লাগামহীন পেঁয়াজের বাজার

978

ডেস্ক রিপোর্টঃ
আড়তদাররা আমদানিকারকদের দোষারোপ আর আমদানিকারকদের অদ্ভুত সব অজুহাতে গত দেড় মাস ধরে দেশের পেঁয়াজের বাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণহীন। আর তাদের রেষারেষিতে নিত্যপণ্যটি কিনতে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ ক্রেতাদের। এই অবস্থায় তীব্র ক্ষোভে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) জাতীয় সংসদেও পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের ক্রসফায়ার দেওয়ার আহ্বান জানান সংসদ সদস্যরা।

ইতোমধ্যেই পেঁয়াজের দাম ছাড়িয়েছে দুই শতকের ঘর! সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দাম আরও বাড়তে পারে। নিত্যপণ্যটির দর নিয়ন্ত্রণে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে দফায় দফায় অভিযান, বড় শিল্প গ্রুপের পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা, বিকল্প আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানিসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও দাম তো কমছেই না; উল্টো লাফিয়ে লাফিয়ে ছুঁয়েছে দুই শতকের ঘর। বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) এক দিনেই এ পণ্যের দাম বেড়েছে ৫০-৬০ টাকা। বাজারভেদে কোনো কোনো জায়গায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা করেও।

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর বেশ কয়েকটা বাজার ঘুরে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকার বেশি দেখা গেছে। অসহায় ক্রেতারা চড়া দামেই পেঁয়াজ কিনে ঘরে ফিরছেন; তবে তা চাহিদার তুলনায় যৎসামান্যই।

ক্রেতাদের অভিযোগ, সকালে এক দাম আর বিকালে আরেক দাম। দামের সঙ্গে সকাল-বিকালের ফারাক যেন আকাশ-পাতাল!

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনো পেঁয়াজের এমন উচ্চমূল্য দেখেনি মানুষ। সংসদে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য তোফায়েল আহমেদ সংসদে দেওয়া বক্তব্যে পেঁয়াজের দর নিয়ে বলেছেন, পেঁয়াজের এমন দাম কোনোদিন কল্পনাও করেননি তিনি।

গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, পেঁয়াজের দাম অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনো পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা ছাড়ায়নি। নিকট অতীতে দুই বছর আগে ২০১৭ সালে একবার পেঁয়াজের দাম ১৫০ হয়েছিল বলে তথ্য পাওয়া যায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের ফলে বাজারে সরবরাহ কম। আর নিত্য চাহিদার তালিকার এ পণ্যটি খুচরা বাজারে অন্য সময়ের চেয়ে কিছু কম হলেও খুব বেশি ঘাটতি নেয়।

তবে ভোক্তাদের মতোই অনেকটা নিরুপায় খুচরা ব্যবসায়ীরাও। তারা বলছেন, পাইকার আর আড়তেই দাম নিয়ন্ত্রিত হয়। তারা খুচরা পর্যায়ে সামান্য লাভে বিক্রি করেন।

আর আড়তদাররা বলছেন, এখন দেশি পেঁয়াজের উৎপাদন কম। আমাদের দেশি পেঁয়াজের মৌসুম গ্রীষ্ম আর শীত। তার উপর ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে দেশি পেঁয়াজের ক্ষতি হয়েছে। অনেক জায়গায় পানিতে পেঁয়াজ পঁচে গেছে। আর সরবরাহ কম থাকলে দাম তো বাড়বেই।

এ দিকে, ভোগ্যপণ্যের দেশের প্রধান বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা করে। বন্দরনগরীর বিভিন্ন বাজারে খুচরা দোকানে পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকা থেকে ১৯০ টাকায়। আর নগরের বাইরের এলাকার বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০০ টাকায় পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। খাতুনগঞ্জের কোনো আড়তে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) ভারতের কোনো পেঁয়াজ দেখা যায়নি। তবে মিয়ানমারের ভালোমানের পেঁয়াজ ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা এবং মাঝারি মানের ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। অন্য দিকে মিসর, চীন ও পাকিস্তান থেকে সদ্য আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

প্রসঙ্গত, অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর যুক্তি দিয়ে গত সেপ্টেম্বরে হঠাৎই পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয় প্রতিবেশী দেশ ভারত। এরপরই দেশের বাজারে ক্রমেই পেঁয়াজের দাম অস্থিতিশীল হতে শুরু করে। সে সময় দেশের বাজারে খুচরা পর্যায়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দাম ছিল প্রতি কেজি পেঁয়াজের। দফায় দফায় বেড়ে সেই পেঁয়াজ শতক পার হলে টনক নড়ে প্রশাসনের।