনুরাগীদের চেনা। যে মুখে সদা হাসি লেগে থাকত। নিথর সারা শরীর ঢাকা। বুকের ওপরে গাঁদা ফুল। অত্যন্ত প্রশান্ত মুখ। কোনো কষ্টের লেশমাত্র নেই তাতে।

বুধবার (৮ মে) বেলা ১১টার দিকে তার মরদেহ শহীদ মিনারে নেওয়া হয়। সেখানে সুবীর নন্দীর প্রতি শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ।
বেলা সোয়া ১১টার দিকে সুবীর নন্দীর প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী রেজাউল করিম ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। এরপর শ্রদ্ধা জানান গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, সংগীতশিল্পী রফিকুল আলম, ফকির আলমগীর, শুভ্রদেব, এসডি রুবেল, সাব্বির, মুহিন, এসডি রুবেল, মেহেরাব, কিশোর, পুলক, চিত্রনায়িকা নূতন, নজরুলসংগীতশিল্পী খায়রুল আলম শাকিল, রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাসহ সর্বস্তরের মানুষ।

এর আগে সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দীর মরদেহ সিঙ্গাপুর থেকে বুধবার সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছায়। সেখান থেকে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় গ্রিন রোডের বাসায়। শহীদ মিনার থেকে বেলা ১২টার দিকে সুবীর নন্দীর মরদেহ নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে বিএফডিসিতে। এরপর নেওয়া হবে চ্যানেল আই-এ। রাজধানীর সবুজবাগের বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশানে আজ তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।

একুশে পদকপ্রাপ্ত এই সংগীতশিল্পী মঙ্গলবার (৭ মে) ভোর সাড়ে চারটার দিকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে মারা যান।
টানা ১৬ দিন রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) লাইফ সাপোর্টে ছিলেন সুবীর নন্দী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৩০ এপ্রিল ঢাকার সিএমএইচ থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় একুশে পদকপ্রাপ্ত এই সংগীতশিল্পীকে। সেখানে দফায় দফায় হার্ট অ্যাটাক হয় তার।
গত ১৪ এপ্রিল রাতে সিলেট থেকে ঢাকায় ফেরার পথে ট্রেনে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন সুবীর নন্দী। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ও কন্যা। রাত ১১টার দিকে তাকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) নেওয়া হয়। হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে হার্ট অ্যাটাক করেন এই নন্দিত শিল্পী। এরপর তাকে দ্রুত লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ও হার্টের অসুখে ভুগছিলেন সুবীর নন্দী।
১৯৫৩ সালের ১৯ নভেম্বর এই শিল্পী জন্মগ্রহণ করেন হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানায় নন্দীপাড়ার এক কায়স্থ সম্ভ্রান্ত সংগীত পরিবারে।
১৯৬৩ সালে তৃতীয় শ্রেণী থেকেই গান গাওয়া শুরু করেন ছোট্ট সুবীর। এরপর ১৯৬৭ সালে তিনি সিলেট বেতারে গান করেন। তার গানের ওস্তাদ ছিলেন গুরু বাবর আলী খান। লোকগানে ছিলেন বিদিত লাল দাশ।
সুবীর নন্দী গানের জগতে আসেন ১৯৭০ সালে ঢাকা রেডিওতে প্রথম রেকর্ডিংয়ের মধ্যদিয়ে। প্রথম গান ‘যদি কেউ ধূপ জ্বেলে দেয়’। গানটি লিখেছেন মোহাম্মদ মুজাক্কের এবং সুরারোপ করেন ওস্তাদ মীর কাসেম।

৪০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে গেয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি গান। বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রে গেয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। চলচ্চিত্রে প্রথম গান করেন ১৯৭৬ সালে আব্দুস সামাদ পরিচালিত ‘সূর্যগ্রহণ’ চলচ্চিত্রে। ১৯৮১ সালে তার একক অ্যালবাম ‘সুবীর নন্দীর গান’ ডিসকো রেকর্ডিংয়ের ব্যানারে বাজারে আসে। তিনি গানের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ব্যাংকেও কর্মরত ছিলেন।
সুবীর নন্দী জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন চারবার। সংগীতে অবদানের জন্য এ বছর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক পান তিনি।
তার গাওয়া উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে- আমার এ দুটি চোখ, বন্ধু হতে চেয়ে, আমি বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছি, চাঁদের কলঙ্ক আছে, দিন যায় কথা থাকে, একটা ছিল সোনার কন্যা, হাজার মনের কাছে, কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো, পাহাড়ের কান্না, বন্ধু হতে চেয়ে তোমার প্রভৃতি।