রেকর্ড গড়া জয় ‍দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু বাংলাদেশের

1112

 

চলতি বিশ্বকাপে উপমহাদেশের দলগুলো এখন পর্যন্ত ব্যাটিংয়ে ভালো করতে পারেনি। বাউন্সি উইকেটে বাংলাদেশ কেমন করবে, সেটি নিয়েও টাইগার ভক্ত-সমর্থকদের মনে ছিল উদ্বেগ।

তবে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুর্দান্ত ব্যাটিং এবং বোলিং করে ২১ রানের রাজকীয় জয় তুলে নিয়েছে টিম বাংলাদেশ।

সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীমের জোড়া হাফসেঞ্চুরি আর শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ঝড়ো ব্যাটে ভর করে ৬ উইকেটে ৩৩০ রানের হিমালয়সম সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছে টাইগাররা। এটাই এখন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। শুরুটা করে দিয়েছিলেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল আর সৌম্য সরকার। প্রোটিয়া বোলিং লাইনআপকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলেন তারা।

সাতের ওপর রান তুলে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন এই যুগল। শেষ পর্যন্ত নবম ওভারে বোলিং পরিবর্তন করেন প্রোটিয়া অধিনায়ক ফ্যাফ ডু প্লেসিস, বল তুলে দেন আন্দেলু ফেহলুখায়োর হাতে।

ফেহলুখায়ো অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দেন প্রথম ওভারেই। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে তামিমকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান এই পেসার। ২৯ বলে ২ বাউন্ডারিতে ১৪ রান করে আউট হন তামিম। তামিম-সৌম্যর উদ্বোধনী জুটিটি ছিল ৬০ রানের। এ নিয়ে টানা পঞ্চম ম্যাচে ওপেনিংয়ে পঞ্চাশোর্ধ্ব জুটি গড়ে বাংলাদেশ।

আজকের ঝড়ো ওপেনিং জুটিতে সৌম্যর অবদানই বেশি। ৬০ রানের মধ্যে ৪৬ রানই এসেছে তার ব্যাট থেকে। শেষ পর্যন্ত বিধ্বংসী সৌম্যকেও বাউন্সারে পরাস্ত করে প্রোটিয়ারা। ক্রিস মরিসের বলটি গ্লাভসের কানায় লেগে চলে যায় উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি ককের হাতে। ৩০ বলে ৯ বাউন্ডারিতে ৪২ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন সৌম্য।

৭৫ রানে ২ উইকেট হারানোর পর দলকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দিয়েছেন সাকিব-মুশফিক। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৪১ বলে তারা গড়েন ১৪২ রানের দুর্দান্ত এক জুটি। বিশ্বকাপের ইতিহাসে যেটি বাংলাদেশের সেরা জুটির রেকর্ড।

দলীয় ২১৭ রানের মাথায় সাকিবকে বোল্ড করেন ইমরান তাহির। ৮৪ বলে ৮ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় ৭৫ রান করেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। বড় এই জুটি ভাঙার পর ২১ বলে ২১ রানের ঝড়ো এক ইনিংস খেলে তাহিরেরই বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন মোহাম্মদ মিঠুন।

এরপর কাটায় কাটায় দলের ২৫০ রান হওয়ার পর মুশফিকও আউট হন। ৮০ বলে ৮ বাউন্ডারিতে টাইগার উইকেটরক্ষক করেন ৭৮ রান। সেখান থেকে পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ আর মোসাদ্দেক হোসেনের ৪১ বলে ৬৬ রানের ঝড়ো জুটি।

৪৯তম ওভারের শেষ বলে ২০ বলে ২৬ রান করে আউট হন মোসাদ্দেক। তবে পরের সময়টায় ব্যাট হাতে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। ৩৩ বলে ৩ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় ৪৬ রানে অপরাজিত থেকেই মাঠ ছাড়েন তিনি।

পাহাড় সমান স্কোর তাড়া করতে নেমে শুরুতেই টাইগার বোলারদের তোপের মুখে পড়তে থাকেন আফ্রিকান ব্যাটসম্যানরা। ওভারের শুরুতেই বল করতে আসেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। প্রথম ওভারে ৪ রান দেন মুস্তাফিজ।

তৃতীয় ওভারে এসে আবারও প্রোটিয়াদের চাপে রাখেন ফিজ। তৃতীয় ওভারে এসে ২ রান দিয়ে ওভার শেষ করে মুস্তাফিজ। এর কিছু পরেই মেহেদী হাসান মিরাজের বলে রান নিতে গিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কারণে রান আউটের ফাঁদে পরেন কুইন্টন ডি কক। মুশফিকের থ্রোতে সাজঘরে ফিরে কক। প্রোটিয়া এই ওপেনার আউট হওয়ার আগে ৩২ বলে করেন ২৩ রান।

বিপজ্জনক হয়ে ওঠা ৫৩ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি ভেঙেছেন সাকিব আল হাসান। বাঁহাতি স্পিনার দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেছেন এইডেন মার্করামকে। ৫৬ বলে ৪ চারে ৪৫ রান করেন মার্করাম।

আক্রমণে ফিরেই বিপজ্জনক হয়ে ওঠা ফাফ ডু প্লেসিকে ফিরিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। অফ স্পিনারকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছক্কায় উড়াতে চেয়েছিলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। বলের লাইন মিস করে হন বোল্ড। ৫৩ বলে ৫ চার ও এক ছক্কায় ৬২ রান করেন ডু প্লেসি। তার বিদায়ে ভাঙে ৪৫ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি।

দুবার সুযোগ দিয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন। তৃতীয়বার আর রক্ষা হয়নি ডেভিড মিলারের। তাকে ফিরিয়ে মূল্যবান উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি পেসারকে ফ্লিক করতে গিয়ে লিডিং এজ হন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে দারুণ ক্যাচ নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৪৩ বলে ২ চারে ৩৮ রান করেন মিলার।

বিপজ্জনক হয়ে উঠছিলেন ফন ডার ডুসেন। তাকে ফিরিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি এনেছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ডানহাতি পেসারের ফুল লেংথ বলে শট খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড হন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ৩৮ বলে ২ চার ও এক ছক্কায় ডুসেন করেন ৪১ রান।

এর পরের ওভারেই ফের আঘত হানেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। তার ফুলটসে কাভারে সাকিব আল হাসানের দারুণ ক্যাচে ফিরেছেন আন্দিলে ফিকোয়াও।

এরপর ক্রিস মরিসকে ফিরিয়ে ইনিংসে নিজের দ্বিতীয় উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি পেসারের ফুলটস ছক্কায় উড়াতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে সৌম্য সরকারের হাতে ধরা পড়েন মরিস। ১০ বলে একটি চারে মরিস করেন ১০ রান।

এরপরেই ৪৩ রান করে ব্যাট করতে থাকা আফ্রিকার শেষ ব্যাটসম্যান ডুমিনিকে ইনিংসের ৪৮তম ওভারে ফিরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের পথে নিয়ে এসেছেন মুস্তাফিজ।

এরপর অনেক চেষ্টা। তবে শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেট হারিয়ে ৩০৯ রানে দক্ষিণ আফ্রিকাকে থামিয়ে দিয়ে ২১ রানের রাজকীয় জয় ছিনিয়ে আনেন টাইগাররা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩৩০/৬(তামিম ১৬, সৌম্য ৪২, সাকিব ৭৫, মুশফিক ৭৮, মিঠুন ২১, মাহমুদউল্লাহ ৪৬*, মোসাদ্দেক ২৬, মিরাজ ৫*; এনগিদি ৪-০-৩৪-০, রাবাদা ১০-০-৫৭-০, ফেলুকোয়ায়ো ১০-১-৫২-২, মরিস ১০-০-৭৩-২, মারক্রাম ৫-০-৩৮-০, তাহির ১০-০-৫৭-২, দুমিনি ১-০-১০-০)।

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ৩০৯/৮ (ডি কক ২৩, মারক্রাম ৪৫, দু প্লেসি ৬২, মিলার ৩৮, ফন ডার ডাসেন ৪১, দুমিনি ৪৫, ফেলুকোয়ায়ো ৮, মরিস ১০, রাবাদা ; মুস্তাফিজ ১০-০-৬৭-৩, মিরাজ ১০-০-৪৪-১, সাইফ ৮-১-৫৭-২, সাকিব ১০-০-৫০-১, মাশরাফি ৬-০-৪৯-০, মোসাদ্দেক ৬-০-৩৮-০)।

ফল: বাংলাদেশ ২১ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: সাকিব আল হাসান